তুলার বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ময়মনসিংহে তুলার বাম্পার ফলন

ময়মনসিংহে তুলার বাম্পার ফলন

ব্রহ্মপুত্র নদের ধু-ধু বালু চরে দূর থেকে দেখে মনে হবে সাদা কোন ফুলের বাগান। কিন্তু কাছে গিয়ে একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে সেটি ফুলের বাগান নয়, কলি থেকে বের হয়ে আছে তুলা বা কৃষকের ভাষার সাদা সোনা। সে তুলা সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে ময়মনসিংহের কৃষকরা। এবার তুলা চাষে বাম্পার ফলনে খুশি চাষিরা।

ময়মনসিংহ তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায় ময়মনসিংহ জুনের আওতায় ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল জেলায় তুলা চাষ করা হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫মৌসুমে তুলা উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহ জোনে ২ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে তিন হাজার ৭২৫ জন কৃষকের মাধ্যমে তুলা চাষ করছে।

বিজ্ঞাপন
মাঠ জুড়ে তুলা চাষ

এ বছর সিবি হাইব্রিড-১, সিবি-১২, সিবি-১৩ -১৪সহ বিদেশি কোম্পানির সুপ্রিম সিট হোয়াটগোল-১, ২ ও রূপালি-১, ইস্পাহানি কোম্পানির শুভ্র- ৩, লাল তীর কোম্পানির ডিএম-৪ জাতের তুলা চাষ করা হয়েছে।

প্রতি বিঘা জমিতে তুলা উৎপাদন হয় ১৫ থেকে ১৬ মণ। প্রতিমণ তুলার মূল্য ৪ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে চাষাবাদের খরচের পরও কৃষকরা ৪৫ হাজার টাকা মুনাফা পাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ময়মনসিংহ জুনের গফরগাঁও উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায় তুলা চাষিরা গাছ থেকে তুলা সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে। তুলা গাছ থেকে তুলা সংগ্রহের পর তা বস্তায় করে সরাসরি চলে যাবে কারখানায়, তৈরি হবে সার্জিক্যাল গজ-ব্যান্ডেজ। বীজ থেকে তৈরি হবে ভোজ্যতেল, খইল, জ্বালানি উপজাতও পাওয়া যায়।

আবার একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে লাল শাক, লাউ শাক বাদামসহ বিভিন্ন শাক-সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল চাষ করেও বাড়তি আয় করছে কৃষকরা।
নিস্ফলা জমিতে তুলা চাষ করায় একদিকে যেমন জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষকরা বেশ টাকা পাচ্ছেন, তাদের পরিবারে আসছে স্বচ্ছলতা। তবে তুলা উত্তোলনে শ্রমিক সংকট থাকায় তুলা উত্তোলনের জন্য মেশিন চায় চাষিরা।

তুলা সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা

প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ তুলা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তুলা এ দেশে উৎপাদন করতে পারলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব। জলবায়ুসহনশীল এ তুলা চাষে বেশি লাভ পাওয়ায় ময়মনসিংহে বড় ও মাঝারি শ্রেণির কৃষকরা তুলা চাষে ঝুঁকছেন।

চরআলগী ইউনিয়নের তুলা চাষি আনিসুর রহমান বলেন, তুলা একটি লাভবাবন ফসল। এ বার তুলার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে শ্রমিকের সংকট রয়েছে। আগামীতে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে তুলা চাষাবাদ করবো।

কলি থেকে বের হয়ে আছে তুলা

চরআলগী ইউনিয়নের জয়ার চরের জালাল উদ্দিন বলেন, সরকারি সহায়তায় গত ৪ বছর ধরে তুলা চাষ করেছি। এ বছর তুলার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তুলা চাষ করে আমি মোটামুটি লাভবান। গাছ থেকে তুলা উঠানোর শ্রমিক সংকট রয়েছে। এজন্য তুলা উন্নয়ন কতৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি তুলা উঠানোর একটা মেশিন যেন প্রদান করা হয়।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের মাইজহাটি কটন ইউনিট কর্মকর্তা সরকার নাজমুল ইসলাম জানান, চরাচঞ্চলের কৃষকদের উন্নয়নের জন্য প্রদর্শনী ও প্রণোদনা দেওয়া হবে। প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিনামূল্যে সার ও বীজ দেওয়া হয়। এবং সাধারণ চাষিদের জন্য বিভাগীয় লোনের ব্যবস্থা আছে। আমাার এরিয়াতে ৬৯ একর জমিতে তুলা চাষাবাদ হয়েছে। এবার তুলার খুব ভালো ফলন হয়েছে।

তুলার বাম্পার ফলন

তুলা উন্নয়ন বোর্ড, ময়মনসিংহ জুনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা খালেদা ইয়াসমিন জানান, ময়মনসিংহ জুনে এ বছর ২ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৭২৫ জন কৃষক তুলা চাষ করছে। এবার তুলার ফলন ভালো হয়েছে। ২০২৪-২৫ মৌসুমে তুলা চাষিদের সরকারি প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। প্রণোদনা প্রদানের ফলে চাষিদের মধ্যে তুলা চাষে আগ্রহ বেড়েছে। আশা করছি আগামী বছরে ময়মনসিংহ জুনে তুলার ফলন দ্বিগুন হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।