কাতার সোজা না করা ও ফাঁকা রাখার ক্ষতি
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘নামাজ কায়েম করা মানে রুকু, সিজদা ও কোরআন তেলাওয়াত পরিপূর্ণ করা এবং যথাযথ মনোযোগ ও বিনয়ের সঙ্গে নামাজ আদায় করা।’ -তাফসিরে ইবনে কাসির : ১/১২২
নামাজ এবং তৎসংশ্লিষ্ট কাজগুলো উত্তমরূপে আদায় করাকে ‘নামাজ কায়েম’ বলা হয়। এ ছাড়া নামাজ কায়েমের আরও দুটি দিক রয়েছে-
১. নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। এমনকি যারা জামাতে শরিক হয় না নবীজী (সা.) তাদের ঘরবাড়ী পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন! -সুনানে আবু দাউদ : ৫৪৮
২. নামাজের কাতার ঠিক রাখা। নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা কাতার সোজা করো, কেননা কাতার সোজা করা নামাজ কায়েমেরই অংশ।’ -সহিহ বোখারি : ৭২৩
হাদিসে নামাজের কাতার সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা এসেছে। এসেছে অনেক উৎসাহ ও সতর্কবাণী। হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই অবশ্যই কাতার সোজা করো, অন্যথায় আল্লাহতায়ালা তোমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে দেবেন।’ -সহিহ বোখারি : ৭১৭
হজরত আবু মাসউদ (রা.) বলেন, ‘নামাজের সময় নবী কারিম (সা.) আমাদের কাঁধে হাত দিয়ে কাতার সোজা করতেন আর বলতেন, সোজা হও, এলোমেলো থেকো না; তাহলে তোমাদের অন্তরও বক্র ও এলোমেলো হয়ে যাবে...।’ -সহিহ মুসলিম : ৪৩২
কাতার সোজা করার পদ্ধতি
পরস্পর কাঁধ ও পায়ের গোড়ালি সোজা করে কাতার সোজা করতে হয়। হজরত আবু উসমান আন-নাহদি (রহ.) বলেন, ‘আমি কাতার সম্পর্কে হজরত ওমরের চেয়ে অধিক যত্নশীল আর কাউকে দেখিনি। নামাজ আরম্ভের আগ মুহূর্তে সবার কাঁধ ও পায়ের দিকে তাকাতেন এবং (সামনের কাতার ফাঁকা থাকলে) লোক পাঠিয়ে পেছনের মুসল্লিদের সামনের কাতারে নিয়ে দাঁড় করাতেন।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ৩৫৫৭
গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়ানো
আমাদের অবস্থা হলো, কারো গায়ের সঙ্গে লেগে দাঁড়াতে সংকোচ হয়। কারো অবস্থা তো আরো করুণ! কেউ তার গায়ের সঙ্গে লেগে দাঁড়াতে চাইলে সে সরে যায়!
অনেক মসজিদের ফ্লোরে বা কার্পেটে ঘর ঘর দেওয়া থাকে। অনেকে মনে করে, তার ঘরে অন্য কেউ ঢুকতে পারবে না! এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, নবী কারিম (সা.) বলেন, শোন! তোমরা ফেরেশতাদের মতো কাতারবন্দি হও।
আমরা বললাম, তারা কীভাবে কাতারবন্দি হয়?
নবীজী বললেন, তারা আগের কাতার পূর্ণ করে এবং গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়ায়। -সুনানে আবু দাউদ : ৬৬১
নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা (চেপে চেপে দাঁড়িয়ে) কাতার মজবুত করো, কাতার কাছাকাছি করো এবং কাঁধ বরাবর করো। আল্লাহর কসম! আমি শয়তানকে কালো ছোট ছাগল ছানার মতো কাতারের মাঝে ঢুকতে দেখি।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৬৬৭
কাতার বিষয়ে নরম ও বিনয়ী হওয়া
নবী কারিম (সা.) এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, হজরত (সা.) বলেন, ‘কাতার ঠিক করো, কাঁধ সোজা করো, খালি জায়গা পূর্ণ করো, নরম হও।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৬৬৬
তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম সে, নামাজে যার কাঁধ সবচেয়ে বেশি নরম। অর্থাৎ কাতার সোজা করা বা খালি জায়গা পূরণ করার জন্য কেউ আগ-পর হতে বা ডানে বামে মিলতে বললে বিনয়ের সঙ্গে তা গ্রহণ করে। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ২৪৮০
কাতারের শৃঙ্খলা বজায় রাখা
যেকোনো কাজ সুশৃঙ্খলভাবে করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। নামাজের কাতারে দাঁড়ানো অবস্থায় এর গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার কয়েকটি দিক রয়েছে। সেগুলো হলো-
শ্রেণিবিন্যাস ঠিক রাখা
প্রাপ্তবয়স্কদের সামনের কাতারে দাঁড়ানো এবং ছোটদের পেছনে দাঁড় করানো। হজরত ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.) বলেন, হজরত উমর (রা.) কোনো বাচ্চাকে (সামনের) কাতারে দেখলে পেছনে পাঠিয়ে দিতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ৪১৯২
দাঁড়ানোর ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা
ইমামের বরাবর পেছন থেকে দাঁড়ানো আরম্ভ করা। তারপর একজন ডানে একজন বাঁয়ে। এভাবে কাতারের শেষ পর্যন্ত। -হাশিয়াতুত তাহতাবি : ৩০৫
এ বিষয়েও আমাদের অবহেলা হয়। বিশেষত বড় মসজিদগুলোর পেছনের কাতারে মাঝখান থেকে দাঁড়ানো আরম্ভ করে ডান দিকেই সবাই দাঁড়ায়, বাম দিকের খবর নেই। অথবা মাঝখানেরও খবর থাকে না, যেকোনো একপাশে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে যায়! যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সামনের কাতার আগে পূর্ণ করা
নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘প্রথমে সামনের কাতার পূর্ণ করো, অতঃপর তার পরের কাতার। কোনো অসম্পূর্ণতা থাকলে তা যেন শেষ কাতারে থাকে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৬৭১
এক্ষেত্রে অনেক সময় আমরা উদাসীন থাকি, দু-কদম দিয়ে সামনের কাতারে যাব, এতটুকু শক্তি হয় না। সামান্য সময় পাখার বাতাস থেকে দূরে থাকব এতটুকু সহ্য হয় না। অথচ নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘প্রথম কাতারের ফজিলত যদি তারা জানত; সেখানে দাঁড়ানোর জন্য তারা অবশ্যই প্রতিযোগিতা করত।’ -সহিহ বোখারি : ৭২১
পরিশেষে নবীজীর হাদিস লক্ষ করি। আশা করি তা সামনে থাকলে কাতার সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহতায়ালা তার রহমতের সঙ্গে তাকে মিলাবেন। আর যে কাতারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে, আল্লাহতায়ালা তার রহমত থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন (বঞ্চিত) করবেন।’ -সহিহ ইবনে খুযাইমা : ১৫৪৯