অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু কিছু লোকের বক্তব্যে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷ তিনি বলেন, আমরা এখনো এই সরকারকে সাহায্য করবো। আমরা আশা করবো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষ যে নিরপেক্ষতা আশা করেন, তারা সেই নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির দ্বি বার্ষিক সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, বাংলাদেশে কিছুদিন ধরে অস্থিরতা লক্ষ্য করছি। আজ যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন তাদেরকে নিয়ে জনগণের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমরা সরকার গঠনের সময় থেকে আমরা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন করে এসেছি। কারণ, আমরা চেয়েছি এই সরকার একটি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের হারিয়ে যাওয়া ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিবেন। আমরা লক্ষ্য করছি, এই সরকারের বিভিন্ন জন জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেবার প্রশ্নে একেক কথা বলছেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু মতপার্থক্যের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশ ও গণতান্ত্রিক দলগুলো। তাই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে৷ যত বেশী ঐক্যবদ্ধ থাকব, তত বেশী গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে পরিকল্পনাকারীদের ষড়যন্ত্র ভেস্তে যাবে।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশে এই মূহুর্তে নির্বাচন বিলম্বিত হলে কারা সুবিধাপ্রাপ্ত হবে এটা দেখার বিষয়। বিএনপি বিশ্বাস করে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস৷ বাংলাদেশে যদি গণতন্ত্রের চর্চা অব্যহত রাখা যায়, তত বেশী বাংলাদেশের মানুষকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে নিরাপদ রাখতে পারব। দেশে যদি ভোটের অধিকার নিশ্চিত থাকে, তাহলে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হবে।
তিনি আরও বলেন, ৪৫/৪৬ বছর ধরে ছয়টি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, গায়েবী ও মিথ্যা মামলার মধ্য দিয়ে বিএনপি আজ এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে৷ কোনো নির্বাচনে বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিল, কোনো নির্বাচনে বিএনপি বিরোধীদলীয় সরকার গঠন করেছে। বিএনপি আজ জনগণের রাজনৈতিক দল হয়েছে। তবে, আরো বেশী কীভাবে জনগণের প্রত্যাশা লাভ করা যায় সেই চেষ্টা আগামীতে আমাদের থাকবে।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি জনগণের কথা বলে। একটি রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই হলো কীভাবে জনগণকে নিজের দলের সাথে সম্পৃক্ত রাখকবে। পরিকল্পনা থাকে, কীভাবে সরকার গঠন করবে। আর এর একমাত্র উপায় হচ্ছে ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করা। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণের কাছে যাওয়া। আমরা যেহেতু জনগণের শাসনে বিশ্বাস করি, ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, তাই আমরা ভোট চাইবো, নির্বাচন চাইবো এটিই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এই স্বাভাবিক বিষয়টিই অনেকে নিতে পারেন না।
মহানগর বিএনপির নবগঠিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আবু-টিপু কে উদ্দেশ্য করে তারেক রহমান বলেন, তোমাদের মূল ও অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে কুমিল্লা মহানগরীর সাধারণ মানুষের আস্থা দলের উপর আনতে তোমাদেরকে কাজ করতে হবে৷ এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল সঠিক নেতৃত্ব বের করে আনা। কুমিল্লা মহানগরীর প্রতিটি মানুষের কাছে আমাদের দলের আদর্শ ও নীতি পৌঁছে দিতে কাজ করতে হবে। আসুন আমরা কাউন্সিলের কাছে অনুরোধ করবো, আমরা শুধু কুমিল্লা মহানগরী নয়, সমগ্র বাংলাদেশে যে দাবি আদায়ের জন্য আমাদের শত শত, হাজার হাজার সহকর্মী গুম, খুন, হত্যা ও গায়েবী মামলার শিকার হয়েছেন সেই দাবি আমাদেরকে আদায় করতে হবে। এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।
তিনি আরো বলেন, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করলেই হবে না, যে ভোটের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে সেটা প্রদানের অধিকারও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে৷
সর্বশেষ সম্মেলনে উপস্থিত সকল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, আমাদেরকে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। দেশের মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন পরিকল্পনা মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। অন্যান্য দলও একই কাজ করবেন। জনগণ সিদ্ধান্ত নিবেন, কাকে দায়িত্ব দিবেন আগামীর দেশ পরিচালনা করার। আসুন, এখন হচ্ছে দেশ গড়ার পালা। দেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে গড়ে তুলতে আমাদের চেষ্টা অব্যহত থাকতে হবে। এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।