হাব নির্বাচন, আস্থাহীনতায় এজেন্সির মালিকরা

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হাবের লোগো, বার্তা২৪.কম

হাবের লোগো, বার্তা২৪.কম

‘গত তিন বছর ধরে সৌদি আরব থেকে প্রাপ্ত হজকোটা পূরণ হয়নি। এবারও ৪৩ হাজারের বেশি হজকোটা ফেরত দিতে হয়েছে। উমরার টিকিট নিয়ে চলছে নজিরবিহীন সিন্ডিকেট। এজেন্সিগুলোকে হজযাত্রী সমন্বয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, মন্ত্রণালয় শুধু একটি নোটিশ দিয়েই কাজ শেষ মনে করছে, কোথাও কেউ সহযোগিতা করছে না। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে ঠিকই ময়দানে নেমেছেন তারা। কী হবে এমন নেতা আর নির্বাচন দিয়ে? যারা এজেন্সির বিপদের দিনে কাজে আসে না, তারা নেতৃত্ব পেলে কারও কোনো উপকারে আসবে বলে মনে হয় না।’ তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন এক বেসরকারি হজ এজেন্সির মালিক।

তার মতে, হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে (২০২৫-২০২৭) যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তারা তো আমাদের বিপদের সময় পাশে ছিলেন না, আমরা নেতৃত্বহীন অবস্থায় হজের প্রস্তুতি নিচ্ছি, কেউ পরামর্শ দিয়েও পাশে থাকেনি।

বিজ্ঞাপন

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বেসরকারি পর্যায়ে হজ কার্যক্রম পরিচালনায় ৯৪২টি হজ এজেন্সিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জাতীয় হজ ও উমরা আইন অনুযায়ী প্রতিটি এজেন্সির হজযাত্রীর সংখ্যা হবে ১০০ থেকে ৩০০ জন। কিন্তু সৌদি সরকার এবার প্রতিটি এজেন্সির হজযাত্রীর কোটা নির্ধারণ করেছে ১ হাজার জন। ফলে বাংলাদেশি হজ এজেন্সিগুলো ১ হাজার জনের কোটা পূরণ করতে না পারায় মাত্র ৭০ হজ এজেন্সি দিয়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অবশিষ্ট ৮৭২টি এজেন্সি হজ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে না। তারা হজযাত্রীগুলো অন্য এজেন্সির কাছে হস্তান্তর করবে।

বিষয়টি নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ হজ এজেন্সির মালিকরা। তাদের এমন ক্ষোভের কথাই প্রকাশ পাচ্ছে হাব নির্বাচনের প্রেক্ষিতে। এজেন্সির মালিকরা বলছেন, দেশে দেড় হাজারের বেশি হজ এজেন্সি রয়েছে, তন্মধ্যে ৯৪২টি এজেন্সিকে সরকার হজের কাজ করার অনুমোদন দিয়েছে। তারাও কিন্তু চলতি নির্বাচনে হাবের ভোটার হননি। যেখানে গত নির্বাচনে ভোটার ছিল এগারো শ’য়ের কাছাকাছি। তাহলে বুঝুন, এই নির্বাচনে সাধারণ ভোটারের আগ্রহ রয়েছে কতটা?

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি কাকরাইলস্থ ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) ভবনে সকাল ৯-৪টা হাব দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনের একটানা ভোট অনুষ্ঠিত এবং ফলাফল ঘোষণা করা হবে। ৭০১ জন ভোটার হাব নির্বাচনে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেবেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৫৯৬ জন, চট্টগ্রামে ৭৫ জন এবং সিলেটে ৩০ ভোটার ভোট দেওয়ার কথা রয়েছে।

আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি হাবের অফিস বেয়ারার নির্বাচন ও ফলাফল ঘোষণা করা হবে। হাব নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান ফিরোজ আল মামুন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

হাব নির্বাচনে তিনটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। হাব ঐক্য কল্যাণ পরিষদ (প্যানেল প্রধান সৈয়দ গোলাম সরওয়ার), হাব ঐক্য ফোরাম (প্যানেল প্রধান ফারুক আহমেদ সরদার) ও হাব বৈষম্যবিরোধী গনতান্ত্রিক জোট (প্যানেল প্রধান এম এ রশিদ শাহ্ সম্রাট)।

পল্টনের এক হজ এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে সাভারের ভাকুর্তায় প্রস্তাবিত হাবপল্লী বড় একটি ইস্যু। এখানে জমি কেনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলছে কয়েক বছর ধরে। শুনেছি, জমির মূল্য ফেরত দেওয়ার কথা।’

সাবেক এক হাব নেতা বলেন, ‘হাবে দুর্নীতি, লুটপাট এবং অনিয়ম অব্যবস্থাপনার কথা মুখরোচক বিষয়। সবচেয়ে বড় কথা, আপনি সাধারণ হজ এজেন্সির মালিকদের কতটা উপকারে এলেন সেটা বিবেচ্য। নির্বাচনের মাঠে থাকা নেতাদের এপ্রোচ বিগত দিনে এজেন্সিবান্ধব ছিলো না। কিন্তু এগুলো বলে তো লাভ নেই!’

হজ এজেন্সির মালিকদের অনীহা সত্ত্বেও নির্বাচনে জয়ী হলে কে কি করবেন, সেসব শুনিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চষ্টো করছেন। কেউ বলছেন, এজেন্সি প্রতি সর্বোচ্চ ৩শ’ হজ কোটা বহাল রাখার কথা, কেউ বলছেন, আয়টা রুলস অনুযায়ী হজ এজেন্সিদের ৭% কমিশন বহালের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবো। এভাবেই হাব সদস্য ও হজযাত্রীদের কল্যাণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর কথা বলছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীরা।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সাবেক একজন মহাসচিব বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৯৪২টি এজেন্সিকে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ১০ থেকে ২০টি হজ এজেন্সির ১ হাজার হজযাত্রী মিলিয়ে একটি লিড এজেন্সি নির্ধারণ করতে হয়েছে। লিড এজেন্সি এসব হজযাত্রী নিতে চায়নি। কারণ এতগুলো এজেন্সির যাত্রী একটি এজেন্সির পক্ষে মেইনটেইন করা খুবই কঠিন। আবার কোনো একটি এজেন্সি যদি লিড এজেন্সির কাছে টাকা ঠিকমতো পরিশোধ না করে, সংশ্লিষ্ট এজেন্সির সঙ্গে হজযাত্রীর যে চুক্তি হয়েছে লিড এজেন্সি সেই চুক্তিমতো কাজ না করে। এসব বিষয় নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের জাতীয় হজ ও উমরা নীতি অনুযায়ী প্রতিটি এজেন্সির কোটা ছিল ৫০ জন। সেটি পরে বাড়িয়ে ১০০ থেকে ৩০০ জন করা হয়েছে। হজ এজেন্সিগুলো এই নিয়ম মেনেই কাজ করছিল। কিন্তু গেল বছর সৌদি সরকার হজের কোটা ২৫০ জন নির্ধারণ করে। এজেন্সিগুলো সেটি মেনে নিয়ে কাজ করেছে। হঠাৎ করে সৌদি সরকার এবার হজযাত্রীর সংখ্যা ১ হাজার নির্ধারণ করে দেয়। একটি হজ এজেন্সির পক্ষে ১ হাজার হজযাত্রী জোগাড় করা কঠিন। ফলে অনেকগুলো এজেন্সির হজযাত্রী মিলিয়ে ১ হাজার নির্ধারণ করে একটি লিড এজেন্সি বানিয়ে হজের কাজ করতে হয়। সব এজেন্সির সেবার মান এক নয়, আবার একটি এজেন্সি তার হজযাত্রী অন্য এজেন্সিতে হস্তান্তর করতেও আগ্রহী নয়। ফলে হজ কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে বিশৃঙ্খলা হবে। বাংলাদেশি হজযাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হবেন।

হজ এজেন্সি মালিকরা জানান, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১ জুন পবিত্র হজ পালিত হওয়ার কথা রয়েছে। গত ১৩ জানুয়ারি সৌদি সরকারের সঙ্গে হজ চুক্তি সম্পন্ন হয়। ২০২৪ সালে হজ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১ হাজার ৫৩৩টি হজ এজেন্সিকে অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। এর মধ্যে ২৫৯টি হজ এজেন্সি হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে।