রমজানে প্রতিদিন ২০ বার সুগন্ধি ধূপ দেওয়া হয় মসজিদে হারামে

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হাজরে আসওয়াদ, ছবি: সংগৃহীত

হাজরে আসওয়াদ, ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের ইতিহাসে মসজিদে সুগন্ধি ব্যবহারের রীতি বেশ পুরোনো। সেই ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে মসজিদে হারাম ও পবিত্র কাবাঘরে প্রতিদিন কয়েকবার করে উন্নতমানের সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়। বিশেষ উপলক্ষ ছাড়াও পবিত্র রমজান মাস, হজ ও প্রতি শুক্রবারে মসজিদে হারামে সুগন্ধি ও ধূপ ব্যবহার করা হয়।

জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগের বিশেষ তত্ত্বাবধানে ২০ মিনিটের মধ্যে সুগন্ধি ও ধূপায়নের প্রতি পর্বের কাজ সম্পন্ন হয়। কাবা প্রাঙ্গণের হাজরে ইসমাইল, আল-মুলতাজাম, হাজরে আসওয়াদ, রুকনে ইয়ামানি, মাকামে ইবরাহিমসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক পবিত্র স্থানে সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

মসজিদের পরিচালনা বিষয়ক পরিষদ রমজান মাসে প্রতিদিন উচ্চমানের উদ ধূপ দিয়ে মসজিদে হারামের ফ্লোরগুলো সুগন্ধিময় করে।

সৌদি সংবাদ সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, মসজিদের পরিবেশ সুগন্ধযুক্ত রাখতে প্রতিদিন ২০ বার ধূপ জ্বালানো হয়। আগতরা সারাক্ষণ সুগন্ধিময় পরিবেশে তাওয়াফ, নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত এবং ইবাদত-বন্দেগি করেন।

বিজ্ঞাপন

ধূপ দেওয়ার জন্য বিশেষ কর্মী রয়েছে। তারা সোনালী রঙের পাত্রে ধূপ দিয়ে থাকেন। এছাড়া প্রতি ওয়াক্ত নামাজের আগে হাজরে আসওয়াদ, মুলতাজাম এবং রুকনে ইয়ামানিতে উদের সুগন্ধি লাগানো হয়।

নবী কারিম (সা.) যুগ থেকেই মসজিদে সুগন্ধি ব্যবহারের ঐতিহ্য চলে আসছে। হজরত উবাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (উবাদা ও তার পিতা) হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)-এর কাছে এলাম। তখন তিনি তার মসজিদে ছিলেন এবং মাত্র একটি কাপড় গায়ে দিয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। এটা দেখে আমি লোকদের ওপর দিয়ে একেবারে সামনে তার ও কেবলার মাঝখানে গিয়ে বসলাম।

সুগন্ধির জন্য ধূপ দেওয়ার দৃশ্য, ছবি: সংগৃহীত

অতঃপর আমি বললাম, আল্লাহ আপনার প্রতি দয়া করুন। আপনি একটিমাত্র কাপড় পরিহিত অবস্থায় নামাজ আদায় করছেন। অথচ আপনার পাশেই আপনার চাদর আছে। এ কথা শুনে তিনি আঙুলগুলো প্রশস্ত করে সেগুলো কামানের মতো বাঁকা করে আমার বুকের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, আমার ইচ্ছা ছিল যে তোমার মতো কোনো নির্বোধ লোক আমার কাছে এসে আমি যা করছি তা প্রত্যক্ষ করবে।

অতঃপর সেও অনুরূপ আচরণ করবে। শুনো, একবার হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘ইবনু ত্বাব’ নামের খেজুরগাছের একটি ডাল হাতে আমাদের এ মসজিদে এসেছেন এবং মসজিদের পশ্চিম দিকে কফ দেখতে পেয়ে তিনি ডাল দ্বারা ঘষে তা পরিষ্কার করলেন। এরপর তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, তোমাদের কে চায় যে আল্লাহ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন? হজরত জাবির (রা.) বলেন, এতে আমরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে গেলাম। তারপর তিনি আবার বলেন, তোমাদের কেউ পছন্দ করবে কি যে আল্লাহতায়ালা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন? তিনি বলেন, এবারও আমরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেলাম, তৎপর আবার তিনি বলেন, তোমাদের কে চায় যে তার থেকে আল্লাহতায়ালা তার মুখ ফিরিয়ে নেন? জবাবে আমরা বললাম, না! হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কেউ এমনটি কখনোই প্রত্যাশা করে না।

এরপর তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন নামাজে দাঁড়ায়, তখন আল্লাহতায়ালা তার মুখোমুখি থাকেন। সুতরাং মুসল্লি যেন সম্মুখের দিকে কিংবা ডান দিকে থুথু না ফেলে; বরং সে যেন বাঁ দিকে বাঁ পায়ের নিচে থুথু ফেলে আর যদি ত্বরিত কফ চলে আসে তবে সে যেন কাপড়ের ওপর এভাবে থুথু ফেলে এবং পরে যেন এক অংশকে অন্য অংশের ওপর এভাবে গুটিয়ে নেয়। অতঃপর হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার কাছে সুগন্ধি নিয়ে আসো। তখন আমাদের গোত্রের একজন যুবক দ্রুতগতিতে উঠে দৌড়িয়ে তার গৃহে গেল এবং হাতের তালুতে করে সুগন্ধি নিয়ে এলো। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার থেকে সুগন্ধি নিয়ে ডালের মাথায় মেখে কফের দাগ ছিল সেটাতে তা লাগিয়ে দিলেন। হজরত জাবির (রা.) বলেন, এখান থেকেই তোমরা তোমাদের মসজিদে সুগন্ধি মাখতে শিখেছ। -সহিহ মুসলিম: ৭৪০৪