রোজাদারের সামনে না খাওয়া
রোজাদারকে আল্লাহতায়ালা অনেক ভালোবাসেন, কত ভালোবাসেন তা একটি বর্ণনা থেকে আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারি। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘... আর রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও প্রিয়।’ -সহিহ বোখারি : ৫৯২৭
এ বর্ণনা থেকেই উপলব্ধি করা যায়, রোজাদারকে আল্লাহতায়ালা কতটা ভালোবাসেন। এর কারণ কী? এর কারণ হলো, রোজা একমাত্র আল্লাহর জন্য রাখা হয়। রোজার মধ্যে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় করার বিষয়টি সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রকাশ পায়। এ জন্যই তো শত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বান্দা এক ঢোক পানিও পান করে না; পানিতে ডুব দিয়েও না, বন্ধ ঘরেও না। এমনকি সে অজু, গোসল ইত্যাদির সময়ও সতর্ক থাকে- ভুলক্রমেও যেন এক ফোঁটা পানি তার গলার ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। এ কারণেই রোজা আল্লাহর এত প্রিয়, রোজাদার আল্লাহর এত প্রিয়পাত্র।
এত কষ্ট করে একমাত্র আল্লাহর ভয়ে রোজা রাখা মানুষটির সামনে যখন কোনো মানুষ খায় তখন ফেরেশতারা রোজাদার ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে থাকে। যতক্ষণ রোজাদারের সামনে খাওয়া হয় ততক্ষণ দোয়া করতে থাকে। রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করে। কারণ, স্বাভাবিকভাবে রোজাদার ব্যক্তির ক্ষুধার কষ্ট থাকে। এ অবস্থায় রোজাদারের সামনে খেলে তার মানসিক কষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। এ জন্যই ফেরেশতারা তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে।
একবার নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত উম্মে উমারা (রা.) বাড়িতে গেলেন। তিনি নবী করিম (সা.)-এর সামনে খাবার পেশ করলেন। নবী করিম (সা.) তাকেও খেতে অনুরোধ করলেন। তিনি বললেন, আমি তো রোজা আছি। এ কথা শুনে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রোজাদারের সামনে খাওয়া হলে খাওয়ার শেষ পর্যন্ত ফেরেশতারা রোজাদারের জন্য (মাগফিরাতের) দোয়া করতে থাকে। -জামে তিরমিজি : ৭৮৫
ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেন, বর্ণিত হাদিস থেকে এ বিষয়টি বোঝা যায়, খুব প্রয়োজন না থাকলে রোজাদারের সামনে খাওয়া উচিত নয়। কারণ, এতে রোজাদারের কষ্ট হয়। ফলে হতে পারে রোজাদারের জন্য ফেরেশতা মাগফিরাতের দোয়া করবে ঠিকই; কিন্তু বদদোয়াও করতে পারে। আর ফেরেশতার দোয়া যেমন কবুলের সম্ভাবনা বেশি তেমনি বদ দোয়াও ...। সুতরাং একান্ত অপারগতা ছাড়া রোজাদারের সামনে না খাওয়া।