মসজিদে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা: আরও একজনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ৪

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মাদারীপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুরের খোয়াজপুরে মসজিদের ভিতরে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত তাজেল হাওলাদারের (১৮) মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ জনে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাত ১০ টার দিকে আমার সংবাদকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নিহতের বড় ভাই রাজু হাওলাদার। নিহত তাজেল মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের খোয়াজপুর-টেকেরহাট গ্রামের আজিজুল হাওলাদারের ছেলে।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ, পরিবার, এলাকাবাসী ও বিশেষ সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় দুই ভাগে বিভক্ত ছিল জেলা আওয়ামীলীগ। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিতেন সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিতেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম। এরই জেরে জেলাজুড়ে প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ছিল দুটি গ্রুপ।
দীর্ঘদিন ধরে মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুরে কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন বাহাউদ্দীন নাসিম সমর্থিত খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সরদার। আর তার প্রতিপক্ষ হোসেন সরদার (৬০) ছিলেন শাজাহান খান সমর্থিত আওয়ামী লীগ নেতা। আওয়ামীলীগ ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সিন্ডিকেট ও খোয়াজপুর-টেকেরহাট বাজারের ইজারা দখল নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এ দ্বন্দ্বের জেরে ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে খোয়াজপুর বাজারের মধ্যে প্রকাশ্যে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হোসেন সরদারের দুই পা ভেঙে দেন সাইফুল সরদার ও তার লোকজন। তারা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। ৫ই আগষ্টে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর রদবদল করে স্থানীয় বিএনপি নেতা শাজাহান খান ওরফে শাজাহান মোহরীর সঙ্গে যোগ দেন হোসেন সরদার। পরে পা ভাঙ্গার প্রতিশোধ ও পুরো সিন্ডিকেট দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। এ নিয়ে মাসখানেক আগে দুই গ্রুপের মধ্যে হামলা ভাংচুরেরও ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে শনিবার (৮ মার্চ) খোয়াজপুর সরদারবাড়ি জামে মসজিদের ভিতরে হামলা চালিয়ে সাইফুল ও তার ভাই আতাবুর সরদারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে হোসেন সরদারের লোকজন। একই সঙ্গে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয় নিহত সাইফুলের আরেক ভাই অলিল সরদার, চাচাতো ভাই পলাশ সরদার(১৭), স্ত্রী সেতু আক্তার ও তাদের দলীয় তাজেল হাওলাদার (১৮) সহ আরো ৮ জনকে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য অলিল, পলাশ ও তাজেলকে ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ করলে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (৮ মার্চ) পলাশ সরদারের মৃত্যু হয়। এর ৮ দিন পর চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল থেকে তাজেলকে গত ১৫ মার্চ বাড়িতে আনা হয়। দুইদিন পর আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেলে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।

নিহত তাজেলের বড় ভাই রাজু হাওলাদার জানান, আট দিন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা শেষে গত (১৫ মার্চ) শনিবার বাড়ি নিয়ে এসেছিলাম। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে খাবার খাওয়ার পর আবার গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে ভর্তি করার আগেই মারা যায়। বর্তমানে আমার ভাইয়ের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। মনে হয় রাতে লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবো না। আগামীকাল লাশ আমাদের কাছে দিতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) চাতক চাকমা জানান, আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি যে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত তাজেল মারা গেছে। তার লাশ এখনো ঢাকা মেডিকেলেই আছে।

উল্লেখ্য, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত (৮ মার্চ) রোববার রাতে ৪৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ৮০/৯০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মাদারীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইফুল সরদারের মা সুফিয়া বেগম। এ মামলার প্রধান আসামিসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তারা বর্তমানে মাদারীপুর কারাগারে বন্দী রয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন, মামলার ১ নং আসামি হোসেন সরদার, সুমন সরদার, মামলার ২ নং আসামি মতি সরদারের স্ত্রী কুলসুম বেগম, খোয়াজপুর গ্রামের রুবেল বেপারী ও সুজন মাহমুদ।