হজ এজেন্সি এবং যাত্রীরা যেভাবে উপকৃত হন, সেভাবেই হাব পরিচালিত হবে
-
-
|

হাফেজ মাওলানা নূর মোহাম্মদ, ছবি: বার্তা২৪.কম
সুষ্ঠু ও সুন্দর হজ ব্যবস্থাপনার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হজ এজেন্সিসমূহ এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আসন্ন হাব নির্বাচনে ‘হাব ঐক্য কল্যাণ পরিষদ’ থেকে নির্বাচন করছেন দি সিটি ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার হাফেজ মাওলানা নূর মোহাম্মদ। বার্তা২৪.কম-এর সঙ্গে কথা বলেছেন হজ এজেন্সি ও হজযাত্রীদের কল্যাণসহ সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে।
‘হজ ব্যবস্থাপনায় হাবের ভূমিকা’ প্রসঙ্গে হাফেজ মাওলানা নূর মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর চতুর্থ হজযাত্রী প্রেরণকারী দেশ। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী প্রেরণের দিক থেকে সর্ববৃহৎ দেশ। ২০২৫ সালের হজে মোট নিবন্ধন করেছেন ৮৭ হাজার ১০০ জন যাত্রী। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ২০০ জন। অন্যসব হজযাত্রী বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন। এই যে বিপুল সংখ্যক হজযাত্রী হজপালনে যাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে এজেন্সিগুলোর ভূমিকা অপরিসীম।
পাশাপাশি এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাবের ভূমিকাও অনেক। হাব এখানে এজেন্সি ও সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে হজ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা দেয়। পাশাপাশি এজেন্সিগুলোর সুবিধা-অসুবিধাগুলো ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। ন্যায্য দাবিগুলো আদায়ের জন্য কাজ করে। এজেন্সিগুলোকে তাদের দায়দায়িত্ব সম্পর্কে হজযাত্রীদের প্রতি তাদের দায়িত্ব এবং হজযাত্রীদের অধিকারের ব্যাপারে সজাগ করে। এক কথায় একটি ভালো সুষ্ঠু ও সুন্দর হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এজেন্সিগুলো এবং সরকার ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাঝামাঝি থেকে হাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
‘প্রতিবছরই হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আসে। এই অনিয়ম বন্ধে হাবের কি কিছু করণীয় নেই’- এমন প্রশ্নের উত্তরে দি সিটি ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার বলেন, দেখুন, হজের সফর কিন্তু অন্য ধরনের। এখানে নির্দিষ্ট দিন মেনে যেতে হয়, দু’টি নিয়ম রাষ্ট্রের নিয়ম মেনে পরিচালনা করতে হয়। নির্দিষ্ট দিনে বাংলাদেশ থেকে রওনা এবং নির্দিষ্ট দিনে মক্কা-মদিনায় মুভমেন্ট, নির্দিষ্ট দিনে মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা। এসব কাজ করতে গেলে কখনো কখনো কারো কোনো কোনো বিষয় মনঃপূত নাও হতে পারে। তবে যৌক্তিক সেবা না পেলে অবশ্যই সেটা দোষের। কিন্তু একটু-আধটু অসুবিধার ক্ষেত্রে অনেক বড় অভিযোগ কাম্য নয়।
‘আপনারা রুট টু মক্কা বাতিলের দাবি করছেন কেন’, এমন প্রশ্নের উত্তরে হাফেজ মাওলানা নূর মোহাম্মদ বলেন, হজপালনে বাংলাদেশ থেকে যারা সৌদি আরব যান, বর্তমানে তাদের ইমিগ্রেশন ঢাকার আশকোনা হজক্যাম্পে হয়। এখান থেকেই হজযাত্রীদের লাগেজ ফ্লাইটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হজযাত্রীরা যখন সৌদি আরবের জেদ্দা বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তখন তাদের কাছে লাগেজ দেওয়া হয় না। হজযাত্রী যে বাসে করে মক্কার হোটেলে যান, সে বাসে লাগেজগুলো পাঠানো হয় না। লাগেজগুলো অন্য বাসে করে একটি হোটেলে নিয়ে রাখা হয়। একটি এজেন্সির সব হজযাত্রীকে রাখতে একাধিক হোটেলের প্রয়োজন হয়। ফলে হজযাত্রী হোটেলে উঠে লাগেজ পান না। অপরিচিত জায়গা হওয়ায় যে হোটেলে লাগেজ রাখা হয় সেটিও তারা চেনেন না। লাগেজ না পেয়ে হজযাত্রীরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। লাগেজ পেতে তারা চরম ভোগান্তির শিকার হন। হজযাত্রীদের এই ভোগান্তি থেকে রক্ষা করতে রুট টু মক্কা বাতিল করতে হবে। হজযাত্রীদের লাগেজ জেদ্দা বিমানবন্দরে বুঝিয়ে দিতে হবে। কিংবা তাদের সেবার মান বাড়াতে হবে, লাগেজ নিয়ে ভোগান্তি চলেব না।
‘বহুল আলোচিত হাব পল্লীর বিষয়টা কী, কেন এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না’, এমন প্রশ্নের উত্তরে হাব ঐক্য কল্যাণ পরিষদের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা নূর মোহাম্মদ বলেন, এজেন্সির মালিকদের নির্দিষ্ট এলাকায় বসবাসের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষে সাভারের ভাকুর্তায় জমি কেনা হয়। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই জমিটি কেনা হয়েছে। তার পরও এটা নিয়ে নানা কথা হয়েছে, প্রায় ৯ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ করা হয়েছে। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে এই হাব পল্লীর সমস্যা সামনে ঝুলিয়ে রেখে নির্বাচন করা হয়েছে, কিন্তু কেউ এটার সুরাহা করেনি। মাঝে সিদ্ধান্ত হয়, হাবের নামে ক্রয়কৃত জমির সমুদয় অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু কাজটা আর আগায়নি। জমিটা খন্ড খন্ড দাগে, সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। কিছু মাটিও ভরাট করা হয়েছে, সেখানে আমরা এবার পিকনিক করেছি। সরেজমিনে সদস্যরা জায়গাটি দেখেছেন। তার পরও নির্বাচনের আগে এটা নিয়ে একটি সন্তোষজনক একটি সমাধানের পরিস্থিতি হয়েছিল, কিন্তু অজানা কারণে তা আর হলো না। আমরা বলেছি, এবার সেই সমস্যার সমাধান করব- ইনশাআল্লাহ।
‘হজপালনে হজযাত্রীদের কোন দিকগুলোর ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন’- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হজপালনের যোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয় অর্থনৈতিক ও শারীরিক যোগ্যতা। সরাসরি এজেন্সির মাধ্যমে লেনদেন করা। দ্বিতীয়ত, অনেক বয়সে আমাদের দেশের লোকজন হজ করে থাকেন। আমি বলব, বেশি বয়সে গেলে হজের আনুষ্ঠানিকতা পালন করা কঠিন হয়। কারণ এটি শারীরিক ইবাদাত। তাই অর্থনৈতিকভাবে যারা স্বাবলম্বী তখনই তাকে হজে যেতে হবে। আর হজযাত্রার জন্য ধৈর্য থাকতে হবে। কষ্ট করার মতো মানসিকতা নিয়ে যেতে হবে। হজযাত্রা কিন্তু কোনো আনন্দ ভ্রমণ নয়।
‘নির্বাচনে আমাদের হাব ঐক্য কল্যাণ পরিষদ’ নির্বাচিত হলে হাবের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার স্বার্থে সব কাজ করব উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের প্যানেল থেকে নির্বাচনী যেসব ওয়াদা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো পূরণে কাজ করব। ২২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হবে। আশা করি, হজ এজেন্সি মালিকেরা আমাদের পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী করবেন। আমাদের প্যানেলে অভিজ্ঞ এবং হাব সদস্যদের পরীক্ষিত লোকগুলো একত্র হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এজেন্সি মালিকেরা যাতে সম্মানিত হন সেভাবে কাজ করব। এর বাইরে হজযাত্রীদের উড়োজাহাজ ভাড়া কমানো, হাব সদস্যগণ যেস উমরা কার্যক্রম পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে ও থার্ড ক্যারিয়ার চালুর বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করব।
এক কথায় হজ এজেন্সি এবং হজযাত্রীরা যেভাবে উপকৃত হন, সেভাবেই আগামী দিনের যাবতীয় কাজ করা হবে। আমরা সবার কাছে দোয়া চাই।