জাল-ভেজাল ওষুধে ছেয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গ
-
-
|

জাল-ভেজাল ওষুধে ছেয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র জাল (নকল) ও ভেজাল ওষুধে ছেয়ে গেছে। সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ওষুধের গুণমানের ওপর যে তদন্ত ও সমীক্ষা চালিয়েছিল, তাতেই সামনে এসেছে এই মারাত্মক খবরটি। প্রায় ৩৫০ রকমের জাল ও ভেজাল ওষুধ দিনের পর দিন ব্যবহার করেছেন রাজ্যের কোটি কোটি মানুষ! শুধু পশ্চিম বঙ্গবাসী নয়, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকেও অসংখ্য মানুষ কলকাতায় আসেন চিকিৎসার জন্য। ফলে এই ভেজাল ওষুধের প্রভাব অনেক দূর ছড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো আতঙ্ক ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে এখানকার চিকিৎসক মহল।
হাওড়ার আমতা থেকে সম্প্রতি উদ্ধার করা প্রেসারের ওষুধের রিপোর্ট জমা করেছে ডিরেক্টরেট অব ড্রাগ কন্ট্রোল। এই রিপোর্টটি ঘিরে ইতোমধ্যে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই প্রেসারের ওষুধ সম্পূর্ণ জাল। উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় চিকিৎসকরা যে ওষুধ দিয়ে থাকেন তার অন্যতম হল 'টেলমা এএম ৪০'। এই ওষুধ নিয়েই চলছিল কালোবাজারি। এই ওষুধ সম্পর্কে প্রস্তুতকারী সংস্থাকে চিঠি লিখে জানতে চাওয়া হয়েছিল মূল ওষুধের কোন কোন অংশ নকল করা হয়েছে। ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার তরফ থেকে ডিরেক্টরেট অব ড্রাগ কন্ট্রোলকে সব তথ্যই দেওয়া হয়। জানানো হয় উচ্চ রক্তচাপের যে ওষুধ জাল করা হয়েছে তার ব্যাচ নম্বর ০৫২৪০৩৬৭। এই ব্যাচ নম্বরের সঙ্গে আসল ওষুধের ব্যাচ নম্বরের সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাচ নম্বর জাল করা হয়েছিল।
প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে ওষুধের ওপর ছাড় দিচ্ছেন বহু ব্যবসায়ী। আর সেই সুযোগে দেশ তথা রাজ্যে জাল ওষুধের রমরমা ব্যবসা ক্রমশ বাড়ছে। এদিকে জাল ওষুধ চেনার উপায় ঠিক জানা নেই সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকি ওষুধ ব্যবসায়ীদেরও। এ কথা স্বীকার করেছে 'বেঙ্গল কেমিষ্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশন' (বিসিডিএ)।
গুণগত মানের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করতে ইতোমধ্যে নির্দেশিকা জারি করেছেন পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। বলা হয়েছে, পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ব্যাচের ওষুধের তালিকা ও তথ্য সব সরকারি হাসপাতাল, সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর, পাইকারি বিক্রেতা এবং ডিস্ট্রিবিউটরদের নির্দেশিকা দিয়ে জানাতে হবে। রাজা ড্রাগ কন্ট্রোলকে, যাতে কোথাও ওই সব ওষুধ ব্যবহৃত না হয়।
'সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন' (সিডিএসসিও) সূত্রের খবর, গত তিন মাসে প্রায় ৩০০টি ওষুধ গুণ-মানের পরীক্ষায় ফেল করেছে। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক সংস্থার তৈরি ওষুধও রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরও। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল থেকে শুরু করে দোকানেও প্রকাশ্যে ঝোলাতে হবে অনুত্তীর্ণ সব ওষুধের তালিকা। সেই তথ্য রাখতে হবে স্বাস্থ্য দপ্তরের ওয়েবসাইটেও। এর পরও কোথাও ওই সব ওষুধ কেনাবেচা হচ্ছে কি না, তাতে নজরদারি চালাতে দোকানে আচমকা পরিদর্শন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলকে। গাফিলতি ধরা পড়লে কড়াব্যবস্থা নেওয়ার কথাও নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে।
বিসিডিএ-এর মুখপাত্র শঙ্খ রায়চৌধুরী বলেছেন, 'জাল বা ভুয়া (নকল) ওষুধের সমস্যা গুরুতর, যা দেশের জনগণের স্বাস্থ্য এবং ওষুধ ব্যবসা, দুটিরই ক্ষতি করছে। দ্রুত এর বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।' তাদের অভিযোগ, ৩৫ শতাংশ জাল (নকল) ওষুধ তৈরি হয় এ দেশে।
পশ্চিম বঙ্গে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ যখন নকল ওষুধের সমস্যা মোকাবিলায় অভিযান জোরদার করছে, তখন কলকাতাভিত্তিক ওষুধ ব্যবসায়ী সংগঠন- অল ইন্ডিয়া কেমিস্ট অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটরস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ সরকার অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে আসা বেশির ভাগ নকল ওষুধ উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং ছত্তিশগড় থেকে আসে। পাশাপাশি হরিয়ানা থেকেও প্রচুর নিম্নমানের ওষুধ রাজ্যে আসছে। তিনি অভিযোগ করেন, উত্তর ভারতের এই রাজ্যগুলো নকল ওষুধের কেন্দ্রস্থল। এদের বেশির ভাগই বাদ্দি এবং সোলান শহরের কারখানাগুলোতে তৈরি হয়।