বিশ্বের গঠনপ্রণালী বুঝতে গামা রশ্মির সন্ধান করবে চীন-ফ্রান্স

  • বিজ্ঞান ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের গঠনপ্রণালী ভালোভাবে বোঝার জন্য পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে চীন ও ফ্রান্স। দুই দেশের মহাশূন্য গবেষকেরা যৌথভাবে এই স্যাটেলাইটটি তৈরি করেছেন। এতে ফ্রান্সের দুটি এবং চীনের দুটি বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি রয়েছে।

শনিবার (২২ জুন) স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় (০৭০০ জিএমটি) চীনের দক্ষিণপশ্চিম প্রদেশ সিচুয়ানের বেসস্টেশন থেকে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানো হয়।

বিজ্ঞাপন

দুই দেশের বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে একট ‘দ্য স্পেস ভেরিয়েবল অবজেক্টস মনিটর’ (এসভিওএম) তৈরি করেছেন। এই মনিটর বিস্ফোরণের পর যে গামা রশ্মি বিলিয়ন বিলিয়ন আলোকবর্ষ পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীতে পৌঁছেছিল, তার সন্ধান চালাবে।

এই গামা রশ্মির বিস্ফোরণের (Gamma-Ray Bursts-GRBs) ফলে একটি ফিউশন হয়। এ বিস্ফোরণের সময় ছিল খুবই অল্প সময়ের। এতে অসংখ্য তারকারাজির সৃষ্টি হয়। এ সব তারকা আমাদের সৌরমণ্ডলের সূর্যের (সূর্যও একটি তারকা/নক্ষত্র) চেয়েও ২০ গুণ বড়।

বিজ্ঞাপন

এই অতি উজ্জ্বল মহাজাগতিক রশ্মি যে শক্তি উৎপন্ন করেছিল, তা বিলিয়ন বিলিয়ন সূর্যের উৎপন্ন শক্তির সমান।

মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ফ্ল্যাটিরন ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের জ্যোতির্বিদ ওরে গোটলিয়েব বলেন, এসভিওএম অতীতে তারকারাজি থেকে সৃষ্টি হওয়া যে আলোক রশ্মি পৃথিবীতে এসে পৌঁছেছে, তা পর্যবেক্ষণ করবে।

মহাবিশ্বের বিভিন্ন উজ্জ্বল তারকারাজি, ছবি- সংগৃহীত

বিভিন্ন রহস্য

গামা রশ্মি বিলিয়ন বিলিয়ন আলোকবর্ষ পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীতে আসার আগে বিভিন্ন গ্যাসের মেঘ এবং বিভিন্ন গ্যালাক্সির চিহ্ন বয়ে নিয়ে এনেছে।

জ্যোতির্বিদ ওরে গোটলিয়েব বলেন, দ্য স্পেস ভেরিয়েবল অবজেক্টস মনিটর-এসভিওএম গামা রশ্মির তথ্য বিজ্ঞানীদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিবর্তন ও ইতিহাস আরো ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করবে।

ওরে গোটলিয়েব বলেন, গামা রশ্মির বিস্ফোরণের ফলে দূর মহাবিশ্বের প্রান্তে যে বস্তুগুলির সৃষ্টি হয়েছে, এসভিওএম সেগুলিও চিহ্নিত করতে সহযোগিতা করবে।

ওরে গোটলিয়েব আরো বলেন, বিগ ব্যাং বা মহাপ্রসারণের ৬শ ৩০ মিলিয়ন বছর পর মহাবিশ্বের প্রান্তের এ সব বস্তু সৃষ্টি হয়। তখন আমাদের ইউনিভার্স বা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির শৈশবে ছিল মাত্র।

ইনস্টিটিউট ডি’অ্যাস্ট্রোফিজিকস ডে প্যারিসের জ্যোতির্বিদ ফ্রেডেরিক ডায়াগনে বলেন, গামা রশ্মির বিস্ফোরণ ছিল ভীষণ তীব্র। বিভিন্ন তারকারাজির মৃত্যুর বিভিন্ন বিষয়ও এসভিওএম আমাদের বুঝতে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, এসভিওএমের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত আমাদের পদার্থ বিজ্ঞানের এমন সব তত্ত্ব বুঝতে সক্ষম করবে যা, ল্যাবরেটরিতে পুনরুৎপাদন করা সম্ভব নয়। এ উপাত্ত মহাশূন্যের গঠন, গ্যাসের মেঘের গতি কিংবা বিভিন্ন গ্যালাক্সি সম্পর্কে আরো সম্যক ধারণা লাভ করতে সহজ হবে।

পৃথিবীর ৬শ ২৫ কিলেমিটার (৩শ ৮৮ মাইল) উচ্চতার কক্ষপথে পাঠানো এই স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে তথ্য পাঠাবে। সে তথ্য চীন এবং ফ্রান্সের বিজ্ঞানীরা তা বিশ্লেষণ করবেন।

যেহেতু, গামা রশ্মির স্থিতিকাল ছিল খুবই সামান্য, সে কারণে সময়ের বিপরীতে সেসব তথ্য সংগ্রহ করা বিজ্ঞানীদের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে।

যদি গামা রশ্মির এই বিস্ফোরণ শনাক্ত করা যায়, তাহলে এসভিওএম প্রতি মুহূর্তে তার তথ্য-উপাত্ত পৃথিবীতে পাঠাবে। পৃথিবীত স্থাপিত টেলিস্কোপের মাধ্যমে তা পাঁচ মিনিটের মধ্যে এ তথ্য পাবেন বিজ্ঞানীরা।  সূত্র- এএফপি ও ফ্রান্স২৪.কম