ভয়াবহ সেই ঘটনার বর্ণনা দিলেন গুলিবিদ্ধ অভিনেতা আজাদ

  • বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদ

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদ

ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার জিরাবোতে নিজ বাড়িতে ডাকাতের হামলায় আহত হয়েছেন ছোটপর্দার পরিচিত মুখ আজিজুর রহমান আজাদ। গত রোববার গভীর রাতে বাড়িতে ডাকাতের উপস্থিতি টের পেয়ে এগিয়ে গেলে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর আজাদকে উদ্দেশ্য করে গুলি করে ডাকাতেরা। এ সময় আজাদের শরীরে তিনটি গুলি লাগে। ডাকাতের আক্রমণে আজাদের মা ও স্ত্রীও আহত হয়েছেন।

বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন আজাদ। একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আজাদের স্ত্রী রোকসানা হক। তার কপালে পাঁচটি ও মাথায় দুটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। মায়ের এক্স-রে করা হয়েছে। আজাদের এমআরআই করা হয়েছে, গুলিতে আহত জায়গায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আজাদের স্ত্রী

হাসপাতালে থাকা আজাদ কথা বলেছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জিরাবোতে আমাদের বাড়িটি ট্রিপ্লেক্স। এই বাড়ির তিনতলায় মা ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকি। দোতলায় রান্নাঘর এবং ড্রয়িং-ডাইনিং। বাড়িতে গেলে সাধারণত আমার ঘুমাতে ঘুমাতে তিনটা-চারটা বেজে যায়। সবাই ঘুমালেও আমি বাসায় পায়চারি করি। শনিবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটায়ও আমি ঘুমাইনি। কী অবস্থা বাড়ির আশপাশে, তা দেখি। এসব করতে করতে আমার ক্ষুধা লাগে। এ কারণে দোতলায় আসি। রান্নাঘরের দিকে যেতে শব্দ শুনতে পাই, যেন দরজায় কেউ ঠকঠক করছে। আমাদের রান্নাঘরের দরজা আবার ভেতর দিক থেকে লক করা যায়। রান্নাঘরের সামনে দাঁড়ানোর পর বুঝতে পারি, কেউ ভেতরে আছে। এরপর দরজায় দুটো থাপ্পড় দিই, যাতে ভেতরে কেউ থাকলে যেন পালিয়ে যায়।

অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদ

এরপর ওপরে গিয়ে মা আর ওয়াইফকে ডাকি। বলি যে রান্নাঘরে মনে হয় কেউ আছে। আসো তো, একটু দেখি। শুরুতে ভাবছিলাম, এলাকায় ছ্যাঁচড়া চোর থাকে না, এ রকম কেউ হয়তো। তাই আমার মা আর ওয়াইফকে ডেকে কান পেতে এবার শোনার চেষ্টা করি, তখন কোনো শব্দ পাই না। ভাবলাম, থাকলেও এখন আর কেউ নেই। হয়তো পালিয়ে গেছে। ওইটা চিন্তা করে রান্নাঘরে দরজা খুলতেই দেখি, দুজন পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে! তারপর ভাবলাম, দরজা লাগিয়ে দিই। খেয়াল করলাম, পিস্তল তাক করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গুলি করতে পারে বা কিছু একটা। এটা বুঝতে পেরে, মা আর ওয়াইফ যেহেতু সঙ্গে, এটা সিদ্ধান্ত নিই, যে করে হোক ডাকাতদের থামাতে হবে, যাতে গুলি করতে না পারে। তখনই দৌড় দিয়ে একজনের হাত ধরে ফেলি। আরেকজনকে ধাক্কা দিই। যেন গুলি করতে না পারে। এরপর ধস্তাধস্তি হয়। আমার মা আর স্ত্রী আরেকজনকে ধরে, যাতে আমাকে গুলি করতে না পারে। আমি যাকে ধরেছি, তার এক হাতে পিস্তল, আরেক হাতে স্ক্রুড্রাইভার ছিল। তখন সেই ডাকাত স্ক্রুড্রাইভার দিয়ে আমাকে আঘাত করতে থাকে। এতে আমার হাতে ও মাথায় আঘাত লাগে। ধস্তাধস্তির মধ্যে আমাকে জোরে ধাক্কা দেয়। ওই ধাক্কায় আমি দূরে সরে যাই। এরপর গুলি করে, যা আমার ডান পায়ে লাগে। তখন ভাবতে থাকলাম, আবার তো গুলি করবে। এও ভাবি, আমাকে না হলে গুলি করেছে, কোনোভাবেই যেন আমার মা আর ওয়াইফকে যেন গুলি করতে না পারে। আমি দৌড়ে গিয়ে আবার ওর হাত ধরি। কয়েক মিনিট ধস্তাধস্তি হয়।

বিজ্ঞাপন
অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদ

এদিকে আমার খুব ব্লিডিং হচ্ছিল। ডান পায়ে ভর রাখতে পারছিলাম না। এটা ডাকাতও বুঝতে পেরেছে। এরপর আবার আমাকে ধাক্কা দেয়, পড়ে যাই। ওই সময় আরেকটা গুলি করে, যা আমার বাঁ পায়ে হাঁটুর ওপরে লাগে। তারপরও আবার চেষ্টা করি ধরার। এর মধ্যে আরেকজনকে আমার ওয়াইফ ফ্রাই প্যান দিয়ে মাথায় আঘাত করে। সেই ডাকাত আরেকটা ফ্রাই প্যান দিয়ে আমার স্ত্রীকেও প্রচণ্ড জোরে আঘাত করে। এরপর সে পড়ে যায়। সেই ডাকাতকে ধরতে গেলে তখন আমাকে আরেকটা গুলি করে, হাঁটুর ওপরে।

তিনটা গুলি লাগার পর আমি আর ব্যালান্স রাখতে পারছিলাম না। তারপরও ভর দিয়ে দাঁড়াই। ওই মুহূর্তে ওরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। জানালা কেটে যেদিক দিয়ে আসছিল, সেদিক দিয়ে দৌড়ে পালায়। আমরা চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকি। পাশের বিল্ডিংয়ের মানুষেরাও শব্দ শুনে ছুটে আসে। মাত্রাতিরিক্ত ব্লিডিংয়ের কারণে লুঙ্গি দিয়ে বেঁধে নিই। আমার স্ত্রীরও ব্লিডিং হচ্ছিল।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদ

ডাকাত কীভাবে দোতলায় উঠতে পারে বা এটা ডাকাতি না অন্য কিছু, কোনো সন্দেহ হয় কি না, এমন প্রশ্নে আজাদ বললেন, ‘দোতলায় আমার রান্নাঘর। রান্নাঘরের জানালার সঙ্গে নিচতলার সানসেট আছে। ওই সানসেট দিয়ে ওপরে উঠেছে। সেখানে পরে দেখলাম ইট দিয়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা আছে। আমার বাসায় কেউ যদি আগে থেকে না আসে, সেখানে যে দাঁড়াতে পারবে, এটা কারও জানার কথা না। জানালার গ্রিল কেটে দোতলায় ওঠা যাবে, এটা কোনোভাবেই জানবে না। যারা আসছে, তারা আগে থেকেই বাড়ির আশপাশে এই জায়গায় নিশ্চয় ঘোরাঘুরি করেছে। চেনা কেউ অথবা যারা ডাকাতি করতে আসছিল, তারা কয়েক দিন ধরে ঘুরে দেখেছে। এই বাসায় আমরা খুব একটা থাকি না, এটাও ডাকাতি করতে যারা এসেছে, তারা জানে।’

অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদ

সবশেষে আজাদ বললেন, ‘সবাই জানেও আমাদের বাড়ি একদম খালি। এটা পূর্বপরিকল্পিত এবং অবশ্যই ডাকাতি। পরিচিত কেউ এটার সঙ্গে যুক্ত ছিল অথবা যারা এসেছিল তারা কয়েক দিন ধরে র‌্যাকি করেছে। না হলে এভাবে কেউ ঢোকার কথা না। আমার বাড়ি বাউন্ডারি দেওয়া। এর মধ্যে রান্নাঘরের জানালা কেটে যে ঢোকা যায়, তা কারোরই জানার কথা না। আমার সঙ্গে কারও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নেই, তবে যে গুলি করেছে, সে পেশাদার, এটা আমি বুঝতে পেরেছি। কারণ, আমি নিজেও ক্রাইম ফিকশনে কাজ করেছি। আমি কিছুটা হলেও তো বুঝি। যে গুলি করেছে, তার পিস্তল ধরার ধরন, টার্গেট সবই পেশাদার। সব মিলিয়ে ৫ রাউন্ড গুলি করেছে। রিভলবারের ম্যাগাজিন থেকে ৬ রাউন্ড গুলি পড়ে যায়। ৫ রাউন্ড গুলির মধ্যে তিনটা আমার গায়ে লেগেছে, আরেকজন যে গুলি করেছে, তার গুলি এদিক সেদিক চলে গেছে।’

অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদ

২০১৬ সালে তপু খানের ‘প্রাক্তন’ নাটকের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে পথচলা শুরু আজাদের। এরপর গত ৯ বছরে দুই শতাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। ২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন আজাদ। চরিত্রাভিনেতা হিসেবে বিভিন্ন নাটকে দেখা যায় আজাদকে।