মোসাব্বির আহে আলীর গুচ্ছকবিতা
-
-
|

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ
বৃষ্টি ও ভূমিকম্প
শিয়রে শবনম হাসে, স্ক্রিনে এপিক্যালিপ্টো। ভেজে প্লটে কামরাঙা পাতা। এসবের মাঝে
একদিন, উঁচু করেছিলে জানালায়, তোমার ডান ভুরু। দেড় রুমের ফ্ল্যাটে তোমার আগুন
খোমা ছিল মহল্লার মাথাব্যথা। শেওলা-ধরা দেয়ালে আজ বৃষ্টিরেখা, বিভূতি’র ঠাকুরঝি স্নানে
করছে দেরি। নিচে নিকোলাই টানছে গোলাপি বিড়ি। আজ জানি, রিখটারে তুমি বেখেয়ালি,
কাপ সরে গেছে তার তলচিহ্ন হতে। অন্ধগলি সরাও উঠোন থেকে। বারবারা আসবে। অক্ষরের কুপি নিয়ে।
শিয়রে শবনম হাসে, দেয়ালে ম্যাডোনা।
সুমাইয়া, তোমার মনে নেই সেসব?
তোমরা কি কাঁঠালবাগানেই আছো?
কী যেন নাম এভিনিউর নাম? ফ্রি স্কুল স্ট্রিট!
গ্যাস্ট্রোলিভার হসপিটালের পিছে?
রোড থেকে যেখানে একটু ঢালু নেমে গেছে পথ
পাশে দাঁড়ানো সুবাস্তু চন্দ্রশীলা—
তোমার ঐ বান্ধবী—দ্বীপান্বিতা,
ঐ যে একটু বাল্কি বাট কিউট, মনে আছে?
শহীদ আনোয়ার পেরিয়ে
মুসলিম মডার্নের পকেট গেট হয়ে
গ্যারিশনের দিকে ছুটেছিলে—
পাকা তেঁতুলের মতো
লাল ফতুয়ায় কেমন উড়ছিল আমার অপরাহ্ণ!
নাদিম—আমি—সৌরভ পেছনের রিকশায়
সুমাইয়া, তোমার মনে নেই সেসব?
আম্মার শায়েরি শুনতেছিলাম
এশা অক্তে উডানে—পাডি বিছায় মায়ে
সামনে থুইয়া বাসনা ধানের খই
চাপকলের নিচে পানি চলে গড়ায়ে
হুনতাছি মায়ের শায়েরি নিশ্চয়ই
আব্বায় আহে ঢাকার থেইকা যহন
কুপির আগুন ঘরের কোনায় কাঁপে
আম্মা তারই কিছুই জানে না তহন
চান্দ ঢাইকা যায় মেঘের অভিশাপে
জিগার গাছের সবচে নিচা ডালডা
ধইরা ধইরা আব্বায় উডানে ঢোকে
আমরা দেহি আমগো টিনের চালডা
দেখতাছে সব শিশির ভরানো চোখে
থামায়া শায়েরি আম্মা—চুপ হয়া যায়
গর্ভ থেকা আব্বারে কই—আছিলা কোথায়?
হাওড়ের চিত্রাবলী
ধানগোছার থেকে নেমে গেছে জল
কাণ্ড ছেড়ে হাঁটু ভেঙে পড়ে আছে
আধখড়ের দুঃখ
ঘোলাটে হাওড়ের পাড়ে ফুটছে কাদা
দূরের মেড়াগাছ রোদগ্রস্ত;
চাষীর পায়ে তৈরি গত অগ্রহায়ণের এক গর্তে
গাঢ় শ্যাওলার নিচে তাপানুকূল সন্ধ্যায়
দুটো গুতোমের সুখ:
যাযাবর কুটিপানা লেগে যাচ্ছে বৈঠায়
দূরে বকের সারিতে গুজব;
এইসব বোরো-ধান ও হাওড়ে গোধূলিতে
মিশে রয় হাওয়ার মনস্তত্ত্ব—পানকৌড়ি আর
ভাঙা শামুকের বুক:
দূরের খড়ের চালের পাশে দৈত কলাপত্রের
কী নিবিড় মৃদু চুম্বন;
জেগে রয় সান্দ্র হাওয়ায় গ্রামীণ চাঁদ
তেড়ে আসে ধূসর গ্রানাইটের ভোর
তোমার ব্যক্তিগত টেবিলে
ভেজা ফ্লাইওভারের এই রাতে
একটু চোখ বাড়ালেই তোমার ব্যক্তিগত টেবিল
তে-তলা উঁচু ফ্লাইওভারের রেলিংয়ে
দাঁড়িয়ে আছি রাতের জিপসি এই—
কাঁধে বিস্তৃত তোমার ঘন কালো চুল
পাশে পেন্সিলে ফুটো ইরেজার;
বাইরে হর্ন দিয়ে চলে যায় সস্তা করোলা
অদ্ভুত আরশোলা তোমার পৃষ্ঠাজুড়ে হাঁটে
স্ট্রিটলাইটের নিচে আমি এক নগরখোদক—
ছুটন্ত বৃষ্টির ছাঁটে আধোবোধ—স্তব্ধ প্রেমিক;
বিগত জুনের স্মৃতি নিয়ে
তোমার ঘরে—তোমার ঘাড়ে তাকিয়ে আছি