একে একে প্রায় সব মামলা থেকেই বেকসুর খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সবশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক হুমায়ূন কবির সাব্বির হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ঘুষ লেনদেনের মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। তবে দুদকের একটি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা এখনো ঝুলে রয়েছে। বলা যায় এই একটি মামলাই এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মাথা ব্যথার কারণ হিসেবে রয়ে গেছে।
১৭ বছর আগে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাধায়ক সরকারের আমলে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয় তারেক রহমানকে ৷ এর পর থেকে তিনি যুক্তরােজ্য অবস্থান করছেন। সে সময় চাদাবাজিসহ নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছিল ১৩টি মামলা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে তার বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ নানা ফৌজদারি অভিযোগে আরো ৭১টি মামলা করে। এর মধ্যে পাচটি মামলায় তাকে দণ্ড দেয় নিম্ন আদালত ৷ সেসব মামলার মধ্যে চারটি মামলায় তাকে দেওয়া দণ্ড বাতিল করে বেকসুর খালাস দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেকসুর খালাসের রায়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে, ‘আপিলের বিষয়বস্তু থেকে এটা প্রমাণ হয় যে এ মামলায় আইনের ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রয়োগ ঘটেছে । মামলাটি ছিল 'রাজনৈতিক বিদ্বেষপূর্ণ। ফলে আপিল বিভাগের এই রায় আপিলকূরীসহ অন্যদের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি তাদের নিরপরাধ ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত করবে ।’
এদিকে দুদকের একটি মামলায় দুই বছর আগে তারেক রহমানকে দণ্ড দিয়েছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৷ এই দণ্ড বাতিল হলে তিনি সাজামুক্ত হবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা ৷ তারেক রহমানের মামলা প্রসঙ্গে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল গণমাধ্যমে বলেছিলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৮৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল৷ ওয়ান-ইলেভেনের তত্বববধায়ক সরকার ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এসব মামলা হয়েছে। অধিকাংশ মামলাই ছিল মানহানির ৷
আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব মানহানির মামলা খারিজ হয়ে গেছে৷ তাছাড়া জরুরি অবস্থার সময় দায়ের করা কিছু চাদাবাজির মামলাও হয়েছিল৷ যেসব মামলার আইনগত কোনো ভিত্তি ছিল না। শেখ হাসিনার আমলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও হয়েছিল ৷ এই মামলাটিরও আইনগত কোনো ভিত্তি ছিল না৷ যে কারণে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ মামলাগুলো বাতিল করে দিয়েছে। আ্যাডভোকেট জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বিগত সরকারের আমলে পাঁচটি মামলায় উনাকে সাজা দেওয়া হয়েছিল৷ সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ এখন পযন্ত চারটি মামলায় তাকে খালাস দিয়েছেন ৷ দুদকের একটি মামলায় সাজা রয়েছে।
বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে সরকার ৷ ওই সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ একটি ফৌজদারি মামলায় তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়৷ এরপর বন্দি থাকাবস্থায় তার ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন ৷ পরে তার বিরুদ্ধে একে একে দায়ের করা হয় ১৩টি মামলা ৷ ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তারেক রহমানকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি করে।
তদন্ত সম্পন্ন হওয়া এই মামলাটি অধিকতর তদন্তের নামে আওয়ামী লীগ সরকার সিআইডিকে দিয়ে পুনরায় তদন্ত করে তারেক রহমানকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করেন৷ যা নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনা করা হয়েছিল৷ দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দেশে ফিরে যাতে রাজনীতি না করতে পারেন্ সেজন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই তারেক রহমানকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় তাকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছিল ঢাকার দ্রুত বিচার টইযুনাল ৷
গত ১ ডিসেম্বর তারেক রহমানসহ ৪৯ জনের সাজা বাতিল করে বেকসুর খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও অর্থ পাচার মামলায় তারেক রহমানকে দেওয়া হাইকোর্টের সাজা বাতিল করে বেকসুর খালাস দিয়েছে আপিল বিভাগ ৷ মানহানির একটি মামলায় ২০২১ সালের 8 ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় নড়াইলের একটি আদালত ৷ মামলার বাদী উচ্চ আদালতে রিভিউ আবেদন করলে সাজা প্রদানকারী আদালতকে মামলাটি পুনর্বিচারের আদেশ দেন। পুনর্বিচারেরআদেশে গত ৩১ ডিসেম্বর মামলাটি খারিজ হয়।
২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মামলা করে দুদক ৷ ২০২৩ সালের ২ আগস্ট এ মামলায় তারেক রহমানকে ৯ বছর এবং তার স্ত্রীকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামান ৷ এই মামলাটি এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন ৷
সর্বশেষ খালাস পেলেন যে মামলায়: বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক হুমায়ুন কবির সাব্বির হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের মামলায় তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত ৷ একই মামলায় খালাস পেয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আট জন । বৃহস্পতিবার রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মো. আবু তাহেরের আদালত এ রায় দেন। রায়ে বলা হয়, এই মামলার কোন সাক্ষী বলেননি অভিযুক্তরা ঘুষ চেয়েছেন বা কেউ তাদের ঘুষ দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হলো।