বিজ্ঞাপন মূল্য নির্ধারণে কারসাজির অভিযোগে গ্রুপএম, পাবলিসিস, ব্রডকাস্টারস গ্রুপে অভিযান
-
-
|

বিজ্ঞাপন মূল্য নির্ধারণে কারসাজির অভিযোগে গ্রুপএম, পাবলিসিস, ব্রডকাস্টারস গ্রুপে অভিযান
* মুম্বাই, নয়া দিল্লি ও গুরুগ্রামে অভিযান চালানো হয়েছে
* তদন্তকারীরা অভিযানে নথি জব্দের পাশাপাশি সাক্ষ্য নিতে পারেন
* ডিজনি-রিলায়েন্স একীভূতকরণের পর বিজ্ঞাপন বাজারে পরিবর্তনের মধ্যেই এই অভিযান
নয়া দিল্লি, ১৮ মার্চ (রয়টার্স): ভারতের প্রতিযোগিতা কমিশন (সিসিআই) বিজ্ঞাপনের মূল্য নির্ধারণে কারসাজির অভিযোগে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞাপনী সংস্থা গ্রুপএম, পাবলিসিস, ডেন্টসু ও ইন্টারপাবলিক গ্রুপের পাশাপাশি সম্প্রচার শিল্পের একটি গ্রুপের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে। বিষয়টির সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি রয়টার্সকে মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে।
একটি সূত্রের মতে, এই বিজ্ঞাপন সংস্থা ও শীর্ষ সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে বিজ্ঞাপনের মূল্য ও ছাড় নির্ধারণে গোপন সমঝোতার অভিযোগ এনে ভারতের প্রতিযোগিতা কমিশনের কর্মকর্তারা প্রায় ১০টি স্থানে অভিযান চালিয়েছে।
মুম্বাই, নয়া দিল্লি এবং গুরুগ্রামের অফিসগুলোতে এই অভিযানে চালানো হয় বলে প্রথম সূত্র জানিয়েছে। আরও পাঁচটি সূত্র অভিযুক্ত সংস্থাগুলোর নাম নিশ্চিত করেছে।
এই অভিযান এমন এক সময়ে চালানো হয়েছে যখন ভারতের বিজ্ঞাপন খাতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। ভারতের মিডিয়া খাতে ওয়াল্ট ডিজনি ও রিলায়েন্সের ৮.৫ বিলিয়ন ডলারের একীভূতকরণের পর এই খাতের গতিপ্রকৃতি বদলাচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান জেফারিজের বিশ্লেষকদের মতে, এই একীভূত সংস্থা টিভি ও স্ট্রিমিং বিজ্ঞাপন বাজারের প্রায় ৪০% দখলে নেবে।
এছাড়াও উল্লেখ্য যে, গত বছরের ডিসেম্বরে ওমনিকম গ্রুপ ১৩.২৫ বিলিয়ন ডলারের অল-স্টক চুক্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বী ইন্টারপাবলিক গ্রুপকে কিনে নেয়, যার ফলে এটি বিশ্বের বৃহত্তম বিজ্ঞাপন সংস্থা হয়ে ওঠে। রয়টার্স মন্তব্যের জন্য ওমনিকমের সাথে যোগাযোগ করলেও প্রতিষ্ঠানটি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
ব্রিটেনের ডব্লিউপিপির মালিকানাধীন বৃহৎ বিজ্ঞাপনী সংস্থা গ্রুপএম, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারপাবলিকের আইপিজি মিডিয়াব্র্যান্ডস ইউনিট, ফ্রান্সের পাবলিসিস গ্রুপ এবং জাপানের ডেন্টসুর মুখপাত্রদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করেননি।
ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং অ্যান্ড ডিজিটাল ফাউন্ডেশন (আইবিডিএফ) ও ভারতের প্রতিযোগিতা কমিশনও (সিসিআই) কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। সিসিআই সাধারণত এর কার্যক্রম বা মূল্য কারসাজি সংক্রান্ত মামলার বিস্তারিত প্রকাশ করে না।
প্রথম সূত্রটি জানায়, সিসিআই তদন্ত করে দেখেছে কীভাবে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো কিছু নির্দিষ্ট সম্প্রচারকের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে বিজ্ঞাপনের মূল্য নির্ধারণের পাশাপাশি গ্রাহকদের কাছে বিক্রির সময় মূল্য ছাড়ের শর্ত ঠিক করে।
মিডিয়া এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত ও অভিযানের খবর প্রথম প্রকাশ করে রয়টার্স।
ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং অ্যান্ড ডিজিটাল ফাউন্ডেশন (আইবিডিএফ) দেশের শীর্ষস্থানীয় সম্প্রচারকদের প্রতিনিধিত্ব করে, যার মধ্যে রয়েছে বিলিয়নিয়ার মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স-ডিজনির যৌথ উদ্যোগ, সনি ও জি এন্টারটেইনমেন্ট। রয়টার্সের জিজ্ঞাসাবাদে আইবিডিএফ কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
একটি দ্রুত বিকাশমান বাজার
প্রথম সূত্রটি জানায়, ভারতের প্রতিযোগিতা কমিশন (সিসিআই) অভিযোগ করেছে যে, কিছু নির্দিষ্ট সম্প্রচারক একসাথে এমন ব্যবস্থা নিয়েছিল যাতে বিজ্ঞাপনের মূল্যে কোনো ছাড় না দেওয়া হয়।
ভারত বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম বিজ্ঞাপন বাজার, যেখানে বিভিন্ন মিডিয়া এজেন্সি নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। গ্রুপএমের অনুমান অনুযায়ী, গত বছর এই বাজারের আয় ছিল ১৮.৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৫ সালে ৯.৪% বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গ্রুপএম জানিছেয়ে, ভারত দ্রুত বিকাশমান একটি শীর্ষ বাজার হিসেবে উঠে আসছে, যেখানে বিজ্ঞাপনের মোট ব্যয়ের ৬০% ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যয় হচ্ছে। জিওহটস্টার, নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইমের মতো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম এবং ইউটিউবের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোও ভারতে ব্যাপক জনপ্রিয়।
এই ধরনের আকস্মিক অভিযানে ভারতের প্রতিযোগিতা কমিশন (সিসিআই)-এর কর্মকর্তারা সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করেন এবং সংস্থার কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। এরপর তদন্ত প্রক্রিয়া চলতে থাকে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি গোপন রাখা হয়।
সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, মিডিয়া এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত মামলাটি গত বছর ভারতের প্রতিযোগিতা কমিশন (সিসিআই) গোপনে শুরু করেছিল। তবে সূত্রটি সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ প্রকাশ করেনি।
গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতের প্রতিযোগিতা কমিশন (সিসিআই) দক্ষিণ ভারতের একটি রাজ্যে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে মূল্য সংক্রান্ত আঁতাতের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে পারনড রিকার্ড (পিইআরপি.পিএ) এবং আনহেউজার-বুশ ইনবেভ (এবিআই.বিআর)-এর কয়েকটি কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে।
দোষী সাব্যস্ত হলে সংশ্লিষ্ট মিডিয়া এজেন্সিগুলোকে জরিমানার মুখোমুখি হতে হতে পারে। এই জরিমানার পরিমাণ আঁতাত চলাকালীন প্রতি বছরের মোট মুনাফার তিনগুণ বা প্রতিবছরের মোট আয়ের ১০% পর্যন্ত হতে পারে। যেটির পরিমাণ বেশি হবে সেটি জারিমানা হিসেবে প্রযোজ্য হবে।
সংবাদ প্রতিবেদন: আদিত্য কালরা ও মুনসিফ ভেঙ্গাটিল
সম্পাদনা: বার্নাডেট বাউম