মৃতদের নামে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন কী উপকারী?
-
-
|

মৃতদের মাগফিরাতের দোয়া করা, ছবি: বার্তা২৪.কম
আমাদের দেশে সমাজের বিখ্যাতদের স্মৃতি রক্ষায় তাদের নামে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজনের রীতি রয়েছে। ফুটবল ও ক্রিকেটসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টের এসব আয়োজন বিভিন্ন পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়। অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে, প্রচুর টাকা খরচ করে স্মৃতি রক্ষার এসব আয়োজনের রীতি দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এমন আয়োজনে কি মৃত ব্যক্তির কোনো উপকার হয়? ইসলামের দৃষ্টিতে এমন আয়োজন কি যথার্থ?
ইসলামি স্কলাররা বলেন, মৃতরা তাদের জীবিত প্রিয় মানুষের উপহারের অপেক্ষায় থাকে, জীবিতরা যখন তাদের মাগফিরাতের জন্য কোনো নেক আমল করে কিংবা দোয়া করে, এতে তাদের ভীষণ উপকার হয়। তারা এতে ভীষণ খুশি হয়। একজন জীবিত ব্যক্তি সারা দুনিয়া পেলে যতটা খুশি হবে, এর চেয়ে বেশি খুশি হয়।
স্মৃতি রক্ষায় এসব আয়োজনে মৃতদের কোনো উপকার হয় না। এর মাধ্যমে টাকা ও সময় নষ্ট হয়। ইসলাম এসব সমর্থন করে না। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই মৃত ব্যক্তি হলো পানিতে পড়া ব্যক্তির মতো সাহায্যপ্রার্থী। সে তার পিতা-মাতা, ভাই-বন্ধুর দোয়া পৌঁছার প্রতীক্ষায় থাকে। তার কাছে যখন দোয়া পৌঁছে, তখন তার কাছে সারা দুনিয়া ও দুনিয়ার সব জিনিসের চেয়ে এই দোয়া বেশি প্রিয় হয়। আর আল্লাহতায়ালা দুনিয়াবাসীর দোয়ায় কবরবাসীদের পাহাড় পরিমাণ রহমত পৌঁছান এবং মৃত ব্যক্তিদের জন্য জীবিতদের পক্ষ থেকে হাদিয়া (উপহার) হলো তাদের জন্য ক্ষমা চাওয়া। -শোয়াবুল ঈমান
তাই জীবিতদের উচিত, মৃতদের মাগফিরাতের দোয়া করা। সাধ্যমতো নেক আমল করে তাদের জন্য ঈসালে সওয়াব করা। এখানে এমন কিছু আমলের কথা উল্লেখ করা হলো, যেগুলো মৃতদের জন্য করা যেতে পারে।
দোয়া : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো লোক মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন প্রকার আমল (জারি থাকে)। (প্রথম) সদকায়ে জারিয়া (চলমান সদকা); (দ্বিতীয়) ওই ইলম, যা দ্বারা অন্য লোক উপকৃত হয়; (তৃতীয়) নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ -সুনানে নাসায়ি : ৩৬৫১
বর্ণিত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, মৃতদের জন্য আমরা খুব বেশি বেশি দোয়া করতে পারি। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন।
কোরআন তেলাওয়াত : হজরত মাকিল ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের জন্য সুরা ইয়াসিন পাঠ করো।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৩১২১
অতএব নিজের মৃত আত্মীয়দের ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোরআন তেলাওয়াত করা যেতে পারে। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে কাউকে দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করানো উচিত নয়।
সদকা : মৃতদের ইসালে সওয়াব করার একটি উত্তম পদ্ধতি হতে পারে সদকা। কারো সামর্থ্য থাকলে দান-সদকার মাধ্যমে মৃত আত্মীয়দের ইসালে সওয়াব করা যেতে পারে।
হজ : হজরত বুরায়দা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক নারী এসে জিজ্ঞেস করল, ...আমার মা হজ না করে ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারব? তিনি বলেন, (হ্যাঁ), তুমি তার পক্ষ থেকে হজ করো। -জামে তিরমিজি : ৯২৯
এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, মানুষ চাইলে তাদের মৃত আত্মীয়দের ইসালে সওয়াবের নিয়তে হজ করতে পারবে। তা ছাড়া হজ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত, যা মৃত ব্যক্তির সওয়াবের পাল্লা অনেক বেশি ভারী করে দিতে পারে।
উমরা : অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল উমরা। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা হজ ও উমরা ধারাবাহিকভাবে আদায় করতে থাকো। এ দুটো দারিদ্র্য ও গুনাহকে এমনভাবে দূর করে দেয়, যেমন হাঁপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে দেয়। -জামে তিরমিজি : ৮১০
এ ছাড়া মিসকিনদের খাবার দেওয়া, নফল নামাজ পড়া, চিকিৎসাসেবাসহ যেকোনো সওয়াবের কাজ করেই মৃতদের জন্য ইসালে সওয়াব করার সুযোগ আছে। তবে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, এতে যেন কোনো নাজায়েজ, বিদআত ও কুপ্রথার অনুপ্রবেশ না ঘটে। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন।