অযোধ্যা মামলার রায়
বিতর্কিত জমি পেল রামমন্দির, বিকল্প জমিতে বাবরি মসজিদ
-
-
|

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট, ছবি: সংগৃহীত
১৬শ শতাব্দীর বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয় ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। ২৭ বছর ধরে মামলা চলার পর, ভারতের শীর্ষ আদালত শনিবার (৯ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সাড়ে ১০টার পর অযোধ্যা মামলার বিতর্কিত ২ দশমিক ৭৭ একর জমির রায় দিল রাম মন্দিরের পক্ষে এবং মসজিদের জন্য ৫ একর বিকল্প জমি দেওয়া হলো সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে।
৫০০ বছরের বিতর্ক এবং ১৩৫ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর ভারতের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ মামলার রায় দিল ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ের জন্য প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি অশোক ভূষণ, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, এসএ বোবদে এবং এস আবদুল নাজির।
এই রায়ের আগে অর্থাৎ শুনানির শেষ দিনে হিন্দু মহাসভার তরফে আদালতে জমা পড়েছিল ব্রিটিশ আমলে অযোধ্যার জমির নকশার কপি। সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী রাজীব ধাওয়ান জিজ্ঞেস করে এটা দেখে আমি কি করবো? তখন বিচারপতি বলেন আপনার যা খুশি তাই করুন। এরপরই রাজীব ধাওয়ান ওই রির্পোটি ছিঁড়ে ফেলায়, তা চরমে পৌঁছায়।
অযোধ্যার জমির অধিকার নিয়ে হিন্দু-মুসলিম দুই পক্ষেরই দীর্ঘদিনের বিবাদ ছিল। হিন্দু পক্ষের দাবি ছিল বাল্মীকির লেখা রামায়ণে অযোধ্যাই রামের জন্মস্থান। এই জমিতেই রামের জন্ম হয় বলে যুগ যুগ ধরে মানুষ বিশ্বাস করে আসছিল। এতে মুসলিম পক্ষের যুক্তি ছিল, বাল্মীকি রামায়ণে ঐতিহাসিক কোনো ভিত্তি নেই। আদালতে কীভাবে প্রমাণ করা যাবে যে এটাই রামের জন্মস্থান?
এরপর হিন্দুপক্ষ দাবি করে, অযোধ্যার জমিতে মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি হয়েছে। মুসলিম পক্ষের পাল্টা দাবি ছিল, মন্দির ছিল তার কোনো প্রমাণ নেই। সে কারণে ১৮৮৫ সালেও আদালত মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেয়নি।
এরপরই হিন্দুরা রামায়ণ মাফিক রাম জন্মভূমির দাবি তোলে। হিন্দুদের যুক্তি এএসআই'র (আরকিউলজিক্যল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া) রিপোর্টে মন্দিরের অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে। শিব, পদ্মফুলের মত যে প্রতিকৃতি পাওয়া গেছে তা প্রমাণ করে ওই জমিতেই মন্দির ছিল। মুসলিম পক্ষের দাবি ছিল এসব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তৈরি। এএসআই রিপোর্টের বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই। পদ্মফুলের প্রতিরূপ ইসলামেও দেখা যায়।
হিন্দু পক্ষের দাবি ছিল বাবরের আত্মজীবনীতেও বাবরনামায় অযোধ্যায় মসজিদের উল্লেখ নেই। মুসলিম পক্ষের আইনজীবীদের পাল্টা যুক্তি, বাবরনামার ২য় ভাগের কিছু পাতা, বহু বছর আগে হারিয়ে যায়। সে কারণে তাতে মসজিদের উল্লেখ ছিল।
এরপর হিন্দু পক্ষের দাবি ছিল, অযোধ্যায় যে কাঠামো ছিল তা মসজিদের কাঠামো নয়। কারণ, সেখানে ওজু করার জায়গা ছিল না। মুসলিম পক্ষের দাবি বিতর্কিত জমিতে নমাজ পড়া হত। নামাজের আগে ওজু করার জায়গাও ছিল। এরকমই নানা প্রশ্নের অবসান ঘটল সুপ্রিম কোর্টের এই রায় দানের মধ্য দিয়ে।
এর আগে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে অযোধ্যা মামলার রায় দিয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। অযোধ্যার জমি তিনটি পক্ষকে সমানভাবে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তিনপক্ষ ছিল হিন্দু সংগঠন নির্মোহি আক্রা, রামলালা ও সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। কিন্তু কোনো পক্ষই তা না মানায় সেই মমলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে।
তবে শীর্ষ আদালত বার বার চেষ্টা করেছিল মীমাংসা যেনো আদালতের বাইরে হয়। এজন্য ৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এফএম ইব্রাহিম কলিফুল্লাহ, আধ্যাতিক গুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর ও আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চুকে নিয়ে মধ্যস্থতা প্যানেল তৈরি করা হয়। দু‘পক্ষের আলোচনায় মধ্যস্থতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় ২র অগাস্ট শীর্ষ আদালত জানায়, ৬ অগাস্ট থেকে মামলার নিয়মিত শুনানি হবে। এরপরই আজ এই রায় দিলেন ভারদের সুপ্রিম কোর্ট।