কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির বাইরে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের প্লাটফর্ম হিসেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (কুকসু) গঠনের দাবিতে মানববন্ধন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আব্দুল কাইয়ুম চত্বরে (গোল চত্বর) শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা দাবি জানান, লেজুড়বৃত্তির বাইরে গিয়ে একটি স্বতন্ত্র ছাত্র সংসদ গঠন করা হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা বৃদ্ধি পাবে এবং প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান বলেন, গত ৫ই আগস্টের পর থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর একটাই দাবি- কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (কুকসু) গঠন। এই দাবির প্রেক্ষিতে আমরা সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসন থেকে কোন স্পষ্ট জবাব পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ হবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যেখানে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির পক্ষে আন্দোলন হয়, সেখানে একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদের দমন করতে চায়।
তিনি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ছাত্র সংসদ চালুর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দ্রুত শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা হোক। একই সঙ্গে, আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার দাবিতে এবং বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য।
লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ওসমান গনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্র আন্দোলনের বিশাল ভূমিকা ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি চলছে, তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছে, সংঘাত বাড়াচ্ছে এবং শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে। আমাদের জুলাই আন্দোলনের অন্যতম দাবি ছিল শিক্ষাঙ্গনে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর ছয়-সাত মাস পেরিয়ে গেলেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠনের প্রচেষ্টা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির ভয়াবহতা আমরা কুয়েটের সাম্প্রতিক ঘটনায় দেখেছি, যেখানে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসীরা দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। এটি লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিরই ফল। আমরা এই হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং রাষ্ট্রের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করি। একই সঙ্গে, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত ছাত্র সংসদ গঠনের আহ্বান জানাই।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি কুবিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে শিক্ষার্থীরা।