ঋতুস্রাব অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত নয়
প্রতি মাসে মেয়েদের ঋতুস্রাব একটি স্বাভাবিক বিষয়। যৌবনপ্রাপ্ত নারীদের মাসিক ঋতুস্রাবকে হায়েজ বলে। হায়েজের সময় সহবাস, নামাজ, রোজা, কোরআন স্পর্শসহ অনেক ইবাদত-বন্দেগি নিষিদ্ধ।
ঋতুস্রাব অবস্থায় নারীদের জন্য কোরআন মজিদ তেলাওয়াত করা, শিক্ষা দেওয়া ও স্পর্শ করা কোনোটিই জায়েজ নয়। এমনকি এক আয়াত এক আয়াত করেও পড়া যাবে না। তাই যে সব নারী কোরআন মজিদ শেখা ও শেখানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা অপবিত্রতার সময় তা থেকে বিরত থাকবেন। প্রয়োজনে অন্য নারী দ্বারা কাজ সমাধা করে নেবেন। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে তারা কেবল শিার্থীদের পড়া শুনতে পারবেন এবং প্রয়োজনের সময় দু-এক শব্দ বলে দিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে পূর্ণ আয়াত একত্রে তেলাওয়াত করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত হাসান বসরি (রহ.) ও হজরত কাতাদা (রহ.) বলেন, ঋতুমতি নারী ও যার ওপর গোসল ফরজ হয়েছে সে কোরআনের কোনো অংশই পড়বে না। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ১৩০২
এ ছাড়া হজরত উমর (রা.), হজরত জাবের (রা.) ও হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.), ইবরাহিম নখয়ি (রহ.) প্রমুখ সাহাবা ও তাবেয়িন থেকেও এ ব্যাপারে বহু হাদিস ও আসার বর্ণিত হয়েছে। এসব দলিলের আলোকে ইসলামি স্কলাররা বলেন, ঋতুমতি নারীদের জন্য এক আয়াত পরিমাণও পড়া জায়েজ নয়। এমনকি কোরআন শেখানোর উদ্দেশ্যেও জায়েজ নয়।
সুতরাং কোরআনে কারিম শেখা-শেখানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত নারী স্রাবের দিনগুলোতে কোরআন তেলাওয়াত থেকে বিরত থাকবেন। অবশ্য একান্ত প্রয়োজন হলে পূর্ণ আয়াত তেলাওয়াত না করে এক-দুই শব্দ করে বলে দিতে পারবেন।
তবে ঋতুস্রাব অবস্থায় নারীরা হাদিসে বর্ণিত দোয়া, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল ইত্যাদি পড়তে পারবেন।
বর্তমানে ঔষধ সেবনের মাধ্যমে সাময়িকভাবে মাসিক স্রাব বন্ধ করে রাখা যায়। তাই অনেক নারী রমজান মাসের সবগুলো রোজা রাখার জন্য ঔষধ সেবনের মাধ্যমে স্রাব বন্ধ করে রাখেন। অনেকে আবার হজ পালনকালীন সময়েও ঔষধ সেবন করে হায়েজ বন্ধ রাখেন। যেন হজের আমলগুলো কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়া শেষ করা যায়।
এ বিষয়ে ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, ঔষধ সেবনের কারণে হলেও একজন নারী যতক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে অর্থাৎ তার মাসিক স্রাব চালু না হবে ততক্ষণ তাকে নামাজ-রোযা করে যেতে হবে এবং এ অবস্থায় সে কাবা শরিফ তাওয়াফও করতে পারবে। আর সে যেহেতু পবিত্র অবস্থাতেই নামাজ-রোজা ইত্যাদি পালন করছে তাই পরবর্তীতে তাকে এ সময়ের নামাজ-রোজার কাজা করতে হবে না। আর এ জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করতে নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু এটি কোনো উত্তম পন্থা নয়। বিশেষ প্রয়োজন না হলে স্বাভাবিক নিয়মে চলাই উচিত। এক্ষেত্রে ঔষধ ব্যবহারের পূর্বে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।