গবেষণা নয়, দেখা থেকে লেখা ‘বনের মানুষ মানুষের বন’

  • ডেস্ক রিপোর্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সুন্দরবনকে আমরা বৃহত্তম অখণ্ড ম্যানগ্রোভ বন হিসাবেই জানি। বিভিন্ন সময়ে এই বনকে নিয়ে গবেষণা কম হয়নি, প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যাও বিপুল। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, সুন্দরবনকে আমরা কতটা জানতে পেরেছি? বনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অংশীজন যে বনবাসী মানুষ; তাদের যাপিত জীবনের আখ্যান কতটা জানা হল আমাদের? বলা যায়, এ নিয়ে দরদ দিয়ে লেখা গ্রন্থের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল।

জীবনঘনিষ্ঠ লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম তাঁর ঐকান্তিক আগ্রহে সুন্দরবনের অধিবাসীদের নিবিড় সাহচর্যে থেকে তাদের জীবনের আখ্যান তুলে এনেছেন নিপুণভাবে। টুকরো টুকরো সেসব গল্প দিয়ে তিনি সাজিয়েছেন ‘বনের মানুষ মানুষের বন’। এবারের (২০২৫) অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত অনবদ্য গ্রন্থটিতে উৎকীর্ণ লেখায় পাঠক খোঁজে পাবেন ভিন্ন এক সুন্দরবনকে। বলা যায়, বনের সংগ্রামী মানুষকেই মূল উপজীব্য করেছেন লেখক। সহজ-সাবলীল লিপিকুশলতায় ভরিয়ে তোলা প্রতিটি অধ্যায়ে সুযোগ মিলবে সুন্দরবনকে নতুন করে জানার। লেখক নিজেই উল্লেখ করেছেন, ‘এ বইয়ের সব গদ্য দেখা থেকে লেখা। গবেষণা নয়, প্রতিবেদনও বলা চলে না।’

বিজ্ঞাপন

আলো ঝলমলে শহুর থেকে দূরের অনগ্রসর জনপদের সংগ্রামী মানুষদের জীবনের মর্মস্পর্শী গল্প অজানাই থেকে যায়। বদলে যাওয়া নাগরিক জীবনের কৃত্রিমতাকে পাশ ঠেলে ক’জনইবা  প্রান্তিক মানুষের খোঁজ নেন। আট বছর ধরে অত্যাশ্চার্য এই বনের নানা প্রান্তে ছুটে বেরিয়েছেন লেখক। কথা বলেছেন অগণিত অধিবাসীর সঙ্গে। সহজ-সরল বনজীবী মানুষদের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলেছেন, টুকে নিয়েছেন তাদের অভিব্যক্তি; জীবনের গল্প।

লেখক সেখানে খোঁজে পেয়েছেন সুকুমার বাউলিয়ার মত অসাধারণ এক শিক্ষককে। নিজের স্বার্থকে তুচ্ছ করে যিনি বনের অনগ্রসর শিশুদের জোর করে ধরে এনে পাঠশালায় শিক্ষা দেন, জীবনের ৪৩টি বছর একটি ভাল পাঠকক্ষ ছাড়াই যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান। অন্ধকার জনপদে আলোকবর্তিকা হয়ে ধরা দেওয়া এমন মহত্তম শিক্ষকের জীবনের গল্প বইটিতে স্থান পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

২০২০ সালের ২১ মে সুপার সাইক্লোন আম্ফান আঘাত হেনেছিল উপকুলে। প্রলয়ংকরী দূর্যোগ বনবাসী মানুষের জীবনে কি গভীর ছাপ ফেলে যায়, কিভাবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলের সাজানো সংসার-এমন অনেক অশ্রুসিক্ত বয়ানও এতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। আম্ফানে মা হারানো সুন্দরবনের দ্বীপগ্রাম ফকিরকোনার শিশু বাহাদুরের ভাগ্য বিড়ম্বনার গল্প যেমন স্থান পেয়েছে, তেমনি সুন্দরবনে শিকার করতে যাওয়া মানুষেরা কিভাবে নিজেই শিকারে পরিণত হয়, নোনাজলে মানুষদের জীবনসংগ্রামকে কিভাবে তস্করেরা আরও প্রকট করে তোলে এমন বিবরণও বাদ যায়নি এতে। বিশেষ করে সুন্দরবনের নারীরা জীবনে পদে পদে তৈরি হওয়া চ্যালেঞ্জ কিভাবে উতরে যান, তার অনুপুঙ্খ বিবরণ গ্রন্থটিকে আরও হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছে। কথা প্রকাশ প্রকাশিত বনের মানুষ মানুষের বন সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমামের ষষ্ঠ গ্রন্থ । গল্পগ্রন্থ মানুষের গল্প, বৈদিক পাখিন গান, রক্তমূলে বিচ্ছেদ, পা। যৌথভাবে সম্পাদিত প্রবন্ধের সংকলন চেতনার উত্তরাধিকার।

উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক গবেষণাপত্রের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ও পেশায় সাংবাদিক সাদিয়ার জন্ম ফরিদপুরে। সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ও যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত বাংলা সাহিত্য উৎসব বিশেষ সম্মাননা।