বিধুর লবণজলে ছলেবলেকৌশলে
-
-
|

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ
হৃদয়
ছায়া থেকে আরো দূরবর্তী কোনো লৌকিকতায়
একটি সদাচঞ্চল নিদ্রাগান তুমি গেয়ে শোনাও
সান্নিধ্য থেকে যে শীতকাল
সংশয় চুরি করেছে
তার মুখপানে চেয়ে
একটি আদিবাসী প্রণয়ের কথা মনে আসে
স্মৃতিতে সমন্বিত সকল পাঠ্যবই
ধূসর ভূগোলের মধ্য দিয়ে হেঁটে চলে গেল
তাকে আর থামাতে চেয়ো না, প্রিয়
তার পদতলে শুয়ে আছে
একটি করুণানির্ভর মহাকাল!
ছায়া
এক একটা সময়
ফেলে আসা বয়সের ভেতর
একরাশ হিন্দি গান বেজে ওঠে।
তখন ঝনঝন করে ওঠে সমস্ত হৃদয়।
হৃদয়ের এমন সান্ধ্যকাল
রাতকে গড়িয়ে দেয় অনুভূতির ঢালুপথে।
রাতের গড়িয়ে যাওয়া তখন সহজে বোঝা যায় না।
বোঝা যায় শুধু,
মুখে হাত রেখে মুহূর্তের দিকে সহজে তাকিয়ে আছে কেউ।
বোঝা যায় শুধু তার ভঙ্গিমা।
তার অভিব্যক্তিগুলো চড়ুইপাখির মতো
আচমকা বারান্দায় ঢুকে পড়ে।
সেই শব্দে পড়ার টেবিল ছেড়ে
বারান্দায় গিয়ে শুনি,
রাত হয়ে গেছে; তাই তাকে বাড়ি ফিরতে হবে।
বাড়ি ফেরার পথে, কে কার ছায়া মাড়ায়; কেউ কি তা জানে কখনো?
পিছু নিয়ে দেখেছি আমিও;
জনপ্রিয় কষ্টগুলো
অনর্গল হিন্দি গান হয়ে বাজতে থাকে তখনও!
তার বাড়ি ফেরা
কী এক ব্যথার মতো বাজতে থাকে তখনও!
পুংবেদনার অধ্যাস
তবে চলে যাও
দ্বিধাগ্রস্ত একলা রাত
পরিপার্শ্ব কি বিপুল
অপ্রণয়
এনেছে সকাশে
তাকে তুমি চিনে নাও
অকাল বধির
চিনে নাই কোনো ছিন্নতা
অধির অপ্রাপ্তিময়তায়
নিগূঢ় থেকেছে
বীতংসে প্রেমহংস
ধরা পড়ে গেছে!
তবু মুক্তির
উল্লাসে
যতটুকু
রক্ত গড়িয়ে
যে পথ
এঁকেছে
তার চেয়েও নৃশংস
জানে নাই কেউ
এমনও ভালবাসাকে
প্রেম অপ্রেমের
বরাভয়ে
বেঁধে রেখে গেছে
আর
শুধু অপ্রতুল
হৃদয়
নিয়ে
কেউ
দূরে চলে গেছে
যেনবা
চলে যেতে দিতে হয়
এমনি লেখা আছে
সমস্ত সময়!
তাই ক্ষয়
ক্ষত
যত
তত
কি
প্রণয় ?
আমরা
জেনে গেছি
এভাবে
চলে যেতে দিতে হয়
যে
যায়
যেতে
চলে
অপ্রস্তুত ব্যথায়
কথা বলে
অযাচিত শব্দনিচয়
তোরঙ্গ ভেঙে
ঢুকে পড়ে
অন্তরে
তুমুল তরাশে
সুচারু চতুরঙ্গিনী
নীরব বিদ্রূপ রেখে
প্রত্যাশার পাথরে
গড়েছে
নিথর হৃদয়!
এই হৃদয়ের কথাই তো
বলেছি আগে
সহস্রবার
ভণিতার ভাঁজে ভাঁজে
যৎপরোনাস্তি
যন্ত্রণার
সঙ্গীত বেজেছে
বিষাদিত
আর নীলাভ চিত্রিত
দিনের
একাকী নির্যাসে
অদূরের কান্নার
বাতাসে
লিখে রাখা আছে
পুংবেদনার
এক শিল্পিত অধ্যাস।
শুধু আলাপের স্মৃতি
আরো কত কাল ভালোবেসে গেলে একা একা
দলিত স্বপ্নে গোলাপ নয়; শুধু আলাপের
স্মৃতি পড়ে রবে, বিরহ বাগানে কিম্বা কাব্যগাঁথায়
একটা মৃত দীর্ঘশ্বাস প্রহর গুনে যাবে
ডাকবে না আর; হৃদয়ের কাছে হৃদয়ের হাহাকার
একমাত্র বিনিময়যোগ্য প্রীতি উপহার ভেবে
লিখে রেখে যাবে সহস্র বিষাদ।
করপুটে কোনো চিরকূট, কোনো বিকালবেলার নদী,
কোনো প্রেমপ্রেম আদান প্রদান নিদানের গল্প হবে না,
নির্জনে বসে নিসর্গের ছাই উড়িয়ে দিবে শূন্যতার প্রশস্তি
তারই গুণগান শুনে
অশ্রুহীন সমস্ত একঘেয়ে প্রচারণায় শুনেছি
শুধু একা একা ভালোবেসে যাওয়াকে
কেউ ভালোবাসা বলে মেনে নেয় নাই;
চেয়েছে যুগল, সম্পর্কের আগল
একটা নাম দিয়ে
তাতেই পুরে দিয়েছে সমস্ত জীবন।
আলাপের স্মৃতিকে কখনো কেউ ভালোবাসার গোলাপ দেয় নাই;
তাই স্মৃতিকাতরতায়
তোমাকেই ভালোবেসে
এই সন্ধ্যের বাতাসে
উড়িয়ে দিলাম যাবতীয় গোলাপের নাম
যে গোলাপের নাম গিয়েছি ভুলে
সেও তো প্রাক্তন প্রেম কোনো; সেও তো বিস্মৃত গোলাপ!
সখি আমিও কাঁদি
খামতি থাকে তো থাকুক তবু আজ তুমি অপ্রস্তুত
দুটি চোখ খোলা রেখো, যত সুর বাজিয়ে আসুক
প্রাণনাথ; মনে মনে শত রাগরাগিনী নিঃশব্দ পড়ে থাক।
অহেতু ফুল্লরায় যদিও বনমালী খালি খালি দুলাইবে না
কালকেতু, সেহেতু মন থিতু করে বসিয়া থেকে কী লাভ।
এমনি সয়লাব যখন আঁখি, বিধুর লবণজলে ছলেবলেকৌশলে
হৃদয় ভিজায়ে রাখি; তবু ভীতু পাখি
উড়ে যাবে নাকি— থাকি যদি এমনি চিন্তায় বিভোর
কুমুদিনীর বক্ষে অলক্ষ্যে ভালোবাসা কভু ফেলিবে কি নোঙ্গর।
অচেনা ডাগর দুটি চক্ষে
কেউ যদি ভুল ভুলাইয়ে দেয়
তক্কে তক্কে থেকো তুমি
নিভু রাতে কেহ বুঝিবার আগে
চঞ্চল সুর বাজিবে সমস্ত বিষণ্ণ সঙ্গীতে
তখন দেরি না হয় যেন মুখ ধুয়ে নিতে
বিষাদের বাহানায় জল করিবে টলমল প্লাবিত চারিধার
তাহারে পড়িবে মনে ক্ষণে ক্ষণে শুধু হাহাকার
কেউ জানিবে না তবু অশ্রু কাহার।
কেবল উর্বর করিবে তাহারে যাহারে গোপনে গোপনে
পাঠাও তুমি কান্নার অভিঘাত
তাহারে বলিও চুপিসারে অপ্রস্তুত প্রতি রাতে
বেদনায় সে যেন কভু নাহি মুদে আঁখি
ভালোবাসার খোলা চোখে বারংবার আমি যেন
তাহারে দেখিয়া শুধু কাঁদি—এই মোর প্রেমেরই অহংকার।