মসজিদের ইমাম থেকে সংসদ সদস্য
সোমবার (২৪ জুন) দুপুর ১টা। ভারতের পার্লামেন্ট ভবনের বিপরীতে অবস্থিত মসজিদে মুসল্লিরা এসেছেন জোহরের নামাজের জন্য, অথচ ইমামের দেখা নেই; তার রুমেও তালা ঝুলছে। অপেক্ষমান মুসিল্লদের মাঝে চলছিল কৌতূহলী আলোচনা, ‘ইমাম সাহেব কি আজ নামাজের ইমামতি করার সময় পাবেন?’
আলোচনা শেষ হতে না হতেই দেখা গেল, ৪৮ বছর বয়সী ইমাম মাওলানা মহিব্বুল্লাহ নদভি মসজিদে হাজির। নির্ধারিত সময়েই নামাজ শুরু হয়। নামাজ শেষে ইমাম সাহেব আবার চলে যান পার্লামেন্ট ভবনে।
সেই মসজিদের ইমাম এবার লোকসভার সদস্য হয়েছেন। মাওলানা মহিব্বুল্লাহ নদভি ভারতের উত্তর প্রদেশের রামপুর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় প্রথম সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে ব্যস্ত ছিলেন। সমাজবাদী পার্টির সাইকেল প্রতীকে তিনি বিজেপির এমপি ঘনশ্যাম লোধিকে ৮৭ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করে সংসদে এসেছেন।
দিল্লির সংসদ ভবনের ঠিক উল্টো দিকের মসজিদটি সংসদ মার্গ বা সংসদওয়ালি মসজিদ নামে পরিচিত। মুঘল আমলে নির্মিত মসজিদটি আয়তনে বড় হলেও সেটিতে লোকজনের আনাগোনা কম। এলাকার হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী শুক্রবার জুমার নামাজে শরিক হন, অন্যান্য দিন মুসল্লির সংখ্যা খুব হয় না।
এই মসজিদে নামাজ পড়েছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি জাকির হোসেন, ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ এবং এপিজে আব্দুল কালাম। প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ হামিদ আনসারিসহ বিভিন্ন সময় মন্ত্রী-এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীরা। এমনকি বিদেশি মুসলিম অতিথিরাও এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন।
বিজেপির টিকিটে বহু হিন্দু সাধুসন্ত সংসদ সদস্য হয়েছেন। তারা গেরুয়া পোশাক পরেই সংসদে যান। কেউ কেউ মন্ত্রী। এবারও জিতেছেন বেশ কয়েকজন গেরুয়াবসনধারী। সেই ভিড়ে ভিন্ন চেহারা, ভিন্ন পোশাকে দেখা যাবে মাঝবয়সি ইমাম নদভিকে।
রামপুরের সুয়ার অঞ্চলের রাজানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, মাওলানা মহিব্বুল্লাহ লখনউর দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় যাওয়ার আগে জেলার জামেউল উলুম ফুরকানিয়া থেকে কোরআনের হাফেজ হন। পরে দিল্লিতে চলে যান, যেখানে তিনি আরবি ভাষায় স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং ২০০৫ সালে পার্লামেন্ট স্ট্রিট মসজিদে ইমামের চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া থেকে ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ইমাম হয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে কীভাবে আসলেন, এমন প্রশ্নে মাওলানা নদভি জানান, সমাজবাদী পার্টির পাঁচবারের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান বারক এই মসজিদে নিয়মিত নামাজে আসতেন। তিনি আমাকে গত জানুয়ারিতে লখনউতে সমাজবাদী পার্টির সদর দফতরে সভাপতি অখিলেশ যাদবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এর কিছু দিন পর সম্বলের সংসদ সদস্য বারক ইন্তেকাল করেন। কিন্তু অখিলেশের সঙ্গে আমার যোগযোগ থাকে। তিনি আমাকে রামপুর থেকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেন। আমিও রাজি হয়ে যাই।
ভবিষ্যত নিয়ে সংসদ সদস্য মাওলানা মহিব্বুল্লাহ বলেন, আগামী পাঁচ বছর সংসদে রামপুরের বেকারত্ব, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলব। তার মতে, ‘আমার ফোকাস থাকবে এই তিনটি বিষয়ে। এ জন্য ইউপির মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হলে, তাও করব।
এখনও কি মসজিদে ইমামতিও চালিয়ে যাবেন? ‘নামাজে খুব কম সময় লাগে। আর সংসদ ভবন এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে আমার বাসভবনের দূরত্ব মাত্র ৫০ গজ। সোমবার সংসদের প্রথম দিন ছিল, আমি নামাজের ইমামতিও করেছি এবং সংসদেও উপস্থিত ছিলাম’ তিনি বলেছিলেন।
সোমবার বিকাল সোয়া পাঁচটায় মাওলানা মহিব্বুল্লাহ আবার সংসদ ভবন থেকে বের হয়ে রাস্তা পার হয়ে আসরের নামাজ পড়তে মসজিদে প্রবেশ করেন। মঙ্গলবার তিনি এমপি হিসেবে শপথ নেন। শপথ নিয়ে ফিরে এসে কথা দিয়েছেন, ‘ইমামের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সংসদ এবং রামপুরের প্রতিও কর্তব্য পালন করবেন।’