বরিশালের ৬৪৬টি ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল শিক্ষার্থীদের জীবনের শঙ্কা
-
-
|

ছবি: সংগৃহীত
বরিশাল বিভাগের ৬৪৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ অবস্থা লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে।
এসব বিদ্যালয়ের ছাদ, পিলার ও দেয়াল যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। কিছু স্কুলের ভবন এতটাই নড়বড়ে যে, যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে তৈরি হয়েছে ।
এরই একটি বরিশাল নগরীর দিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যেটি ১৯৪৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটি একটি পরিত্যক্ত ভবনে রূপ নিয়েছে। ক্লাস চলাকালীন শিক্ষার্থীদের চোখ বই-খাতার চেয়ে বেশি থাকে ছাদের দিকে, কখন জানি পলেস্তারা খসে পড়ে। বিদ্যালয়ের তিনটি কক্ষ ২০১২ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও এখনো সেখানে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে পুকুরে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক আফসানা মুন্নি বলেন,আমি যে ক্লাসে দাঁড়িয়ে কথা বলছি, সেটিসহ আরও তিনটি ক্লাসরুম ১২ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। একবার ক্লাস চলাকালীন সময়ে পিলার ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে, এমনকি সিলিং ফ্যানও পড়ে গিয়েছিল। এখনো যে কোনো মুহূর্তে পুরো ভবন ধসে পড়তে পারে। বারবার জানানো হলেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি।
১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সাগরদী রুপাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ভবনও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ফাউন্ডেশন ছাড়াই নির্মিত এই দোতলা ভবনটি বর্তমানে ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে শিক্ষকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে।
বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক আরিফুর রহমান বলেন,আমাদের স্কুলে দপ্তরি নেই। ফলে আমাকে ঘন্টা বাজাতে আসতে হয়। একদিন দেয়াল ধসে আমি গুরুতর আহত হয়েছিলাম। পুরো স্কুলে ফাটল ধরেছে, যেকোনো সময় ভবনটি ধসে পড়তে পারে।
অপর এক শিক্ষক ইলিয়াস রহমান বলেন,ক্লাস চলাকালীন ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে, রড বের হয়ে আসে, এতে কয়েকজন শিশু আহত হয়েছে। আমরা বাধ্য হয়ে সেই কক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছি। একের পর এক শ্রেণিকক্ষ অনুপযোগী হয়ে পড়ছে, শিক্ষার্থীদের জন্য জায়গার সংকট দেখা দিয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক শাহানারা বেগম বলেন,আমরা শিক্ষার্থীদের চাপ সামলাতে গিয়ে কোনো ফাউন্ডেশন ছাড়াই দোতলা ভবন নির্মাণ করেছি। কিন্তু প্রতিনিয়ত ভীম ও দেয়াল খসে পড়ছে। নিরাপত্তার কারণে আমরা ভর্তি কমিয়ে দিয়েছি। বহুবার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বিদ্যালয়গুলোর ভয়াবহ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরা। একজন অভিভাবক ইসরাত জাহান ইভা বলেন, স্কুলের পড়াশোনা ভালো, কিন্তু এই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বাচ্চাকে রেখে নিশ্চিন্তে থাকতে পারি না। স্কুলে পলেস্তারা খসে পড়ে, দেয়াল ফাটল ধরা, ক্লাসে পানি পড়ে—এসব আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে।"
অন্য এক অভিভাবক ফাতেমা আক্তার বলেন, স্কুল ভবনের যা অবস্থা, তাতে প্রতিদিন টেনশন নিয়ে থাকি। যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন।
বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬,২৪১টি। এর মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ স্কুল মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব স্কুলে প্রায় ১ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে এবং বরাদ্দ পেলে সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন শেষে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলগুলোর ক্লাস পাশের কোনো ভবনে স্থানান্তর করতে বলা হয়েছে। জরুরি তহবিল থেকে সাময়িক সংস্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।