এভাবে আর কত দিন নাটক করতে পারব জানি না: মোমেনা চৌধুরী
-
-
|

মোমেনা চৌধুরী
৪০ বছর ধরে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত মোমেনা চৌধুরী। থিয়েটার, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র- সমৃদ্ধ হয়েছে তার অভিনয়ে। মঞ্চে উপহার দিয়েছেন ‘লাল জমিন’-এর মতো জনপ্রিয় একক নাটক। এবার এই অভিনেত্রী অভিনয়ের পাশাপাশি আসছেন নাট্যকার পরিচয়ে। তার নিজের দল ‘শূন্যন’-এর নতুন নাটক ‘আত্মজয়’ মঞ্চে আসছে আগামী ২৭ ফেব্রয়ারি। এই নাটক ও সমসাময়িক বিষয়ে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসিদ রণ
নতুন নাটক ‘আত্মজয়’ নিয়ে কিছু বলুন...
আমরা পুরোদমে রিহার্সেল করছি প্রতিদিন। কারণ নাটকটি আর দুদিন পরেই দর্শকের সামনে আসছে। আগামী ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটির প্রদর্শনী হবে। নির্দেশনা দিচ্ছেন শামীম সাগর। ‘আত্মজয়’ আমারই লেখা, পাশাপাশি অভিনয়ও করছি। অভিনয়শিল্পী হিসেবে আরও রয়েছেন তাহমিনা সুলতানা মৌ, রাফিউল রকি, মুনিরা রহমান ও তানভীর সানি। মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন অভিনেতা প্রাণ রায়। শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন নির্মাতা শাহনেওয়াজ কাকলী। কোরিওগ্রাফী করেছেন অভিনেত্রী তাহমিনা সুলতানা মৌ। আলোক পরিকল্পনা করেছেন ঠান্ডু রায়হান আর পোশাক পরিকল্পনা করেছেন সামিউন জাহান দোলা। আমাদের পুরো টিমের নামগুলো এ কারণে উল্লেখ করলাম যাতে সবাই বুঝতে পারেন যারা কাজ করছেন তারা যার যার জায়গায় কতটা দক্ষ। এই প্রমাণিত টিম নিয়ে আমরা আসছি, আশা করছি দর্শক আমাদের নতুন প্রযোজনা পছন্দ করবেন।
শিল্পকলা নিয়ে সম্প্রতি একাধিক অস্থিরতার খবর এসেছে। কতোটা দর্শক সাড়া পাবেন এই মুহূর্তে?
আসলেই শিল্পকলায় আগের মতো সেই গমগমে অবস্থাটা আর নেই। আমরা দু’দিনেও ৫০টির বেশি লিফলেট বিতরন করতে পারিনি। কারণ তেমন কোন লোকই এখন শিল্পকলায় আসছে না। দর্শকখরা প্রচণ্ড, তারমধ্যে মঞ্চ নাটকের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য সরকারি কিংবা কর্পোরেট থেকে কোন সহায়তা আমরা পাই না। এই নাটকটির জন্যও অনেক কোম্পানির কাছে গিয়েছে, সবাই আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। তারপরও আমরা নতুন নাটক আনছি, শুধু প্রাণের তাগিদে। জানি না এভাবে আর কয়দিন আমরা শিল্পমনা মানুষ নাটক করতে পারব। প্রতিবারই নতুন নাটক করার সময় ভাবি, আর করবো না। কিন্তু সেটি মঞ্চে আসার পর দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখে আবারও নতুন স্বপ্ন বুনতে শুরু করি। নতুন গল্প, নতুন চরিত্র, নতুন আইডিয়া মাথায় খেলা করতে থাকে। যতোক্ষণ সেটি বাস্তবায়ন না করতে পারি আরাম পাই না!
এমন পরিস্থিতিতেও ‘আত্মজয়’-এর গল্পটা দর্শকের সামনে কেন আনতে ইচ্ছে করলো?
এটাই তো শিল্পস্বত্তার তাড়না। আমরা চেষ্টা করি আমাদের সৃষ্টিশীলতার মধ্য দিয়ে সমাজকে এমনকিছু বার্তা দিতে যা খুবই প্রয়োজনীয়। যেমন, আত্মজয়-এর গল্প আত্মহত্যাকে ‘না’ বলা নিয়ে। আমরা দেখছি, বর্তমানে আত্মহত্যা প্রবণতা আগের তুলনায় বেড়েছে। ফেসবুক লাইভে এসে অনেকে আত্মহত্যা করছে। এই চর্চা কিংবা মনেবৃত্তি সমাজের জন্য কি পরিমাণ ভয়াভয় সেটা আমরা সবাই বুঝতে পারি। এ থেকে উত্তরণের হয়তো অনেক পথই আছে, কিন্তু আমি যেহেতু শিল্পী তাই আমার বক্তব্য তুলে ধরতে ও সচেতনতা বাড়াতে নাটককেই বেছে নিয়েছি।
দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে অভিনয় করছেন। এ পর্যায়ে এসে নিজেকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
অভিনয়জীবন আমাকে যা দিয়েছে সেটার কোন তুলনা হয় না। আমার কোন আক্ষেপ নেই, কোন ক্ষোভ নেই। আমি পুরস্কারের আশায় কিংবা কোন পদ-পদবীর আশায় তো অভিনয়টা করতে আসিনি। এসেছি আমার শিল্পী মনকে তুষ্ট করতে, আমার সমাজচেতনা দর্শকের মধ্যে পৌঁছে দিতে, তাতে যদি একটি মানুষেরও উপকার হয় সেটিই আমার সার্থকতা। এসবের বাইরে দেশের আনাচে-কানাচে এতো মানুষের ভালোবাসা, সম্মান পেয়েছি যা পুরোটাই বাড়তি প্রাপ্তি বলে মনে করি। তবে সামগ্রিকভাবে সংস্কৃতি অঙ্গন নিয়ে বেশ চিন্তিত। আবার কবে থিয়েটার হল কানায় কানায় দর্শকে ভরে উঠবে, আমরা একটু আর্থিকভাবে নিশ্চিন্ত হয়ে কাজ করতে পারব এই চিন্তা করি। তবে আমি আশাবাদী মানুষ, এই অসময় থাকবে না।
আপনার মেয়ে নভেরা রহমানও অভিনেত্রী। তাকে নিয়ে কিছু বলুন?
প্রথমেই বলতে চাই নভেরার বয়সে আমি ওর মতো এতো জানাশোনা, বোঝা, পরিপক্ক অভিনেত্রী ছিলাম না। আমি যা শিখেছি পুরোটাই কাজ করতে করতে। আর ও তো থিয়েটারের মধ্যেই বড় হয়েছে। এরপর আবার কানাডায় নাটক নিয়েই পড়তে পাঠিয়েছিলাম। সুতরাং এই সাবজেক্টে তার পড়াশুনা আবার চেয়ে অনেক বেশি। সে আমার থেকে অনেক ভালো অভিনেত্রী। তবে সে কতোটা সিরিয়াসলি কাজ করবে তার ওপর নির্ভর করে কতোদূর যাবে। আমি মা হিসেবে সবটুকু সমর্থন দিয়ে চলেছি। যদিও আমরা দুজন ইন্ডিভিজুয়্যাল আর্টিস্ট, ফলে আমরা কি কাজ করবো সে ব্যাপারে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু একটি কাজে ঢোকার পর সেটিকে বেটার করার জন্য একে অপরের পরামর্শ সব সময় নিয়ে থাকি। তবে আমার মধ্যে মা বলে কোন কিছু চাপিয়ে দেবার স্বভাব একেবারেই নেই।