স্পেনের আন্দালুস থেকে ঘোড়ায় হজযাত্রা!
-
-
|

স্পেনের আন্দালুস থেকে ঘোড়ায় হজযাত্রা, ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বায়নের এ যুগে দ্রুতগতির যানবাহনের ছড়াছড়ি। উড়োজাহাজ, ট্রেন, গাড়ি- সবই দ্রুততার প্রতীক। কিন্তু এ আধুনিকতার ভিড়েও তিন মুসলিম যুবক পবিত্র হজ পালনের জন্য বেছে নিয়েছেন শতাব্দী প্রাচীন এক ঐতিহ্যবাহী মাধ্যম- ঘোড়া।
স্পেনের দক্ষিণাঞ্চল থেকে মক্কার উদ্দেশে ৮ হাজার কিলোমিটারের এ দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য অভিযানে নেমেছেন আবদুল কাদের হারকাসি, আবদুল্লাহ হার্নান্দেজ ও তারিক রদ্রিগেজ।
আন্দালুসীয় মুসলিমদের ৫০০ বছর আগের হজযাত্রার স্মৃতি পুণরুদ্ধার করতেই এ ব্যতিক্রমী পথ বেছে নিয়েছেন তারা।
তিন মাসের এ দীর্ঘ সফরে তারা ইতালি, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, মন্টেনিগ্রো, কসোভো, উত্তর মেসিডোনিয়া, বুলগেরিয়া, গ্রিস ও তুরস্ক পাড়ি দিয়ে সৌদি আরব পৌঁছাবেন।
সম্প্রতি তারা পৌঁছেছেন বসনিয়ার ঐতিহাসিক শহর সারায়েভোতে। সেখানে ঐতিহাসিক বাসকারসিজা জেলায় ঘোড়ার পিঠে তাদের বিচরণ স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
অটোমান আমলের স্থাপত্য নিদর্শন পরিদর্শন, নিজেদের অনন্য যাত্রার গল্প শোনা এবং আগ্রহীদের সঙ্গে ছবি তোলার মাধ্যমে তারা সবার মন জয় করে নেন।
সারাজেভোর হাজি মসজিদ পরিদর্শন এবং নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তারা হজযাত্রার ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তারা যাত্রার নানা অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন।
সারাজেভোতে আগমনকে যাত্রার অন্যতম সেরা মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করে আবদুল কাদের হারকাসি বসনিয়ার জনগণের আতিথেয়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সীমান্ত পারাপারের জটিলতা, বিশেষ করে সার্বিয়ায় প্রবেশের অনুমতি না পাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
তবে প্রতিটি বাধাই ঈমান ও ধৈর্যের পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করেছেন বলেও জানান হারকাসি। এ তিন সাহসী যাত্রীর বিশ্বাস, তারা শুধু হজের পথেই হাঁটছেন না, বরং ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিও ঘটাচ্ছেন। আবদুল কাদের হারকাসি জানান, তারা ইতোমধ্যেই ইউরোপের বেশিরভাগ অংশ অতিক্রম করেছেন।
তাদের যাত্রার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন, ‘এই যাত্রার মাধ্যমে আমরা শিখেছি যে, মহান আল্লাহ সবকিছু সম্ভব করে তোলেন। যদি আপনি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখেন এবং আপনার লক্ষ্য অর্জনে যাত্রা শুরু করেন, তবে আপনি তা অর্জন করবেন- আলহামদুলিল্লাহ।’
তিন বন্ধু এমন ভ্রমণের লক্ষ্য আন্দালুসীয় মুসলমানদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য তুলে ধরা, যারা একসময় পবিত্র কাবায় পৌঁছানোর জন্য মহাদেশজুড়ে বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করেছিলেন।
ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে, এই যাত্রায় আরোহী এবং ঘোড়াদের নিরাপত্তা এবং সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দীর্ঘ ভ্রমণের সময় আরাম প্রদানের জন্য ব্যাপক লজিস্টিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।