হামজা চৌধুরি বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন তা নিশ্চিত হয়েছিল আগেই। তবে অপেক্ষা ছিল তার দেশে আসার। এর আগেও হামজা দেশে এসেছেন, কিন্তু এবারের আসার গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ বাংলাদেশের ফুটবলার হিসেবে এবারই প্রথম দেশের মাটিতে পা রাখলেন হামজা। তাই তার আসাকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই দেশের ফুটবলে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। চলুন জেনে কেন তাকে নিয়ে এমন প্রত্যাশা আর এই উন্মাদনা!
১৯৯৭ সালের ১ অক্টোবর ইংল্যান্ডে জন্ম হামজার। ফুটবলার হিসেবে বেড়ে উঠেছেন লেস্টারের একাডেমি থেকেই। ফুটবলার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন সেখানেই। ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলের হয়েও ৭ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন তিনি। এমনকি অনূর্ধ্ব-২১ ইউরো দলেও ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ২৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার।
লেস্টারের একাডেমি মাঠে বেড়ে উঠলেও পেশাদার ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন লিগ ওয়ান ক্লাব বার্টন আলবিয়নের হয়ে। এই ক্লাবে দুই মৌসুমে ২৬ ম্যাচ খেলেন হামজা। ২০১৭-১৮ মৌসুমে আলবিয়ন থেকে পুনরায় ফিরে আসেন লিস্টারে। ইংলিশ এফএ কাপে লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে লিস্টারের জার্সিতে অভিষেক হয় তার। লেস্টারের হয়ে হামজা খেলেছেন ৯১ ম্যাচ যেখানে গোল করেছেন ১টি। লেস্টার থেকে ওয়াটফোর্ডে ধারে খেলতে যান হামজা। বর্তমানে শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে খেলছেন তি।
ক্যারিয়ারে হামজার গোল সংখ্যা মাত্র একটি। তবে কেউ যদি এই পরিসংখ্যান দিয়ে মাঠের হামজাকে বিচার করে তাহলে বড্ড ভুল করে ফেলবে। প্রথমত তিনি কোনো গোলস্কোরার নন। দ্বিতীয়ত তার খেলার পজিশন গোল করার জন্য নয়। হামজা মূলত একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। তার কাজ দলের রক্ষণভাগে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় প্রবেশের আগেই তাকে বাধা দেওয়া। তবে কখনও কখনও রাইট ব্যাক পজিশনেও খেলে থাকেন। এখনও পর্যন্ত পেশাদার ক্যারিয়ারে হামজা খেলেছেন মোট ১৬০ ম্যাচ।
ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ও রাইট ব্যাক দুই পজিশনে খেললেও হামজা বেশি কার্যকরী প্রথম পজিশনেই। তার বড় শক্তির জায়গা বল ডিস্ট্রিবিউশন। সঠিকভাবে প্ল্যান করা সম্ভব হলে মাঠের খেলায় গতি প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। চলতি মৌসুমে শেফিল্ডের জার্সিতে ৮০ শতাংশ এবং লেস্টার সিটিতে ৮৯ শতাংশ সঠিক পাস দিয়েছেন হামজা। ফাইনাল থার্ডেও বল পাঠিয়েছেন হরহামেশাই। তবে রাইট ব্যাটে কিছুটা দুর্বল তিনি। রাইট ব্যাকে ভালো হতে হলে লং পাস ও ক্রসে অনেক ভালো হতে হয়। এখানে কিছুটা দুর্বল হামজা। লং বলে হামজার পাসিং অ্যাকুরেসি ৪০ এর কিছুটা কম।
ফুটবল দলীয় খেলা। ১১ জনের এ খেলায় হামজাকে দলের বাকি ১০ সদস্য কীভাবে সাহায্য করতে পারবেন সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে হামজার অন্তর্ভুক্তি যে বাংলাদেশের ফুটবলকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাবে তা অনুমান করাই যায়। এই দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা তো বটেই তর্কসাপেক্ষে দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান সেরা খেলোয়াড় এখন বাংলাদেশের হামজা।
আগামী ২৫ মার্চ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সে ম্যাচে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হবে ইংলিশ ক্লাব শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে খেলা এই ফুটবলারের। খুব সম্ভবত সে ম্যাচে হামজার প্রিয় পজিশন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ভূমিকাতেই দেখা যাবে তাকে।