ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি. তার সুনাম ও মর্যাদা রক্ষায় সর্বদা আইনগত ও নৈতিক নীতিমালার অনুসরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছে। গ্রাহক মুর্তজা আলী কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা সম্পর্কিত প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে ব্যাংকটি এমন দাবি করেছে।
উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে ব্যাংক এর সুনাম ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে এবং ২০১৭ সালের ঘটনার সাথে নিজের সম্পৃক্ততা আড়াল করার অভিপ্রায়ে ব্যাংক এর পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যগণের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। যা ব্যাংকের ওপর অনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার একটি অপচেষ্টা বলে প্রতীয়মান বলে মনে করছে ইবিএল।
ইবিএল বলেছে, মুর্তজা আলী ইবিএল এর একজন আমানতকারী এবং আমানতের বিপরীতে ঋণ গ্রহণ করেন ২০১৭ সালের জুলাই মাসে। ঋণের আবেদনপত্রের প্রেক্ষিতে জামানত এবং অন্যান্য সকল সহায়ক কাগজপত্রে মুর্তজা আলীর স্বাক্ষর এবং সকল প্রকার নিয়মনীতি মেনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণের অনুমোদন প্রদান করে।
ঋণ অনুমোদনপত্র যথারীতি গ্রাহকের ঠিকানায় রেজিস্টার্ড ডাকযোগে পাঠানো হয়। এখানে উল্লেখ্য, মুর্তজা আলী এই ঋণ আবেদনের বিষয়টি স্বীকার করেন। ঋণ চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে ঋণের মাসিক কিস্তি পরিশোধের জন্য মুর্তজা আলীকে ইস্টার্ন ব্যাংক এর শাখা অফিস হতে তার নিবন্ধিত ই-মেইল ও মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে নোটিশ প্রদান করা হয়। তিনি কখনোই উক্ত নোটিশ এর ব্যাপারে ব্যাংক এর সাথে যোগাযোগ করেন নাই।
ফলশ্রুতিতে, ঋণের কিস্তি অনিয়মিত হয়ে যাওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ১৯ অগাস্ট ২০২০ তারিখে গ্রাহকের স্থায়ী আমানত নগদায়নের মাধ্যমে ঋণসমূহ পরিশোধ পূর্বক গ্রাহকের অনুকূলে দায়মুক্তি সনদ প্রদান করে যা গ্রাহকের নিবন্ধিত ঠিকানায় রেজিস্টার্ড ডাকযোগে প্রেরণ করা হয় এবং প্রাপ্তিস্বীকারপূর্বক গৃহীত হয়। আমানত নগদায়ন ও ঋণ পরিশোধের পর অবশিষ্ট আমানত তার ব্যাংক একাউন্ট এ জমা করা হয়।
২০১৯ সালের ২৮ মে, মুর্তজা আলী ইবিএল চাঁদগাঁও শাখায় একটি চিঠি পাঠান। এই চিঠিতে, গ্রাহক তার স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ইবিএল থেকে ঋণ গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করেন। ২০১৯ সালের ২৮ মে চিঠিটি গ্রহণের পর, শাখা ব্যবস্থাপক ৩ জুন ২০১৯ ও ৯ জুন ২০১৯ তারিখে (দুই দফায়) গ্রাহকের নিবন্ধিত ইমেইলে উত্তর প্রদান করেন। পরবর্তীতে, ১০ জুন ২০১৯ তারিখে ইবিএলের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধানও গ্রাহককে পৃথকভাবে ইমেইলের মাধ্যমে উত্তর প্রদান করেন।
এই ঋণের বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে অবগত হওয়া সত্ত্বেও পরবর্তীতে মুর্তজা আলী ঋণ গ্রহণের বিষয়টা অস্বীকার করেন এবং দাবি করেন যে উক্ত ঋণসমূহ ব্যাংক এর শাখা কর্মকর্তা অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে নিয়মবহির্ভূতভাবে অনুমোদন ও উত্তোলন করেছে। তিনি আরো দাবি করেন যে, ঋণ উত্তোলন ছাড়াও তার অগোচরে ইবিএল সঞ্চয়ী একাউন্ট হতে আরও কিছু অবৈধ লেনদেন পরিচালিত হয়েছে। পরবর্তীতে মুর্তজা আলী ২০১৯ সালের ২৮ মে ইবিএল-এ চিঠি পাঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন। বরং, তিনি দাবি করেন যে চিঠিটি তার দ্বারা ইস্যু করা হয়নি এবং নথিতে থাকা স্বাক্ষরটি সঠিক নয়। এছাড়া তিনি ইবিএল থেকে কোনো ঋণ গ্রহণের বিষয়টিও অস্বীকার করেন এবং অভিযোগ করেন যে ব্যাংকের কর্মীরা তার সম্মতি ব্যতিরেকেই প্রতারণামূলকভাবে ঋণ বিতরণ করেছেন।
২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগকারী চিঠি এবং আইনি নোটিশ এর মাধ্যমে ব্যাংক এ তার দাবি জানান। এর প্রতিউত্তরে ব্যাংক প্রতিটি সময় যথাযথ প্রদান করে। ২০১৯ সালে মুর্তজা আলীর অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাংক এর নিরীক্ষা বিভাগ কর্তৃক দুই দফায় তদন্ত করা হয়। তদন্তসমূহে গ্রাহকের একাউন্ট লেনদেন ও ঋণ সম্পর্কিত কোনো প্রকার অনিয়মের প্রমান মেলেনি। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, মুর্তজা আলীর অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২৪ সালে পুনরায় বাংলাদেশ ব্যাংক ঘটনাটি তদন্ত করে যেখানে সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাইপূর্বক কোনো অনিয়ম পায়নি।
মুর্তজা আলী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে ব্যাংক এর উপরে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও মামলার ভয় দেখিয়ে তার গ্রহণকৃত ঋণ অস্বীকারের চেষ্টা করে চাপ সৃষ্টি করে। ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশ ব্যাংক এর নিবন্ধিত শিডিউল ব্যাংক হওয়ায় আইন বহির্ভূত কোনোকিছু করার সুযোগ নাই। এই পরিস্থিতিতে মুর্তজা আলী হুমকি দেন যে, তার ঋণ দায় লাঘব করে টাকা ফেরত না দিলে তিনি ব্যাংক এর পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন কিন্তু ইস্টার্ন ব্যাংক তার অবৈধ চাপে নতি স্বীকার না করায় ব্যাংক এর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য গতকাল চট্টগ্রামে ব্যাংক এর পরিচালক পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কমিটিকে জড়িয়ে এই মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত এই বিষয়ে এখনো কোনো আদেশ প্রদান করেন নাই।
প্রাসঙ্গিকভাবে আমরা উল্লেখ করতে চাই যে, বিগত ২০১৭ সালে ইবিএল চাঁদগাওঁ শাখার কিছু গ্রাহকের একাউন্ট হতে অর্থআত্মসাৎ বিষয়ক অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক সত্যতা পাওয়া যায় যে ব্যাংকের উক্ত শাখার একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা বহিরাগত প্রতারকদের সাথে যোগসাজশ করে অর্থ আত্মসাতে জড়িত ছিল। এই ঘটনার বিষয়ে ব্যাংক অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং দোষী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে আদালত তাদের দোষী সাব্যস্ত করে কারাদ-সহ আর্থিক জরিমানা প্রদান করেন। সাম্প্রতিককালে, মুর্তজা আলীর সঙ্গে উক্ত মামলার প্রধান আসামি ইফতেখারুল কবিরের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। কারণ ইফতেখারুল কবিরের ব্যাংক একাউন্ট হতে মুর্তজা আলীর ব্যাংক একাউন্ট এ টাকা স্থানান্তরের প্রমান পেয়েছে। ব্যাংক এ বিষয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
বর্তমান মামলাটি ঘটনার প্রায় আট বছর পর দায়ের করা হয়েছে, এতে ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি.-এর পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের অন্যায়ভাবে জড়ানো হয়েছে, যদিও তাদের সঙ্গে ২০১৭ সালের ঘটনার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী গ্রাহকের দৈনন্দিন লেনদেনের সাথে ব্যাংক এর পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের কোনো ধরণের সম্পৃক্ততা থাকে না।