‘হজ ব্যবস্থাপনায় এজেন্সির গাফিলতি পেলেই লাইসেন্স বাতিল’
-
-
|

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র হজযাত্রায় কোনো এজেন্সি কর্তৃপক্ষের গাফিলতি থাকলেই লাইসেন্স বাতিল ও জরিমানা করা হবে বলে জানিয়েছেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন৷
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে ২০২৫ সালের পবিত্র হজ ব্যবস্থাপনার অগ্রগতি নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে এমনটা জানান তিনি।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, কোনো বেসরকারি হজ এজেন্সির অবহেলা কিংবা গাফলতির কারণে কোনো হজযাত্রী হজ করতে না পারলে সে দায় সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে নিতে হবে। এ দায় কোনোভাবেই সৌদি সরকার কিংবা ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বহন করবে না।
এজেন্সির অবহেলায় কোনো হজযাত্রী হজ করতে না পারলে এজেন্সির বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল তো হবেই। আর্থিক জরিমানা করা হবে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে মিনা ও আরাফাতে তাঁবু ও ক্যাটারিং সার্ভিস ছাড়া বাড়ি ও হোটেল কর্তৃপক্ষ, পরিবহন প্রতিষ্ঠান, ক্যাটারিং সেবাদানকারীর মতো হজ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চুক্তি সম্পাদনে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই সময় আর বাড়ানো হবে না। ৭০টি লিডিং এজেন্সির মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৮টির চুক্তি সম্পাদনের কাজে অগ্রগতি আছে। বাকিগুলো পিছিয়ে আছে।
তিনি জানান, হজ ও উমরা বিধিমালা ২০২২-এ সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য বাড়িভাড়া করার লক্ষ্যে ধর্ম সচিবের নেতৃত্বে ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে। এ কমিটি প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারে। এ বছর কমিটিতে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের ২ জন ও জেদ্দা কনস্যুলেটের ২ জন প্রতিনিধি কো-অপ্ট করা হয়। তাদের মধ্যে সৌদি দূতাবাসের ডিফেন্স এটাশে ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি ছিলেন।
তিনি বলেন, এমন শক্তিশালী একটি কমিটি এ বছর সরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীদের জন্য বাড়িভাড়ার কাজ সম্পন্ন করেছে। এই কমিটি বাড়িভাড়া কোটেশনের পরিপ্রেক্ষিতে দরদাতাদের বাড়িগুলো পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেছে। প্রাথমিকভাবে বাছাই করা বাড়িগুলো দুই বা ততোধিকবার সরজমিনে পরিদর্শন করেছে।
তিনি আরও বলেন, বাড়িগুলোর মান, আনুষঙ্গিক সুবিধা, মসজিদে হারাম থেকে দূরত্ব, হজ প্যাকেজে প্রতিশ্রুত সেবা ও বাড়িভাড়া বাবদ বরাদ্দ- এসব বিষয় চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এই কমিটি সর্বোত্তম বাড়িগুলো ভাড়া করেছে। কমিটি বিধি মোতাবেক বাড়িভাড়া করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য সর্বান্তকরণে চেষ্টা করেছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বছর সরকারি মাধ্যমে হাজিদের জন্য আমরা দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলাম। সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ এ নিবন্ধিত হজযাত্রীদের জন্য মক্কায় আমরা হারাম শরিফের বহির্চত্বর থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে আবাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। সৌদি সরকারের বিধান অনুসারে হারাম শরিফ থেকে ২ কিলোমিটার দূরে হজযাত্রীদের জন্য হোটেল বা বাসা ভাড়া করা হলে সেক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে পরিবহনের বন্দোবস্ত রাখতে হয়। আমরা এ উদ্দেশ্যে হজযাত্রী প্রতি ৩০০ রিয়াল ধরেই প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছিলাম।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, হজের মৌসুমে অত্যধিক ভীড়ের কারণে অনেকসময় হারাম শরিফ হতে দেড় থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে বাস প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এ কারণে আমরা হাজিদের সুবিধার্থে প্যাকেজ-১ এর বাড়িভাড়া ও পরিবহন বাবদ দেয় টাকা সমন্বয় করে এই প্যাকেজের হাজিদের জন্য ৩ কিলোমিটারের স্থলে ২ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে বাড়িভাড়া নিয়েছি’ বলেন ধর্ম উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আমরা তাদের জন্য যে বাড়িগুলো ভাড়া নিয়েছি তার সর্বোচ্চ দূরত্ব ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার। বাড়িভাড়া কমিটির সদস্যদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরূপ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে সরকারি মাধ্যমের হাজিদের কষ্ট লাঘব হবে এবং হারিয়ে যওয়ার আশঙ্কাও বহুলাংশে কমে গেছে। এখানে দুটি খাত সমন্বয় করে আমরা যে কাজটি করেছি সেটার বিষয়েও প্যাকেজে স্পষ্ট বলা আছে, সরকার হাজিদের সুবিধার্থে যেকোনো খাত সমন্বয়ের অধিকার সংরক্ষণ করে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ এর হজযাত্রীদের জন্য মক্কায় যেসব হোটেল ভাড়া করেছি সেগুলোর সর্বোচ্চ দূরত্ব হবে ১ দশমিক ২ কিলোমিটার। অন্যদিকে, মদিনায় হজ প্যাকেজ-১ এর হজযাত্রীদের জন্য সর্বোচ্চ এক কিলোমিটারের মধ্যে এবং হজ প্যাকেজ-২ এর হজযাত্রীদের জন্য ৩০০-৬০০ মিটারের মধ্যে হোটেল ভাড়া করা হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, হজ প্যাকেজ-১ এর হজযাত্রীরা মিনায় জোন-৫ এর তাঁবুতে অবস্থান করবেন এবং হজ প্যাকেজ-২ এর হজযাত্রীরা মিনায় জোন-২ এর তাঁবুতে অবস্থান করবেন এবং সার্ভিস কোম্পানীর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক সেখানে খাবারসহ অন্যান্য সুবিধাদি পাবেন।
তিনি বলেন, হজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেবা বিশেষ করে পরিবহন সেবা, ল্যাগেজ লোডিং-আনলোডিংসহ অন্যান্য সেবার জন্য সৌদি সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা ইতোমধ্যে সব চুক্তি সম্পাদন করেছি। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা বিশ্বস্ত হজ সেবা প্রদানকারী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেছি। আশা করি, এ বছর হাজিরা সন্তোষজনক সেবা পাবেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সৌদি সরকারের চাহিদামাফিক হজযাত্রী প্রতি ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯১ টাকা হিসেবে ১ হাজার ২৮৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ সৌদি রিয়াল প্রেরণ করেছি।
ধর্ম উপদেষ্টা জানান, এবার হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন ৮৭ হাজার ১০০ জন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ২০০ জন হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন। আর এ বছর হজ কোটা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের। তবে এবার হজে শিশুদের নেওয়া যাবে না। যদিও শিশুদের বয়স কত হবে তা এখনও জানায়নি সৌদি আরব।