জীবনের সন্ধানে মহাশূন্যে পাড়ি দিচ্ছে ‘ইউরোপা ক্লিপার’!

  • ড. মইনুল হাসান
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আমাদের পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহ বা উপগ্রহে প্রাণ আছে কিনা, এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত।

বৃহস্পতির চাঁদে (উপগ্রহ) ইউরোপাতে প্রাণের সম্ভাবনা অনুসন্ধানে নাসা ‘ইউরোপা ক্লিপার’ নামক একটি মহাকাশযান পাঠাতে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

১০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে মহাকাশযানটির বৃহস্পতির চাঁদে (উপগ্রহ) ইউরোপার উদ্দেশে পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এটির উড্ডয়ন এগিয়ে সোমবার (১৫ অক্টোবর) নির্ধারণ করা হয়েছে।

পৃথিবী থেকে ইউরোপায় পৌঁছাতে ৬ হাজার ৬৫ কেজি ওজনের মহাকাশযানটিকে পাড়ি দিতে হবে ২শ ৯০ কোটি কিলোমিটার বা ১শ ৮০ কোটি মাইল। এটিই হবে ইউরোপায় প্রথম কোনো অনুসন্ধানী মিশন আর এই মিশনের জন্য খরচ ধরা হয়েছে, ৫শ কোটি মার্কিন ডলার বা যা টাকার অংকে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

আমাদের চাঁদ থেকে ইউরোপা ১০ শতাংশ ছোট হলেও ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে যে পরিমাণ পানি আছে, সেই পরিমাণ পানি জমা আছে ইউরোপার বরফের পুরো আস্তরণের নিচে ঢাকা বিশাল মহাসমুদ্রে।

পানির সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক নিবিড়। তাই সেখানে জীবনের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে বলে জ্যোতির-জীববিজ্ঞানীরা ভীষণ আশাবাদী।

ইউরোপা ক্লিপারে থাকছে মোট ৯টি অত্যাধুনিক যন্ত্র। ৩টি ক্যামেরা, ৩টি স্পেকট্রোফটোমিটার, একটি রাডার, একটি ম্যাগনেটোমিটার এবং একটি ধুলো বিশ্লেষক যন্ত্র।

ক্লিপার ২০৩১ সালে শুরু করে ২০৩৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময়ে ইউরোপার আকাশে ৪৯বার অনুসন্ধানী টহল চালাবে। ২০৩৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইউরোপা ক্লিপারকে বৃহস্পতির আরেকটি উপগ্রহ গ্যানিমেডের ভূস্তরে আছড়ে ফেলা হবে। কারণ, ক্লিপারের পৃষ্ঠে পৃথিবীর কোনো অনুজীব লেগে থাকলে, তা যেন ইউরোপাকে সংক্রামিত করতে না পারে।

ইউরোপা ক্লিপার আকৃতি একটি বাস্কেট বলের মাঠের সমান। এটি ১শ ফুট বা ৩০.৫ মিটার লম্বা। এটিই হচ্ছে, মহাশূন্য নাসার পাঠানো সবচেয়ে বড় স্পেসশিপ।

জীবন প্রক্রিয়া গঠনের জন্য পানি, জৈবযৌগ এবং শক্তি প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, বৃহস্পতির উপগ্রহে এই মুহূর্তে তার সবকিছুই বিদ্যমান রয়েছে।

এর আগের অনুসন্ধানে জোরালো প্রমাণ মেলে যে, বৃহস্পতির চাঁদে বরফের আস্তরণের নিচে পৃথিবীর মহাসমুদ্রের সমান পানি জমা হয়ে আছে।

লেখক: অনুজীব বিজ্ঞানী, প্যারিস, ফ্রান্সে কর্মরত।