আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতার লাভক্ষতি
-
-
|

আরাম-আয়েশ ও সৌখিনতায় ডুবে যাওয়া মুমিনের শান নয়, ছবি : সংগৃহীত
কোনো মুমিন পরকাল সম্পর্কে উদাসীন হতে পারে না এবং আরাম-আয়েশ ও বিলাসে মত্ত হতে পারে না। হজরত মুয়াজ (রা.)-কে গভর্নর মনোনীত করে ইয়ামানে প্রেরণের সময় হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন- ‘খবরদার! বিলাসিতার ধারে-কাছেও যাবে না। আল্লাহর বান্দাগণ কখনো বিলাসী হতে পারে না।’ -মুসনাদে আহমদ : ২২১০৫
অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্যে উল্লসিত হয়ে আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতায় মত্ত হওয়া খুবই মন্দ স্বভাব। কেননা আয়েশ-বিলাস আলসেমির জন্ম দেয়, অহমিকায় লিপ্ত করে, পরকাল থেকে উদাসীন করে এবং পাপাচারের দ্বার উন্মুক্ত করে। এমনকি কখনও কখনও কুফর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তাদের বিত্তবান লোকদেরকে (ঈমান ও আনুগত্যের) হুকুম দেই, কিন্তু তারা তাতে নাফরমানী করে, ফলে তাদের সম্পর্কে (পূর্ব নির্ধারিত) কথা সাব্যস্ত হয়ে যায় এবং আমি তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলি।’ -সুরা বনী ইসরাঈল : ১৬
অর্থাৎ কোনো সম্প্রদায় যখন নিজেদের অযোগ্যতা ও অপকর্মের কারণে ধ্বংসের উপযোগী হয়ে যায় তখন তাদেরকে আরাম-আয়েশের উপকরণ আরও বাড়িয়ে দেই এবং তাদেরকে ঈমান ও আনুগত্যের হুকুম করি। কিন্তু তারা আমার আনুগত্য করে না, আখেরাত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না। বরং এসব নেয়ামত পেয়ে তাদের উল্লাস ও অহমিকা আরও বেড়ে যায় এবং পাপ-পঙ্কিলতার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। তখন তাদের ওপর আমার আজাব নেমে আসে, যা অবাধ্যদের জন্য পূর্ব থেকে নির্ধারিত।
সুরা ওয়াকিয়ায় পরকালে কাফেরদের যে শাস্তি দেওয়া হবে- এর কিছু বিবরণ দিয়ে শাস্তির কারণ হিসাবে তিনটা বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে- আয়েশ-বিলাস, কুফর-শিরক ও পুনরুত্থান অস্বীকার। ইরশাদ হয়েছে, ‘ইতিপূর্বে তারা ছিল আরাম-আয়েশের ভেতর। অতি বড় পাপের (কুফর ও শিরকের) ওপর তারা অনড় থাকত এবং বলত, আমরা যখন মরে যাব এবং মাটি ও অস্থিতে পরিণত হব, তখনও কি আমাদেরকে পুনরায় জীবিত করা হবে? এবং আমাদের বাপ-দাদাদেরকেও, যারা পূর্বে গত হয়ে গেছে?’ -সুরা ওয়াকিয়া : ৪৫-৪৮
এখানে পরকালে কাফের ও মুশরিকদের যে শাস্তি দেওয়া হবে এর কারণ হিসাবে প্রথমে আয়েশ-বিলাসকে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর কুফর-শিরক ও পুনরুত্থান অস্বীকারের বিষয় বিবৃত হয়েছে। অথচ সৌখিনতা ও বিলাসিতা তো জাহান্নামী হওয়ার মূল কারণ নয়। জাহান্নামে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে- কুফর ও শিরক। এরপরও পরকালের আজাবের কারণ হিসেবে সৌখিনতাকে উল্লেখ করা হয়েছে এবং প্রথম কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে। এতে বোঝা যায়, কাফেররা নেয়ামত পেয়ে ভোগ-বিলাস ও সৌখিনতায় মত্ত হয়েছিল। আর এ বিলাসমত্ততা তাদেরকে আরও বেশি কুফর ও শিরকে লিপ্ত করেছিল। তাই প্রকারান্তরে সৌখিনতা ও বিলাসিতা জাহান্নামের শাস্তি ভোগের এক বড় কারণ।
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের ব্যাপারে অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্যের কারণে ফেতনার যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওপরের আলোচনায় তার বাস্তবতা সামনে এসেছে। ধন-ঐশ্বর্য, সুখ-প্রাচুর্য যে মানুষকে আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতায় মত্ত করে পরকাল থেকে উদাসীনতা সৃষ্টি করে এবং ঈমান-আমলে অবক্ষয় নিয়ে আসে তা বোঝার জন্য বনী ইসরাঈলের ঘটনা এবং কোরআন মাজিদের বিবরণ দেখার প্রয়োজন নেই। এমনকি আরববিশ্ব ও অন্যান্য উন্নত মুসলিম বিশ্বের দিকে তাকানোরও দরকার নেই। আপনার আশপাশে নজর বুলালেই দেখতে পাবেন যে, বিত্তবান ও সুখী-সচ্ছল বিলাসীরা কীভাবে দুনিয়ার জীবন ও ভোগ-বিলাসে বিভোর হয়ে আত্মবিস্মৃতির শিকার হচ্ছে, নেয়ামতদাতাকে ভুলে যাচ্ছে! তাদের ঈমান-আমলে কীভাবে পচন ধরছে, আখলাক-চরিত্রে ধ্বস নামছে!
তাদের অবস্থা দেখে মনে হবে, তারা যেন ওই কাফের সম্প্রদায়ের প্রতিচ্ছবি, যাদের আড়ম্বরপূর্ণ বাড়ি-ঘর ও ভোগ-বিলাসের বিবরণ দিয়ে আল্লাহতায়ালা তাদের অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে, ‘যেন তোমরা (পৃথিবীতে) চিরজীবী হয়ে থাকবে।’ -সুরা শুআরা : ১২৯
সুতরাং ভোগ-বিলাস, আরাম-আয়েশ ও সৌখিনতায় ডুবে যাওয়া মুমিনের শান নয়, কাফেরের স্বভাব, পাপাচারের দ্বার এবং জাহান্নামে যাওয়ার কারণ।