কবিতা ও কলকাতা

  • তৌফিক জহুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতায় ড. মাহফুজ পারভেজ (পেছনে) ও কবি তৌফিক জহুর, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর

কলকাতায় ড. মাহফুজ পারভেজ (পেছনে) ও কবি তৌফিক জহুর, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর

বৃষ্টিস্নাত দুপুরে কল্লোলিনী কলকাতার প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী স্ট্রিটে দেখা হলো ২২ বছর পর তার সঙ্গে। তিনি ড. মাহফুজ পারভেজ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের কন্ট্রিবিউটিং এডিটর।

তিনি আমার কাছে বড়ো ভাই ও কবি, সম্পাদক, গদ্য লেখক। আমরা মাটির পেয়ালার ধূমায়িত চায়ে চুমুক দিতে দিতে হারিয়ে গেলাম আশি ও নব্বই দশকের ঢাকার ফেলে আসা দিনগুলোতে। কাব্য ও স্বপ্নের সরণীতে আমাদের ঘিরে নস্টালজিক ছায়া প্রলম্বিত হলো কলকাতা, ঢাকা, বাংলায়।

২২ বছর আগে শেষ দেখার স্মৃতি চলে এলো সামনে। ঢাকার মোহাম্মদপুরে প্রয়াত সচিব আজহার সাহেবে দাওয়াতে আমন্ত্রিত হয়ে একটি বিয়েতে প্রয়াত কবি ইউসুফ পাশা, কবি-সাংবাদিক জামাল উদ্দিন বারী, কবি মাহফুজ পারভেজ ও আমি নৈশভোজে অংশ নেই। তারপর আর মাহফুজ পারভেজ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়নি। তিনি তখন স্থায়ীভাবে চট্টগ্রামের কর্মস্থলে।

বিজ্ঞাপন

কখনো কখনো ফোনে কথা হয়, দেখা হয় না। ঢাকায় দেখা হওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে গেল তীব্র নগরায়নের তাণ্ডবে, ব্যস্ততা ও অবস্থানের দূরত্বের কারণে। তবু তিনি ছিলেন জীবনের সোনালি-রুপালি অধ্যায়ের অনেকটুকু জুড়ে।

অকস্মাৎ তার সঙ্গে দেখা হলো কলকাতায়। এসপ্ল্যানেড পেরিয়ে টিপু সুলতান মসজিদের পথে বৃষ্টিস্নাত চৌরঙ্গী-ধর্মতলার সঙ্গমস্থলে। বৈরী প্রকৃতি ও বিচিত্র পরিবেশ আমাদের পারস্পরিক মিলনকে বিঘ্নিত করতে পারেনি মোটেও।

দিল্লি থেকে উড়ে এসেছেন তিনি ভোরে। কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে সকালের মুখেই নেমেছেন কলকাতার পথে। আমরা কথা বললাম কবিতা নিয়ে। বাংলা সাহিত্য নিয়ে। চট্টগ্রামে যাবার দাওয়াত দিলেন তিনি। প্রিয়জনের আবেগ ও ভালোবাসায় জড়ানো আমন্ত্রণ হৃদয় ছুঁয়ে গেল।

বিজ্ঞাপন

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন কবি ও অধ্যাপক তার সঙ্গে দেখা করার জন্য দক্ষিণ কলকাতা থেকে রওয়ানা দিয়েছেন। অচীরেই উষ্ণ হলো আড্ডা আরও কয়েক জনের উপস্থিতিতে। কে.সি. দের বিখ্যাত মিষ্টান্ন বিপণী সাক্ষী হয়ে রইল আলাপ ও সংলাপের।

ঘটনাক্রমে কলকাতায় সেদিন উৎসবের বার্তা ছড়িয়ে পড়েছিল। দিনটি ছিল মহালয়ার। রাস্তায় ভয়াবহ জ্যাম। সব বিড়ম্বনা অগ্রাহ্য করে আমরা রইলাম কবিতার অতল অলিন্দে। আমার দু’টি কাব্য গ্রন্থ (তৃষ্ণার্ত চোখের আকুতি এবং পাখি বিক্রি কাহিনি) মাহফুজ ভাইকে দিলাম। কবিতা নিয়ে কথা চলতেই থাকল।

চলে আসার আগে কবিতা ও কলকাতার স্মৃতি ফ্রেমবন্দী হলো। পেছনে রইল কলকাতার পিয়ারলেস হাউস সংলগ্ন প্রসারিত এভিনিউ। ২২ বছর পর আবার এক ফ্রেমে কবিতার জন্য এই সম্মিলনী কলকাতাকে জাগ্রত রাখল স্মৃতির পাতায়। জীবনের অবারিত স্রোতে কবিতা এভাবেই মিশে থাকে।