প্রতিবছরের মতো এবারও ইংরেজিমাধ্যম ও ইংরেজি ভার্শন স্কুলের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে মহা আড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তঃস্কুল বাংলা অলিম্পিয়াড। সারা দেশের ৮০ টি স্কুলের দেড় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অত্যন্ত জমজমাট আয়োজনে এবারের চতুর্দশ আন্তঃস্কুল বাংলা অলিম্পিয়াড- ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত রাজধানীর উত্তরায় ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল প্রাঙ্গণে চতুর্দশ আন্তঃস্কুল বাংলা অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় প্রতিযোগীরা রচনা লেখা, আবৃত্তি, নাচ, গান, অঙ্কন, কুইজ এবং উপস্থিত বক্তৃতা বিষয়ে বয়সভেদে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ-এর প্রিন্সিপাল রোকসানা জারিন এবং চেয়ারম্যান টিমোতি ডোনাল্ড ফিশার।
ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ- এর চেয়ারম্যান টিমোতি ডোনাল্ড ফিশার বলেন, ‘বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস নিয়ে আমাদের বাংলা অলিম্পিয়াড। আমরা এ দেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে চাই।’’
ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল রোকসানা জারিন বলেন, প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও বাংলা ভাষা চর্চার এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পেরে ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ গর্বিত। এরই মধ্যে বাংলা অলিম্পিয়াড ইংরেজি স্কুলগুলোর জন্য একটি জাতীয় প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। শুধু জাতীয় নয়, বাংলা অলিম্পিয়াড ছড়িয়ে পড়ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। প্রতি বছরই দেশি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুলের বিদেশি শিক্ষার্থীরাও বাংলা অলিম্পিয়াডে যোগ দিচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশের ইংরেজি মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্শন স্কুলগুলো ভাষার মাসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। ভাষার মাসে বাংলা ভাষা নিয়ে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অনুষ্ঠানমালায় এটিই দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন।
এ বছরও অন্যান্য বারের মতো এ প্রতিযোগিতার উপদেষ্টা ও বিচারক হিসেবে ছিলেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ- লেখক-শিল্পীবৃন্দ। বিচারক হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী সুজিত মোস্তফা, শাহীন সামাদ, প্রিয়াঙ্কা গোপ, তানভীর আলম সজীব, আজিজুর রহমান তুহিন, নৃত্যশিল্পী জুয়াইরিয়া মৌলি, শান্তা শাহরিন, চিত্রশিল্পী প্রফেসর মোঃ আলপ্তগীন প্রমুখ।
বাংলা অলিম্পিয়াডের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ আজম।
ভাষার মাসে দেশের ইংরেজি মাধ্যম এবং ইংরেজি ভার্শন স্কুলগুলোর অংশগ্রহণে বাংলা ভাষা বিষয়ক সর্ববৃহৎ প্রতিযোগিতা রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ আয়োজিত আন্তঃস্কুল বাংলা অলিম্পিয়াড।বার্ষিক এই প্রতিযোগিতার ধারাবাহিকতা এরই মধ্যে সাফল্যের সাথে ১৪ বছর অতিক্রম করেছে।
উল্লেখ্য, গত পহেলা ডিসেম্বর বাংলা অলিম্পিয়াডের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন শুরু হয় এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুলগুলো অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেছে । প্রত্যেক শিক্ষার্থী একটি রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে দুটি ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতার সুযোগ পায়।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ আজম বলেন, বাংলা অলিম্পিয়াড নিজের বৈশিষ্ট্যেই বিশিষ্টতা অর্জন করেছে। বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ আমার দায়িত্ব। ভাষা নিয়ে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট মাসে আবেগ প্রকাশ করা ভাষাচর্চার জন্য যথেষ্ট নয়। মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যদি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চায় এগিয়ে আসে, তাহলে দেশের জন্য বিরাট উপকার হবে, মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ বৃত্ত শ্রেণি উপকৃত হবে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে প্রমিত বাংলা শেখানোর ব্যাপারে আরো গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আদিলুর রহমান খান বলেন, এদেশের মানুষ নিজেদের মর্যাদা রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছে, ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। আমাদের উচিত হবে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তৈরি করা, মানুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করা। এই অনুষ্ঠানে এসে আমি অত্যন্ত অভিভূত। এই শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধ হবে, এটাই বিশ্বাস করি।
প্রসঙ্গত, ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি এই স্কুলটি সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশীয় সংস্কৃতির সাথে শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। খেলাধুলা, বিজ্ঞানসহ নানা বিষয়ে নানা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্কুলের শিক্ষার্থীরা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে।এরই অংশ হিসেবে গত ১৪ বছর ধরে স্কুলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তঃস্কুল বাংলা অলিম্পিয়াড।