হজের খরচ বাড়ল না কমল
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। ২০২৫ সালের হজে বাংলাদেশ ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা পেয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন যেতে পারবেন হজে।
২০২৫ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। একটি প্যাকেজে (মসজিদে হারামের বহিঃচত্বর থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ি) ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। অপর প্যাকেজে (মসজিদে হারামের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ি) ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। তবে এবার প্যাকেজে খাবারের টাকা যোগ করা হয়নি।
দেখা গেছে, খাবারের ৪০ হাজার টাকা যোগ করলে সাধারণ হজ প্যাকেজ-১-এর খরচ দাঁড়ায় ৫ লাখ ১৮ হাজার ২৪২ টাকা। আর প্যাকেজ ২-এর জন্য খরচ ৬ লাখ ১৫ হাজার ৬৮০ টাকা।
গতবার সরকারিভাবে হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ হয়েছিল। তখন হাজিদের বাড়ি ছিল মসজিদে হারামের বহিঃচত্বর থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে।
প্যাকেজ-১-এর দূরত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ তিন কিলোমিটার দূরে থেকে মসজিদে হারামে এসে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় বাংলাদেশের বয়স্ক হাজিদের পক্ষে সম্ভব হবে কিনা। এই প্যাকেজে হাজিরা যেতে কতটা আগ্রহী হবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকার যে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, সেটা মূলতঃ শার্টল সার্ভিস প্যাকেজ। অর্থাৎ আজিজিয়া প্যাকেজ। অনেকটা ‘সান্ত্বনা প্যাকেজ।’ বাংলাদেশের হাজিরা এতো দূরে থেকে হজ করতে অভ্যস্ত নন।
তবে, কাজের কাজ যেটা হয়েছে, উড়োজাহাজ ভাড়াটা কিছুটা কমানো গেছে। সেটা আরও কমানোর সুযোগ আছে। ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনলেও উড়োজাহাজ লাভে থাকবে। আর থার্ড ক্যারিয়ার উন্মুক্ত করলে সেটা ১ লাখ ১০-১২ হাজারে নামিয়ে আনা যায়।
বলে রাখা ভালো, মসজিদে হারামে এক রাকাত নামাজে এক লাখ রাকাত নামাজের সওয়াব পাওয়া যায়। এই কারণে হাজিরা প্রতি ওয়াক্তের নামাজ মসজিদে হারামে আদায় করতে সচেষ্ট থাকে। বাস্তবতা হলো, হজের সময় মক্কার আশপাশে অনেকদূর পর্যন্ত গাড়ি থাকে না, সবকাজ হেঁটে সারতে হয়।
অন্যদিকে হজের খরচে সৌদি অংশের খরচ আরও কমানো এবং হজযাত্রী পরিবহনে থার্ড ক্যারিয়ার চালুর দাবি জানিয়েছিলেন হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশের (হাব) সাবেক মহাসচিব এম এ রশিদ শাহ সম্রাটসহ অন্যরা।
সেটাও বাস্তাবায়িত হয়নি উল্লেখ করে সংক্ষিপ্ত মতামত জানিয়েছেন বার্তা২৪.কমকে। তার মতে, হজ প্যাকেজে আশাব্যাঞ্জক খুব কিছু হয়নি।
২০২৫ সালের বেসরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা। তবে বেসরকারি এজেন্সিগুলো সাধারণ হজ প্যাকেজ গ্রহণের পর একটি অতিরিক্ত বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার আগে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, সব অংশীজনের মতামত, বিভিন্ন খাতে খরচের চুলচেরা বিশ্লেষণ ও সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যয় বাস্তবভিত্তিক ও যৌক্তিকীকরণের মাধ্যমে এ বছরের হজের প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, হজের প্যাকেজ নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ছিলো না, চেষ্টার কোনো কমতি ছিলো না।
সরকারি মাধ্যমে সাধারণ হজ প্যাকেজ–১–এর সুযোগ-সুবিধায় যা আছে:
১। মক্কায় হারাম শরিফের বহিচত্বর থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে আবাসন। হারাম শরিফ যাতায়াতে বাসের ব্যবস্থা।
২। মদিনায় মসজিদে নববি থেকে সর্বোচ্চ ১.৫ কিলোমিটারের মধ্যে আবাসন।
৩। মিনায় গ্রিন জোনে (জোন-৫) তাঁবুর অবস্থান এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিস সুবিধা।
৪। মক্কার হোটেল/বাড়ি থেকে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাত-মুজদালিফা-মিনা ট্রেনযোগে যাতায়াত।
৫। মিনা এবং আরাফায় মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার পরিবেশন।
৬। অ্যাটাচ বাথসহ মক্কা ও মদিনায় বাড়ি/হোটেলের প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসন।
৭। বাড়ি/হোটেল কক্ষে/ফ্লোরে রেফ্রিজারেটরের ব্যবস্থা।
৮। মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান।
৯। ৪৬ জন হজযাত্রীর জন্য ১ জন হজ গাইডের ব্যবস্থা।
প্যাকেজের বাইরে প্রত্যেক হজযাত্রীকে খাবার বাবদ ন্যূনতম ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) টাকার সমপরিমাণ সৌদি রিয়াল এবং দমে শোকর (কোরবানি) বাবদ ৭৫০ (সাত শ পঞ্চাশ) সৌদি রিয়াল আবশ্যিকভাবে সঙ্গে নিতে হবে।
এর বাইরে সরকারি মাধ্যমের হজ প্যাকেজ আপগ্রেডেশন সুবিধা পাওয়া যাবে। অর্থাৎ অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে মক্কা ও মদিনার বাড়ি/হোটেলে ২, ৩ ও ৪ সিটের রুম এবং শর্ট প্যাকেজের সুবিধা গ্রহণ করা যাবে।
সরকারি মাধ্যমে সাধারণ হজ প্যাকেজ-২–এর বৈশিষ্ট্য হলো:
১। মক্কায় হারাম শরিফের বহিচত্বর থেকে ১.৫ কিলোমিটারের মধ্যে আবাসন।
২। মদিনায় মারকাজিয়া (সেন্ট্রাল এরিয়া) এলাকায় আবাসন।
৩। মিনায় ইয়েলো জোনে (জোন-২) তাঁবুর অবস্থান এবং মিনা-আরাফায় আপগ্রেডেড ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিস সুবিধা।
৪। মক্কার হোটেল/বাড়ি থেকে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনা ট্রেন যোগে যাতায়াত।
৫। অ্যাটাচ বাথসহ মক্কা ও মদিনায় বাড়ি/হোটেলের প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসন।
৬। বাড়ি/হোটেল কক্ষে/ফ্লোরে রেফ্রিজারেটরের ব্যবস্থা।
৭। মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান।
৮। ৪৬ জন হজযাত্রীর জন্য ১ জন হজ গাইডের ব্যবস্থা।
প্যাকেজের বাইরে হজযাত্রীকে খাবার বাবদ ন্যূনতম ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) টাকার সমপরিমাণ সৌদি রিয়াল এবং (কোরবানি) বাবদ ৭৫০ (সাত শ পঞ্চাশ) সৌদি রিয়াল আবশ্যিকভাবে সঙ্গে নিতে হবে।
বেসরকারি হাজিরা মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা পাবেন।
২০২৫ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে হজ ভিসা ইস্যু শুরু করবে সৌদি আরব এবং ২৯ এপ্রিল থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৫ সালের ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজব্রত পালনের সুযোগ পাবেন।