ডাক্তার কর্তৃক ওষুধের স্যাম্পল গ্রহণ প্রসঙ্গে ইসলাম

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি, ছবি: সংগৃহীত

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি, ছবি: সংগৃহীত

ওষুধ কোম্পানিগুলো ডাক্তারদের শুভেচ্ছাস্বরূপ কিছু ওষুধের স্যাম্পল দিয়ে থাকেন। এগুলো গ্রহণ করা নিয়ে ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- ওষুধ কোম্পানির পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের যেসব ওষুধ বা ওষুধের স্যাম্পল দেওয়া হয়, তা যদি এমন হয় যে; ওষুধটি সম্প্রতি বাজারে এসেছে এবং চিকিৎসককে এটি দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো- এই ওষুধের সঙ্গে পরিচিতি এবং এর গুণগত মান ও কার্যকরিতা যাচাই করা, তাহলে চিকিৎসকের জন্য ওষুধটি নেওয়া জায়েজ। এমন ওষুধ চিকিৎসক নিজেও ব্যবহার করতে পারবেন এবং নিজের পরিবারের লোকদের দিতে পারবেন। তেমনি অন্য যে কোনো রোগীকেও বিনামূল্যে দিতে পারবেন। কিন্তু এসব ওষুধ বিক্রি করে নিজে এর মূল্য ভোগ করা বৈধ হবে না।

উপরোক্ত প্রকারের ওষুধ ছাড়া আরও যেসব ওষুধ কোম্পানির পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের দেওয়া হয়, যেগুলো আগে থেকেই বাজারে চালু আছে এবং সেগুলোর ব্যাপারে নতুন করে অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রয়োজন নেই। চিকিৎসকের জন্য এ ধরনের ওষুধ গ্রহণ করা জায়েজ নয়।

বিজ্ঞাপন

কেননা চিকিৎসকদের তারা এ ওষুধগুলো আর্থিক সুবিধাস্বরূপ দিয়ে থাকেন। যাতে করে চিকিৎসক রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে তাদের ওষুধের নাম লেখেন। এজন্য অনেক চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে দেখা যায়, রোগী চেম্বার থেকে বের হওয়ার পর ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা রোগীর ব্যবস্থাপত্র চেক করে দেখে- চিকিৎসক তাদের ওষুধের নাম লিখেছেন কি না। এ থেকে সুস্পষ্ট হয়, এটি ইসলামি শরিয়তে নিষিদ্ধ ঘুষের শামিল।

অবশ্য কোনো চিকিৎসক যদি তাদেরকে স্পষ্ট বলে নেন যে, আমি তোমাদের ওষুধ গ্রহণ করব না। তবে তোমরা চাইলে গরীব রোগীদের দেওয়ার জন্য দিতে পার, আর কোম্পানির প্রতিনিধি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে বিলি করার জন্য তাকে ওষুধ প্রদান করে এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চিকিৎসককে তাদের ওষুধ লেখার জন্য চাপ না দেওয়া হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি ওষুধগুলো গ্রহণ করে মানুষের মাঝে বিতরণ করতে পারবেন। -মাআলিমুস সুনান: ৪/১৬১

বিজ্ঞাপন

ওষুধ কোম্পানি কর্তৃক ডাক্তারদের ওষুধের পাশাপাশি নগদ টাকা বা অন্যকোনো জিনিস উপঢৌকন হিসেবে দেওয়া-নেওয়া নিয়ে ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- ডাক্তার যদি উপঢৌকনের প্রত্যাশায় রোগীর উপকারের প্রতি লক্ষ্য না রেখে রোগীর জন্য অন্য কোম্পানির অধিক কার্যকর ও ফলদায়ক ওষধ থাকা সত্ত্বেও গিফট প্রদানকারী কোম্পানির নিম্নমানের ওষধ দেয়- তাহলে ডাক্তারদের জন্য কোম্পানি কর্তৃক প্রদেয় গিফট গ্রহণ করা জায়েজ হবে না এবং রোগীদের সঙ্গে হবে চরম বিশ্বাসঘাতকতা।

তবে ডাক্তাররা যদি রোগীর উপকারের প্রতি পূর্ণ খেয়াল রেখে আমানতদারীর সঙ্গে প্রেসক্রিপশন করে যা বাস্তবিকই তার প্রয়োজন। আর এতে সে কোনো ধরনের প্রতারণার আশ্রয় না নেয়, তাহলে ডাক্তারদের জন্য কোম্পানি কর্তৃক প্রদেয় উপঢৌকন গ্রহণ করা জায়েজ হবে।

আরেকটি বিষয় হলো- বিভিন্ন ল্যাবরেটরী, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা অন্যান্য টেস্ট সেন্টারে রোগী পাঠানোর বিনিময়ে ডাক্তারদের জন্য কমিশন গ্রহণ প্রসঙ্গ।

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি
হাসপাতাল কিংবা ডাক্তারের চেম্বারের সামনে এমন দৃশ্য নিত্যদিনের, ছবি: সংগৃহীত

 

কারণ, ডাক্তারের দায়িত্ব হলো- রোগীর জন্য প্রযোজ্য চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা। রোগ শনাক্তের জন্য ডাক্তাররা রোগীর যে মেডিকেল টেস্টগুলো করিয়ে থাকেন তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব (রোগ নির্ণয় করে প্রেসক্রিপশান দেওয়া) যথাযথভাবে আদায়ের সুবিধার্থে। এক্ষেত্রে কোন জায়গা থেকে পরীক্ষাগুলো করালে ভালো হবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া ডাক্তারেরই পেশাগত দায়িত্ব। তিনি নির্ধারিত ভিজিটের বিনিময়ে এ কাজগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে করে দেবেন।

উপরোক্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে একথা প্রমাণিত হয় যে, মেডিকেল টেস্টে রোগী প্রেরণকারী ডাক্তারের জন্য কমিশন গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। কারণ ডাক্তার আগেই প্রয়োজনীয় কাজের জন্য রোগীর কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেছেন। তাই ল্যাব বা হাসপাতাল কর্তৃক ডাক্তারদের প্রদত্ত কমিশন শরিয়ত নিষিদ্ধ বিষয়, এটা উৎকোচের নামান্তর। -ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৩/৪১০, ফাতাওয়া রশিদিয়া: ৫৫৮

তবে কোনো কোনো ইসলামি স্কলার নিম্নবর্ণিত শর্ত সাপেক্ষে কমিশন জায়েজ বলেছেন। শর্তগুলো হলো-

১. রোগীকে কোনো অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করানোর জন্য প্রেসক্রিপশন করা যাবে না।
২. নির্দিষ্ট কোনো ক্লিনিক, ল্যবরেটরী বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করানোর জন্য রোগীকে বাধ্য করা যাবে না।
৩. ডাক্তারদের কমিশন প্রদানের কারণে রোগী থেকে টেস্টের মূল্য বেশি নিতে পারবে না।
৪. ডাক্তারদের টেস্ট সেন্টার সম্পর্কে রোগীর উন্নত পরীক্ষা ও ভালো সেবা-শুশ্রুষা হওয়ার ব্যাপারে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
৫. কমিশনের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট হতে হবে।

এসব শর্তের প্রতি লক্ষ্য না রাখলে টেস্ট সেন্টার কর্তৃক প্রদেয় কমিশন গ্রহণ করা জায়েজ হবে না, বরং তা ঘুষ হিসেবে বিবেচিত হবে।

অবশ্য বিভিন্ন ছোটখাট স্টেশনারি সামগ্রী নেওয়া যেতে পারে। যেমন- কলম, প্যাড ইত্যাদি। এগুলোতে ঔষধ কোম্পানির ট্রেডমার্ক এবং উৎপাদিত পণ্যের ট্রেড ন্যাম ছাপানো থাকে। মূলত এগুলো কোম্পানির বিজ্ঞাপনের কাজ দেয়। আর এগুলো বিক্রি করে টাকাও উপার্জন করা যায় না। তাই এসব বিবেচনায় স্টেশনারি সামগ্রী গ্রহণ করা বৈধ।