বুধবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির শুনানি
-
-
|

বুধবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির শুনানি
নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি প্রস্তাবের ওপর ২৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার শুনানি গ্রহণ করা হবে। শিল্প কারখানার বয়লার ও শিল্প কারখানার জেনারেটরে (ক্যাপটিভ) সরবরাহ করা গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টায় রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে এই শুনানি গ্রহণ করবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
বিদ্যমান গ্রাহকদের দর অপরিবর্তিত রেখে নতুন শিল্প কারখানার বয়লার ও শিল্প কারখানার জেনারেটরে (ক্যাপটিভ) গড়ে ১৫২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা। প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের (ইতোমধ্যে অনুমোদিত) গ্যাসের বিল অর্ধেক বিল বিদ্যমান দরে, অর্ধেক ৭৫.৭২ টাকা নির্ধারণ চায় পেট্রোবাংলা।
অন্যদিকে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও কর্নফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রস্তাবে মিটার বিহীন আবাসিক গ্রাহকদের বিল বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। সব মিটার বিহীন গ্রাহকের আঙিনায় প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পূর্ব পর্যন্ত গ্যাস বিপণন নিয়মাবলী-২০১৪ অনুযায়ী একক ও দুই চুলার গ্যাস ভোগ নির্ধারণ করা হলে তা প্রকৃত গ্যাস ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
গ্যাস বিপণন নিয়মাবলীতে এক চুলা ৭৩.৪১ ঘনমিটার ও দুই চুলা ৭৭.৪১ ঘনমিটার বিলের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ কোম্পানি দু’টির প্রস্তাব অনুমোদন হলে মিটার বিহীন আবাসিক গ্রাহকদের মাসের বিল প্রায় ৩০০ টাকার মতো বেড়ে যাবে।
মিটার বিহীন আবাসিক গ্রাহকের নির্ধারিত পরিমাণ গ্যাসের বিল আদায় করা হয়। গ্রাহক ব্যবহার করুক, না করুক অথবা বেশি ব্যবহার করলেও নির্ধারিত বিলেই তাকে দিতে হয়। বিইআরসি সর্বশেষ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশ দেয় ২০২২ সালের ৫ জুন। ওই আদেশের পূর্বে গণশুনানি গ্রহণ করে। তখন বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের পরিসংখ্যানে দেখা যায় গড়ে এক চুলা ৪০ এবং দুই চুলা সর্বোচ্চ ৫০ ঘনমিটার ব্যবহার করছে। প্রিপেইড গ্রাহকের ব্যবহারের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এক চুলা ৭৩.৪১ ঘনমিটার ও দুই চুলা ৭৭.৪১ ঘনমিটার থেকে কমিয়ে যথাক্রমে ৫৫ ও ৬০ ঘনমিটার করা হয়।
পেট্রোবাংলার দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলেছে, প্রতি ঘনমিটার এলএনজির বর্তমান আমদানি মূল্য পড়ছে ৬৫.৭০ টাকা। ভ্যাট-ট্যাক্স ও অন্যান্য চার্জ যোগ করলে দাঁড়ায় ৭৫.৭২ টাকা। ফলে এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে গ্যাসের প্রাইস গ্যাপ কমাতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করলে চলতি অর্থবছরে পেট্রোবাংলার ঘাটতি হবে প্রায় ১৬ হাজার ১৬১ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
পেট্রোবাংলা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, দেশীয় গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ায় শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। সরবরাহকৃত গ্যাসের মধ্যে দেশীয় গ্যাসফিল্ডগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৭৫ শতাংশের মতো, অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ এলএনজি আমদানি করে করা হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে এবং এলএনজি আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ২০৩০-৩১ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ দাঁড়াবে ৭৫ শতাংশে।
গ্যাসের এই দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তারা অবিলম্বে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। ওই প্রস্তাব অনুমোদন হলে শিল্পায়ন বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা। অন্যদিকে ভোক্তাদের সংগঠন ক্যাব এই শুনানি বন্ধ করার জন্য লিখিত আবেদন করেছিল। সেই প্রস্তাবে বিইআরসি সাড়া না দেওয়ার প্রতিবাদে ক্যাব আগামীকাল (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিয়াম মিলনায়তনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
ক্যাবের দাবি প্রসঙ্গে বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেছেন, আমাদের কাছে প্রস্তাব এসেছে, আমরা সব পক্ষের কথা শুনতে চাই। সে কারণে শুনানি করা হচ্ছে। সেখানে সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত আসবে।
বিতরণ কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, পেট্রোবাংলা আমাদের কাঁধে বন্দুক রেখে দাম বাড়াতে চাইছে। গণশুনানিতে ভোক্তাদের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের। অথচ আমরা এই দাম বাড়ানোর সঙ্গে মোটেই একমত নই। আমরা যতটুকু জেনেছি মন্ত্রণালয়ের চাওয়ার অনুযায়ী নতুন দর ফর্মুলা প্রস্তুত করা হয়েছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে হয়েছে।