গুতেরেস-ইউনূস বৈঠক

সংস্কার প্যাকেজ নির্ধারণ করবে নির্বাচনের সময়

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী বছরের জুনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজে একমত হয়, তাহলে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ গ্রহণ করলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে।

শুক্রবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগের প্রতি জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানান, সংস্কার প্রক্রিয়ার আওতায় গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে মতামত জমা দিয়েছে। দলগুলো এই সুপারিশের সঙ্গে একমত হলে 'জুলাই সনদ'-এ স্বাক্ষর করবে, যা গণতান্ত্রিক উত্তরণ, রাজনৈতিক, বিচারিক, প্রশাসনিক, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কারের একটি রূপরেখা হিসেবে কাজ করবে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ গ্রহণ করা হলে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হবে, আর বৃহৎ সংস্কার গ্রহণ করলে তা জুনে গড়াবে। তিনি একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার ব্যাপারে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান। তবে তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে থাকা এক মিলিয়নেরও বেশি শরণার্থীর জন্য সহায়তা হ্রাসের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গুতেরেস বলেন, ‘আমরা আপনাদের সংস্কার প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে এখানে এসেছি এবং যেকোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমাদের জানান।'

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, তিনি রমজান মাসে রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতেই বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, কক্সবাজারে ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য মানবিক সহায়তা কমে যাওয়া ভয়াবহ সংকট তৈরি করতে পারে। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে এত বৈষম্যের শিকার আর কোনো জনগোষ্ঠী আমি দেখিনি।'

গুতেরেস আরও বলেন, ‘মানবিক সহায়তা কমানো একটি অপরাধ। পশ্চিমা দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় দ্বিগুণ করছে, অথচ বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তা সংকুচিত হচ্ছে।' তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।

অর্থনৈতিক প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যাংকিং খাত, সংকুচিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং ভঙ্গুর আর্থিক প্রতিষ্ঠান পেয়েছে। তবে এখন অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ভালো অবস্থানে রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছি।' সরকারের লক্ষ্য আগের শাসনামলে লুটপাট হওয়া কয়েক শ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ফিরিয়ে আনা।
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেন, আগের সরকারের রেখে যাওয়া অর্থনৈতিক দুরবস্থা তাকে ১৯৭৪ সালের পর্তুগালের বিপ্লবের দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকাকে অসাধারণ বলে প্রশংসা করেন এবং বলেন, ‘বাংলাদেশ ন্যায়সংগত বিশ্ব প্রতিষ্ঠার অগ্রভাগে রয়েছে।' অধ্যাপক ইউনূসও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অর্জিত অভিজ্ঞতার প্রশংসা করেন।

বৈঠকে ভূরাজনীতি, সার্কের বর্তমান অবস্থা এবং বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হয়। অধ্যাপক ইউনূস জানান, বাংলাদেশ আসিয়ানের সদস্য হতে চায় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে চায়।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, চট্টগ্রামে বহু বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান এবং এসডিজি-বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস।