শবে বরাতের আমলের নকশা

  • মুফতি ওয়াহিদুল আলম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শবে বরাতের আমলের নকশা, ছবি: সংগৃহীত

শবে বরাতের আমলের নকশা, ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাত গুনাহ মুক্তি ও জান্নাত লাভের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। ১৪ শাবান সূর্যাস্তের পর থেকে যে আমলগুলো করা উচিত, সংক্ষিপ্ত পরিসরে তার একটি নকশা পেশ করা হলো।

তওবা
তওবার জন্য ৩টি বিষয় জরুরি। ক. তাৎক্ষণিক গুনাহ ত্যাগ করা। খ. অন্তর থেকে লজ্জিত হওয়া। গ. ভবিষ্যতে গুনাহ না করার পাক্কা ওয়াদা করা।

বিজ্ঞাপন

যদি গুনাহটি হক্কুল্লাহ তথা আল্লাহ সংশ্লিষ্ট হয় এবং তা ফরজ ও ওয়াজিব তরক করার পর্যায় পড়ে, তাহলে তা খুব দ্রুত আদায় করুন। যেমন- নামাজ কাজা করা, জাকাত না দেওয়া, রোজা না রাখা, হজ না করা, কোরবানি না দেওয়া ও কাফফারা না দেওয়া ইত্যাদি।

আর যদি গুনাহটি হক্কুল ইবাদ তথা বান্দা সংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে জুলুমের শিকার ভুক্তভোগীর নিকট ক্ষমা চেয়ে নিন এবং তার পাওনা পরিশোধ করুন। যেমন- কাউকে কটূ কথা বলা, তুচ্ছ করা, কটাক্ষ করা, গালি দেওয়া, গীবত করা, মা-বাবার খেদমত না করা, অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করা ইত্যাদি।

বিজ্ঞাপন

এক কথায়, সকল প্রকার হারাম কাজ ও কবিরা গুনাহ হতে খাঁটি মনে তওবা করুন। তওবা ভেঙে গেলে পুনরায় তওবা করুন।

নামাজ
পুরুষরা মসজিদে মাগরিব, এশা ও ফজর নামাজ জামাতে আদায় করুন। দুই দুই রাকাত করে সাধ্যানুযায়ী নফল নামাজ আদায় করুন। সম্ভব হলে শবে বরাতে সালাতুস তাসবিহ নামাজ আদায় করুন।

নিয়তের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, আমি দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেছি, তবে মুখেও উচ্চারণ করা ভালো। সুরা ফাতেহার সঙ্গে যেকোনো সূরা পড়তে পারেন। নির্দিষ্ট কোনো সুরা বারবার তেলাওয়াতের বিধান নেই। সকল প্রকার সুন্নত ও নফল নামাজ ঘরে এবং একাকী আদায় করা উত্তম।

কোরআন তেলাওয়াত
বিশুদ্ধভাবে, স্পষ্ট করে ও দরদমাখা সুন্দর আওয়াজে বেশি বেশি কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করুন।

মৌখিক জিকির
১০০০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০০০ বার আলহামদুলিল্লাহ, ১০০০ বার আল্লাহু আকবার, ১০০০ বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও ১০০০ বার আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ
করুন।

দরূদ শরীফ
দরূদে ইবরাহীম অথবা যেকোনো বিশুদ্ধ দরূদ শরীফ কমপক্ষে ১০০ বার পাঠ করুন।

দোয়া-মোনাজাত
দোয়ার শুরুতে আল্লাহতায়ালার প্রসংশা ও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করুন। অতঃপর নিজের, মা-বাবা, পরিবার-পরিজনসহ সবার গুনাহ মাফের জন্য খুব কান্নাকাটি করুন।

মনের আশা পূরণের জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে অসহায়, ভিক্ষুক ও শিশুর মতো আবেদন করুন। দীর্ঘ সময় মোনাজাত করুন এবং আমিন বলে মোনাজাত শেষ করুন।

কবর জিয়ারত
সময় সুযোগ হলে কবর জিয়ারতও করতে পারেন।

রোজা পালন
১৫ শাবান রোজা রাখুন। এছাড়া প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ এবং প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার সুন্নত হিসাবে রোজা পালনের অভ্যাস করুন।

সালাতুত তাসবিহ পড়ার নিয়ম
চার রাকাত নফল নামাজে ৩০০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার এই তাসবিহ পড়তে হয়।

প্রথম রাকাতে সানা পড়ার পর সূরা ফাতেহা পড়ার আগে ১৫ বার তাসবিহটি পড়ুন। সূরা ফাতেহার সঙ্গে অন্য সুরা মিলানোর পর রুকুতে যাওয়ার আগে ১০ বার তাসবিহ পড়ুন। রুকুতে গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম পড়ার পর ১০ বার তাসবিহ পড়ুন। রুকু থেকে ওঠার পর ১০ বার তাসবিহ পড়ুন। প্রথম সিজদায় সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়ার পর ১০ বার তাসবিহ পড়ুন। দুই সিজদার মাঝে ১০ বার তাসবিহ পড়ুন। দ্বিতীয় সিজদায় সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়ার পর ১০ বার তাসবিহ পড়ুন। এভাবে প্রতি রাকাতে ৭৫ বার তাসবিহটি পড়ুন। তাহলে চার রাকাতে মোট ৩০০ বার তাসবিহ পাঠ করা হবে।

শবে রাতের বর্জনীয় কাজসমূহ
১. শবে বরাতে ইবাদত-বন্দেগি ও আমল বাদ দিয়ে হালুয়া-রুটির রসনা বিলাসী সংস্কৃতির পুরোটাই মনগড়া, যা বর্জনীয়।

২. শবে বরাতে দোকান-পাট, বাসা-বাড়ি ও মসজিদে আলোকসজ্জা অপচয়ের শামিল, যা শরিয়তে নিষিদ্ধ।

৩. শবে বরাতে যুবক ও কিশোরদের আতশবাজি এবং পটকাবাজির উন্মাদনা শরিয়তে নিষিদ্ধ।

৪. শবে বরাতে মাজার ও কবরে নারী-পুরুষের অবাধ জমায়েত ও জনতার ঢল শরিয়তে নিষিদ্ধ। কেননা নারীদের কবর জিয়ারতের ব্যপারে শরিয়তের বাধ্যবাধকতা আছে।

৫. শবে বরাতে গোসল করার মধ্যে কোনো সওয়াব নাই এবং এ ব্যাপারে শরিয়তের কোনো বিধানও নাই।

আল্লাহতায়ালা সবাইকে পরিপূর্ণ দ্বীন ও শরিয়তের ওপর চলার জন্য তওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: খতিব, মসজিদ আল মাগফিরাহ, উত্তরা, ঢাকা।