নামের শুরুতে হজরত শব্দ ব্যবহার কী সঠিক?

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কারো নামের শুরুতে হজরত শব্দ ব্যবহারে সমস্যা নেই, ছবি: সংগৃহীত

কারো নামের শুরুতে হজরত শব্দ ব্যবহারে সমস্যা নেই, ছবি: সংগৃহীত

‘হজরত’ আরবি শব্দ। অর্থ- নৈকট্য, মহাশয়, নেতা, জনাব। এটা একটি সম্মানসূচক উপাধি। সম্মানিত কোনো মানুষের নামের পূর্বে সম্মানার্থে ব্যবহৃত সম্মানসূচক সম্বোধন বিশেষ।

আরবি ভাষায় ‘হজরত’ শব্দের ব্যবহার বহূ আগে থেকেই চালু আছে। যেমন ইমাম জাহাবি, হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.) প্রমুখ বিদ্বানগণ সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্বোধনের ক্ষেত্রে এ শব্দ ব্যবহার করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বস্তুত প্রত্যেক দেশের প্রচলিত সর্বোচ্চ সম্মানসূচক শব্দ হজরত নবী করিম (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের নামের পূর্বে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর আরব দেশে উপনাম দিয়ে ডাকাকে সম্মানসূচক মনে করা হয়। যেমন আবুল কাসেম, আবু হুরায়রা ও আবু হাফছ ইত্যাদি।

বর্তমানে নামের শুরুতে শায়খ, সাইয়্যেদ ইত্যাদি শব্দে সম্বোধন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

একইভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে নামের শুরুতে জনাব, হজরত, হুজুর ও মাওলানা ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়। এটা সম্মানসূচক সম্বোধন।

আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ‘পরস্পরকে মন্দ নামে ডাকতে নিষেধ করেছেন।’ -সূরা হুজুরাত: ১১

অতএব প্রচলিত উত্তম উপাধি কিংবা সম্বোধন দ্বারা কোনো মানুষকে আহবান করায় কোনো দোষ নেই। তবে যদি কেউ এর দ্বারা মন্দ অর্থ গ্রহণ করেন, সেজন্য তিনি দায়ী হবেন। যেমন মদিনায় মুসলমানরা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে ‘রায়িনা’ বলতেন। -সূলা বাকারা: ১০৪

কিন্তু ইহুদিরা সেটা বলত গালি অর্থে। আরবিতে রায়িনা শব্দের অর্থ ‘অন্যকে রক্ষা করা বা দেখাশোনা করা। কিন্তু হিব্রু ভাষায় এ শব্দের অর্থ হলো- বোকা। এ জন্যে কোরআনে কারিমে এ নির্দেশ দেওয়া হয় যে, রায়িনার পরিবর্তে মুসলমানরা যেন উনযুর না বলে। ‘উনযুর না’ শব্দের অর্থ হলো- আমাদের দিকে লক্ষ্য করুন।

এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইসলাম বড়দের সঙ্গে ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার সময় উপযুক্ত শব্দ ব্যবহার এবং সম্মান প্রদর্শন ও আদব-কায়দা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়। একইসঙ্গে যেসব কাজ ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি উপহাস কিংবা অবমাননার সুযোগ করে দেয় এবং শত্রুদেরকে অপব্যাখ্যার সুযোগ দেয়, সেসব কাজ থেকে মুসলমানদেরকে বিরত থাকতে হবে।

যেমন মুসলমানরা ‘রব’ বলতে আল্লাহতায়ালাকে বুঝেন, কিন্তু ফেরাঊন ‘রব’ বলতে নিজেকে বুঝিয়েছিল। -সূরা নাজিয়াত: ২৪

কোরআনে আল্লাহকে ‘মাওলানা’ (আমাদের প্রভু) বলা হয়েছে। -সূরা বাকারা: ২৮৬ ও –সূরা তওবা: ৫১

কিন্তু বান্দার ক্ষেত্রে ‘মাওলা’ বন্ধু বা গোলাম বা অভিভাবক অর্থে ব্যবহৃত হয়।

‘মৌলভী’ অর্থ দুনিয়াত্যাগী, বড় আলেম, পণ্ডিত ও অধ্যাপক ইত্যাদি।

ভারতীয় উপমহাদেশে সম্মানসূচক সম্বোধন হিসেবে ‘মাওলানা’ (আমাদের অভিভাবক) বলা হয়ে থাকে।

‘শরিফ’ অর্থ সর্বোচ্চ সম্মানিত। সে অর্থে কোরআন শরিফ, কাবা শরিফ ইত্যাদি বলা হয়। এমতাবস্থায় কেউ এমন সম্মানিত নয়, এমন স্থানকে বা কোনো কবরকে ‘শরিফ’ বলেন, তার জন্য তিনি দায়ী। কিন্তু সেজন্য কোরআনে কারিমকে কোরআন শরিফ বলা যাবে না, এমনটি নয়। একইভাবে জনাব, হুজুর, মাওলানা, হজরত ইত্যাদি শব্দ সম্মানসূচক অর্থে ব্যবহার করায় কোনো দোষ নেই।