কুষ্টিয়ায় গাজীর গানে মুগ্ধ হাজারো দর্শক

  • এসএম জামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

লোকসংগীত আবহমান বাংলার জীবন ও সংস্কৃতির এক অন্যতম অনুষঙ্গ। গ্রামবাংলার মানুষের সুখ-দুঃখ, আবেগ-অনুভূতি ছাড়াও জীবন ও জগতের গভীর অনেক তত্ত্বকথা উঠে আসে এই সংগীতে। আর এই লোকসংগীতের এক ভিন্নধর্মী সমৃদ্ধ ধারা গাজীর গান।

হারমোনিয়াম, ঢুলি ও জুড়ির ঝংকারে গানের সুর আবার কখনো বা বিরহের সুরে আবেগপূর্ণ হয়ে দর্শকদের মন মাতানো গীতিনাট্য পরিবেশন করে তারা।

বিজ্ঞাপন

কুষ্টিয়া এলাকার গায়েনরা যে গাজীর গান করেন, তাতে থাকে প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষের আনন্দ-বেদনার কাহিনি, প্রেম-ভালোবাসা, মহাজনের শোষণ, সংসারের টানাপড়েন ইত্যাদি। এক রাতে তিন-চারটি পালা হয়। পালাগুলোর স্থায়িত্ব গল্পভেদে এক থেকে দেড়-দুই ঘণ্টা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

গতকাল রাতে কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে দেখা গেল চারিদিকে আলোর ঝলকানিতে মঞ্চে গাজীর গান পরিবেশিত হচ্ছে। তখন শিল্পীরা লোকজ গাজী পীরের বন্দনাগীতিতে ব্যস্ত। আসরে দলনেতা গায়ে আলখেল্লা ও মাথায় পাগড়ি পরে একটি বিশেষ দণ্ড দুলিয়ে দুলিয়ে আসরের চারদিকে ঘুরে ঘুরে গান গাচ্ছিলেন। পিনপতন নিরবতা আবার কখনো বা উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ছেন দর্শকরা।

বিজ্ঞাপন

বিলুপ্তির পথে এ গান চলমান রাখতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ আয়োজিত "লোকনাট্য সমারোহ" কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চলে এ গাজীর গানের আসর।


কথা হয় গাজীর গানের দলনেতা কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তেঘরিয়া এলাকার গায়েন ষাটোর্ধ ফজর আলী মৃধা হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, দাদা ছিলেন গাজীর গানের দলনেতা। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ছিল টান। বিভিন্ন গানের আসরে যেতেন কৈশোরেই। প্রথম যৌবনে দাদার হাত ধরে প্রবেশ করেন গাজীর গানের আসরে। পরবর্তীতে নিজেই গঠন করেন পালাগানের দল। সেই থেকে গাজীর গীত গেয়েই চলে তার জীবন। তবে এখন আর আগের মত এসব গানের আসর বসে না। তাই আমাদের টিমের শিল্পীরা অন্য পেশায় চলে গেছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এ গাজীর গান ধরে রাখতে।

অত্র অঞ্চলের লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম রেজাউল হক সলক বলেন, গত শতকের আশি-নব্বইয়ের দশকেও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় মূলত শীতের রাতে বাড়ির উঠানে গাজীর গানের আসর বসত। ছেলেসন্তানের আশায় বা মানত হিসেবে গাজীর গানের আসর বসত বেশি। গত এক দশকের মতো সময় ধরে এ অঞ্চলে ‘গাজী-কালুর পালাগান’ অনেক কমে গেছে।

কালের বিবর্তনে গাজীর গীত হারিয়ে যেতে বসায় এর শিল্পীরাও হারিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে এখন অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছেন। যদি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেতো তাহলে ঘুরে দাঁড়াতে পারতো এ লোকজ শিল্প।

গাজীর গানকে ভালোভাবে টিকিয়ে রাখতে হলে গাজীর গানের ভালো কবিদের উৎসাহিত করা উচিত বলে মনে করেন কুষ্টিয়ার সংস্কৃতি কর্মী আব্বাস আলী। তিনি বলেন, ‘শহুরে গান’ আর ইন্টারনেটকেন্দ্রিক সংস্কৃতির দাপটে অনেক কিছুর মতোই হারিয়ে যেতে বসেছে গাজীর গান। কুষ্টিয়ার বেশ কিছু এলাকার শিল্পীরা ধরে রেখেছে এ গাজীর গান। এই অঞ্চলের শিল্পীরা দক্ষিণ পশ্চিমান্চলের জেলায় গিয়েও গাজীর গান গেয়ে আসেন। তাই এই অঞ্চলের মানুষজনের গাজীর গান শোনার আগ্রহ সব সময় ছিল। তিনি মনে করেন বিভিন্ন পুরাকীর্তি সংরক্ষণের মতোই গাজির গানের মতো লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণ করা জরুরি।

কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সুজন রহমান বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি পক্ষ থেকে শিল্পী ও কলাকুশলীদের সহযোগিতা করে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে গাজী-কালুর পালাগানকে ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।