মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপসহ যেসব কারণে পদত্যাগ জামিল আহমেদের
-
-
|

ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ ছাড়ার পর সংস্কৃতি অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাই দ্রুতই পদত্যাগের কারণ জানিয়েছেন নাট্যব্যক্তিত্ব ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এ সময় মঞ্চে থাকা শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন সৈয়দ জামিল আহমেদ।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতার জটিলতা, একাডেমির সচিবকে ‘ফোকাল পারসন’ হিসেবে মনোনীত করে মহাপরিচালকের বিধিসম্মত দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান, বাজেট কর্তন, শিল্পকলার ভেতর থেকে ফাইল গায়েব করে দেওয়া, একাডেমির অভ্যন্তরে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে প্ররোচিত করে কাজের পরিবেশ ব্যাহত করা এবং দুর্নীতিবাজ চক্রের নানাবিধ অপতৎপরতার কারণে আমি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত আমার পদত্যাগপত্র শিল্পকলা একাডেমির সচিবের কাছে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মুনীর চৌধুরী প্রথম জাতীয় নাট্য উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে হস্তান্তর করি। নিচে আমি কারণগুলি আরও বিস্তারিত করে বলছি।’
‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের শিক্ষার্থী-গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে শিক্ষার্থীদের ত্যাগের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে, বহুজনের অনুরোধে আমি বিগত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে সচিব পদমর্যাদায় মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব গ্রহণ করি। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মহাপরিচালক পদে আমাকে দায়িত্ব নেবার জন্য তৎকালীন সংস্কৃতি উপদেষ্টার পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলে, আমি বলেছিলাম, শিল্পকলা একাডেমি আইন অনুযায়ী একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাতে কাজ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ রোধ করতে হবে এবং আমি একাডেমির ভিশন ও মিশন সম্বলিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করি। তৎকালীন উপদেষ্টা ও সচিবালয়ের সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার সকল প্রস্তাব ও কর্মপরিকল্পনায় তখন সম্মত হয়েছিলেন।’
‘তাদের সম্মতি ও প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করতে সম্মত হই। কিন্তু উপদেষ্টা পরিবর্তনের পর থেকে আমার সকল বিধিসম্মত কাজে নীতি-বহির্ভূত পদ্ধতিতে বারংবার হস্তক্ষেপ শুরু হয়। একাডেমির সকল কর্মকাণ্ডকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শ্লথ করে দেবার প্রচেষ্টা চালানো হয়। যেমন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর একাডেমির সভা করার বিধান থাকা সত্বেও পরিষদ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করতে উপদেষ্টা ৫ সপ্তাহ অহেতুক সময় নেন। অথচ একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর সভা করার বিধান রয়েছে।’
ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘তাছাড়া একটি ভিডিও নির্মাণের জন্য আমাকে কোনো লিখিত চিঠিপত্র ব্যতীত উপদেষ্টার পক্ষ থেকে টাকা প্রদানের জন্য চাপ দেওয়া হলে আমি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। যোগদানের সময় আমি যে ভিশন ও মিশন উপস্থাপন করেছিলাম সেই অনুযায়ী, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির তৃণমূল হতে কেন্দ্র পর্যন্ত সংস্কার, সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্রায়নের জন্য বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভায় উত্থাপন করলে তা থেকে ইছহাকৃতভাবে কমিয়ে বরাদ্দ করা হয়। উপরে উল্লেখিত দৃষ্টান্তগুলোতে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যে গণমুখী কাঠামোগত ও অবকাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে বহুত্ববোধক সাংস্কৃতিক চর্চায় নতুন বাংলাদেশ গঠনে কাজ করতে দেশব্যাপী সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উপরন্তু, বর্তমানে একাডেমির অভ্যন্তরে বিভেদ সৃষ্টির হীন প্রচেষ্টা লক্ষ্য করছি। এমতাবস্থায়, চতুর্দিকে ঘিরে থাকা চক্রের সঙ্গে আপস করে আমার পক্ষে যে উদ্দেশ্য নিয়ে দায়িত্ব নিয়েছিলাম সেই লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন সম্ভব নয় বিধায় আমি পদত্যাগ করেছি।’