মহল্লাদার বা গ্রাম পুলিশে চাকরি পাবার আশায় মায়ের গহনা বিক্রি করে দফায় তিন লাখ টাকা দেন মো. আরিফুল ইসলাম। নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে যোগদান করতে গিয়ে জানতে পারেন নিয়োগপত্রটি ভূয়া। এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইলে। প্রতারণার শিকার আরিফফুল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের বাঁশহাটি গ্রামের মো. সহিদুল্লাহর ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে ২০২৩ সালের জুন মাসে উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের আচারগাঁও গ্রামের মো. শাহ আলম ওরফে হিরু আলম নামে এক ব্যক্তি গ্রাম পুলিশ বা মহল্লাদারের চাকরি দেওয়ার কথা বলে তিন দফায় তিন লাখ টাকা নেন আরিফুলের কাছ থেকে।
২০২৪ সালের ৬ মার্চ ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরিত একটি নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। নিয়োগ পত্রে লেখা ছিল স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের এস আর ও নম্বর ৮৯ আইন ২০১৫ তারিখ ৪ মে প্রকাশিত স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) গ্রাম পুলিশ গঠন, প্রশিক্ষণ শৃঙ্খলা ও চাকরির শর্তাবলি সম্পর্কিত বিধি মালা, ২০১৫ মোতাবেক ৪ নম্বর চন্ডীপাশা ইউনিয়ন পরিষদে মহল্লাদার পদে আপনাকে নিয়োগ প্রদান করা হল।
এ অবস্থায় আপনার ২০২৪ সালের ৬ মার্চ আবেদনপত্র ও পরে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎকার-পরীক্ষার ভিক্তিতে ওপরে লিখিত শর্তসাপেক্ষে ময়মনসিংহ বিভাগের ১৫তম গ্রেডে ৪ নম্বর চন্ডিপাশা ইউনিয়ন পরিষদে মহল্লাদার পদে আপনাকে নিয়োগ প্রদান করা হল। এই জন্য আগামী ১০ মে তারিখে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সশরীরে উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষভাবে বলা হল।
চাকরি প্রার্থী আরিফুল জানান, টাকা ও কাগজপত্র দিলেও কোথাও পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকার দেননি তিনি। তারপর নিয়োগে লেখা ছিল তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন।
আরিফুল জানান, তিনি নিয়োগে দেওয়া নির্ধারিত তারিখে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে নিয়োগপত্র দেখালে সেখান থেকে জানানো হয় এটা ভুয়া। তখনি বুঝতে পারেন তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। এরপর থেকে ওই প্রতারক হিরু আলমকে খুঁজলেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে ছেলে একটি চাকরি পাবে এই আশায় স্বর্ণের কানের দুল ও নাকের ফুল বিক্রি করেছিলেন তাঁর মা। সুদের ওপরে ঋণ নেন অনেক টাকা। চাকরি না হওয়ায় এই সুদে আনা টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। এখন কী করবেন, কার কাছে যাবেন ভেবে পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী এই পরিবার।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার জানান, নিয়োগে যে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর রয়েছে ওই সময় তিনি জেলা প্রশাসক ছিলেন না। এতে বোঝা যায় এটা ভুয়া। ওই যুবক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এখন প্রতারকের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে।