অথবা কেনইবা লিখলাম এই কবিতা
-
-
|

অলঙ্করণ: কাব্য কারিম
ছবি- সংগৃহীত
মেলায় প্রকাশিত হয়েছে কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক বিনয় দত্ত’-র গল্পগ্রন্থ ‘দাসের বলি তাসের দেশে’। প্রকাশক পাঞ্জেরী। প্রচ্ছদ করেছেন মানব। বইটির মুদ্রিত মূল্য ২০০ টাকা। পাওয়া যাচ্ছে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণের পাঞ্জেরীর প্যাভিলিয়ন ২৯-এ।
বইটিতে ক্ষুরধার অণুগল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো ঠিক গল্প নয়, যাপিত জীবনের প্রতিদিনকার দৃশ্যপট যেন। একেক দৃশ্যপটে একেক ধরনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
গল্পগুলো মূলত জীবন ঘনিষ্ঠ অভিজ্ঞতা, বক্তব্য, সাক্ষাৎকার ও বাস্তব ঘটনার নিরীক্ষে রচনা করা। গল্পগুলোর সময়, কাল, কুশীলব, ঘটনা বেশিরভাগই বাস্তব, কিছুটা কল্পনামিশ্রিত। তবে বুদ্ধিমান পাঠক অনায়াসেই ধরতে পারবেন কতটা কল্পনা আর কতটা বাস্তব।
সত্য ঘটনার মিশেলে এই গল্পগুলো পাঠককে জর্জরিত করবে প্রশ্নবাণে। দাঁড় করাবে ভয়াবহ বাস্তবতার সামনে। এই যন্ত্রণা উপভোগ করতে না চাইলে বইটা এড়িয়ে যাওয়াই মঙ্গল। তবে যারা নতুন স্বাদের গল্প পড়তে চান তাদের সুস্বাগতম ‘দাসের বলি তাসের দেশে’ গল্পগ্রন্থে।
বইটি সম্পর্কে বিনয় দত্ত বলেন, গল্পগুলো বেশ নিরীক্ষাধর্মী। সেটা যেমন নামের ক্ষেত্রে, তেমনি গল্পের বর্ণনায়। প্রতিটি গল্প বিশদ থেকে বিশদতর করা যেত কিন্তু আমি অণুগল্পের শক্তিতে প্রভাবিত হয়ে নিজের অবস্থান শক্ত রেখেছি। পাঠক গল্পগুলো পড়লে নিজেদের অবস্থান যেমন জানবেন, তেমনি বুঝবেন রাষ্ট্রের দায়দায়িত্ব। সর্বোপরি নিরেট গল্প পাঠের আমন্ত্রণ সবাইকে। যা শুধুই গল্প।
‘দাসের বলি তাসের দেশে’ এটি লেখকের অষ্টম বই। ২০১৭ সালে চৈতন্য থেকে গল্পগ্রন্থ ‘চিলতে মেঘ ও কুহুকেকার গল্প’, ২০১৮ সালে পুথিনিলয় থেকে উপন্যাস ‘অমৃতায়ন’, ২০১৯ সালে পুথিনিলয় থেকে সমকালীন কথনমালা ‘এই শহর সুবোধদের’, ২০২০ সালে পুথিনিলয় থেকে সমকালীন কথনমালা ‘আরোপিত এই নগরে’, ২০২২ সালে পুথিনিলয় থেকে সমকালীন কথনমালা ‘অর্বাচীনের আহ্নিক’, ২০২৩ সালে পুথিনিলয় থেকে সমকালীন কথনমালা ‘প্রহসনের এক রাত্তির’ এবং ২০২৪ সালে পুথিনিলয় থেকে সমকালীন কথনমালা ‘ভালো রঙের মানুষ চাই’ প্রকাশিত হয়।
বিনয় দত্ত মুক্তমনা কথাসাহিত্যিক এবং প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিক। জন্ম ২০ ফেব্রুয়ারি, নন্দনকানন, চট্টগ্রাম। বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। বাবা অনিমেষ চন্দ্র দত্ত ও মা মিনু দাশ। ছেলেবেলা থেকেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে তার অবস্থান সদৃঢ়। লেখালেখির শুরু ছেলেবেলাতেই। ২০০৫ সাল থেকে লেখক হিসেবে নিজেকে তৈরি করার লক্ষ্যে সক্রিয় সাহিত্যচর্চা শুরু করেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিয়মিত গবেষণায় যুক্ত আছেন। মুক্তিযুদ্ধ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য ও চলচ্চিত্র বিষয়ে দেশের স্বীকৃত জার্নালে তার একাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষভাবে কাজ করছেন দেশভাগ নিয়ে। তার লেখা গল্পগ্রন্থ: ‘চিলতে মেঘ ও কুহুকেকার গল্প’, [চৈতন্য, ২০১৭], উপন্যাস: ‘অমৃতায়ন’, [পুথিনিলয়, ২০১৮], সমকালীন কথনমালা: ‘এই শহর সুবোধদের’, [পুথিনিলয়, ২০১৯], সমকালীন কথনমালা: ‘আরোপিত এই নগরে’, [পুথিনিলয়, ২০২০], সমকালীন কথনমালা: ‘অর্বাচীনের আহ্নিক’, [পুথিনিলয়, ২০২২], সমকালীন কথনমালা: ‘প্রহসনের এক রাত্তির’, [পুথিনিলয়, ২০২৩], সমকালীন কথনমালা: ‘ভালো রঙের মানুষ চাই’, [পুথিনিলয়, ২০২৩]
-সাহিত্যিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগর
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশে বই পড়া আন্দোলনের পথিকৃৎ আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ তার ‘সংগঠন ও বাঙালি’ বইয়ে বলেছেন , 'আমাদের দেশে সংগঠন করা ঠোঁটের আগায় বিষ নিয়ে প্রতিদিন ঢোক গেলার মত।’
দীর্ঘ উপনিবেশিক শাসন আমাদের মধ্যে দাসত্বের দোষ প্রবলভাবে প্রোথিত করে। স্বাধীন বাংলাদেশী রূপে আমরা ৫৫ বছর অতিক্রম করলেও চারিত্রিকভাবে আমরা এখনো ব্যক্তিস্বার্থে অন্ধ। প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য যে ধরনের সামষ্টিকতা, পরার্থপরতা, ধৈর্য ও স্থর্যের প্রয়োজন হয় আমাদের মধ্যে জাতিগত ভাবে তার অভাব প্রকট । এইসব সীমাবদ্ধতাকে জয় করে আমরা যুদ্ধ করে একটি ভুখন্ড অর্জন করেছিলাম বটে। কিন্তূ সেই পুরোনো রোগ আমাদের দ্রুত ক্ষুদ্র মানুষে পরিণত করে।
আমরা স্বাধীনতা অর্জন করলেও তাকে অর্থবহ করতে পারিনি। গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একবার আমরা গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু করলেও ব্যক্তিমানুষের অপ্রতিষ্ঠানিক সমষ্টি রাজনৈতিক দলগুলোকে দ্রুত পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। রাজনীতিতে পরিবারের আধিপত্যর ভয়ংকর ফলাফল রূপে গণতন্ত্রহীন স্বৈরতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটায় । ব্যক্তির আত্মসর্বস্ব চিন্তা ও কার্যক্রম অচিরেই ক্ষমতার দন্ডমুন্ডের কর্তাকে ফ্যাসিস্টে পরিণত করে ।
নিকট অতীতে বাংলা ভুখন্ডের ইতিহাস উপনিবেশিকতার হলেও দূর অতীতে তার মধ্যে একটি স্বাধীন চরিত্রের সন্ধান মিলে। বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ থেকে শুরু করে বার ভুইয়া হয়ে নবাব সিরাজদৌল্লা পর্যন্ত এমন শাসক কম ছিল না যারা দিল্লির মসনদের পুতুল শাসক না হয়ে স্বাধীন জনগণের স্বাধীন শাসক হতে চেয়েছিলেন।
সামষ্টিক বাঙালির এই চরিত্র বাঙালিকে পাকিস্তানী উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের সাহস জুগিয়েছিল। শেখ হাসিনার মত ফ্যাসিস্ট শাসককে গণআন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে গণভ্যুত্থান সফল করে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা ঐতিহাসিক ঐ চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।
আমাদের সামষ্টিকক চরিত্রে প্রাতিষ্ঠানিকতা এখনো প্রবল নয়। তবে গত ৫৫ বছরে কেউ কেউ আমাদের অপ্রতিষ্ঠানিকতার বিরুদ্ধ স্রোতে একক যোগ্যতায় গুন টেনে গিয়েছেন । ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারিদুর রেজা সাগর তাদের মধ্যে অন্যতম। আজ থেকে ২৫ বছর পূর্বে সাংস্কৃতিকভাবে শংকর একটি দেশে মাত্র ৪০ পেরোনো বয়সে তার কয়েকজন বন্ধুকে সহযোগী করে বাংলা ভাষার প্রথম বেসরকারি ডিজিটাল টেলিভিশন চ্যানেল করার সাহস দেখিয়েছিলেন।
ব্রিটেন আমেরিকা জার্মানির মত উন্নত দেশ গুলোতে ৪ জন মানুষ একত্রিত হলে একটা সংগঠন করে এবং তারা বুঝতে পারে কাকে নেতা বানাতে হবে। পরে তার নেতৃত্বে যে যার কাজ করে সংগঠনকে সফল করে। আমাদের দেশে ৪ জন মানুষ এক জায়গায় হলে একটা সংগঠন করে। দুইদিন পর সেই সংগঠন ভেঙে দুটো সংগ lঠন করে। এমন মানুষের দেশে ৭ জন বন্ধুকে নিয়ে ফরিদুর রেজা সাগর বাংলাভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল উপহার দিলেন। আশ্চর্য জনক হলেও সত্য সাগর এখনো তার সক্ষমতা সাহস উদারতা ও স্বাদেশিকতা দিয়ে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম চ্যানেল আই দিয়ে বাংলাদেশের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি সাংবাদিকতায় অবদান রেখে যাচ্ছেন।
আজ শিশু সাহিত্যিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগরের জন্মদিন। আমরা বাঙালি বাংলাদেশী হিসেবে ফরিদুর রেজা সাগরের প্রতি কৃতজ্ঞ। জন্মদিনে নিরন্তর শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। সুস্থ্য স্বাস্থ্য দীর্ঘজীবী হোন।
লেখক : ‘রবীন্দ্র চিন্তায় গণমাধ্যম’ বইয়ের লেখক এবং সাংবাদিক। শিভনিং ফেলো, ইউকে, ২০১৯ ট্রাষ্টি, রিডিং ক্লাব ট্রাস্ট
ছবি: সংগৃহীত
অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এ প্রকাশ হয়েছে কবি ও গল্পকার অঞ্জন আচার্যের ইতিহাসধর্মী গল্পগ্রন্থ ’সাদা রাত’ [১৯৭২—৭৫ সাল : বাংলাদেশের আবছায়া অধ্যায়]। বইটি প্রকাশ করেছে বিদ্যাপ্রকাশ। এর প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। বইটির মূল্য ২২০ টাকা। বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইমেলার সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণের বিদ্যাপ্রকাশের স্টলে [স্টল নং : ১২৯—১৩২]। খন্দকার মোশতাক, সিরাজ সিকদার, সর্বহারা পার্টি, রক্ষীবাহিনী, চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ, বাকশাল, তাজউদ্দীন আহমদ, খালেদ মোশাররফ, কর্নেল তাহের, জেলহত্যা— বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন বহুল আলোচিত ১০ ব্যক্তি বা ঘটনা অবলম্বনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ১০টি গল্প।
বইটি সম্পর্কে লেখক অঞ্জন আচার্য বলেন, “এই সময়কে ধরে এর আগে কোনো সিরিজ গল্প লেখা হয়েছে বলে জানা নেই। কারো প্রতি পক্ষপাতি হয়ে সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে-মিশিয়ে লেখা নয়, কিংবা সত্যকে আড়াল করে কেবল চাটুকারিতা নয়। অন্যদিকে প্রতিপক্ষের ভূমিকায় নেমে একপেষে নিন্দামন্দ নয়, বরং সত্যকে সৎসাহসের সঙ্গে বলার লক্ষ্যে দেশের ইতিহাস ও সাধারণ মানুষের প্রতি দায় থেকেই এই বই লেখা। এটি নিছক কোনো গল্পের বই নয়। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের এমন এক আবছায়া-অন্ধকারময় সময়ে আলো ফেলা হয়েছে, সেই আলোয় অনেকের চোখেই অনেক কিছু ধরা পড়বে, পড়বেই।”
বইটির ভূমিকায় লেখক ‘আত্মপক্ষ সমর্থনে’ লিখেছেন, “১৯৭২ সাল। সদ্য স্বাধীন দেশ। নবজাতকের গায়ে তখনো লেগে আছে মাতৃগর্ভের রক্ত। এরপরের ইতিহাস কালের গর্ভে প্রায় বিলীন। মুক্তিযুদ্ধের পর লেখা হয় ৭৫-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার ঘটনা। মাঝখানের সাড়ে তিন বছর যেন কোথাও, কখনোই ছিল না। মাঝেমধ্যে ‘রক্ষীবাহিনী’ বা ‘বাকশাল’ শব্দ দুটি উচ্চারিত হতে শোনা গেছে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু কেন, কী উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার হয়েছে, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা মেলেনি কোথাও। ‘চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ’ ছিল দূরে শোনা কোনো গল্প। মা বলতেন, লবণের দাম এত ছিল যে সাদা ভাতে লবণ মেখে খাওয়াই কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। ফেলে দেওয়া ফেন ভিক্ষা চাইতে দূরদূরান্ত থেকে পঙ্গপালের মতো ছুটে আসে একদল কঙ্কালসার মানুষ। ইতিহাস সাক্ষী, ইতিহাসের ভেতরেও চাপা পড়ে থাকে অজানা অনেক ইতিহাস। কী ঘটেছিল সেই সব দিনে? আমার কৌতূহলী মন তার অনুসন্ধান করে নিরন্তর। চলে প্রস্তুতিপর্ব। কিন্তু ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে অধিকাংশই বইয়ে মেলে চাটুকারিতা, নয়তো নিন্দামন্দে ভরা গালগল্প। সেখান থেকে ছেঁকে সত্যটা বের করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। তবে পিছপা হই না। ইতিহাসের দায় থেকে, লেখকের দায় থেকে এই বই লেখার দৃঢ়তা থেকে আমি সরে যাইনি। চূড়ান্ত অর্থে প্রতিটি লেখকেরই সমাজের প্রতি, সর্বোপরি দেশের আপামর মানুষের প্রতি দায় থাকে। সেই দায় শোধবার জন্যই এই বই লেখা। কাউকে নায়ক, মহানায়ক বা ভিলেন হিসেবে দেখানোর কোনো অভিপ্রায়ই আমার নেই। সত্যের নিক্তিতে যার যতটুকু প্রাপ্য, স্বল্প পরিসরে তাকে ততটুকুই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আমি বরাবরই ইতিহাসের নিবিষ্ট পাঠক। নিরবচ্ছিন্ন নয়, বরং বিচ্ছিন্ন কিছু লেখা পড়ার পর একদিন হঠাৎ মাথায় আসে এ গল্পগুচ্ছ লেখার পরিকল্পনা। দীর্ঘদিন ধরে চলে এর প্রস্তুতিপর্ব। এক এক করে সংগ্রহ করি বইপত্র। পাশাপাশি চলে পুরোনো পত্রিকা ঘাঁটা, ইন্টারনেটে খোঁজ। যখন যেখানে যা পাই, টুকে রাখি। চরিত্রগুলো এক এক করে সাজাই। ইতিহাসের একেকটি চরিত্র বা ঘটনাকে অবলম্বন করেই একেকটি গল্প লিখতে শুরু করি। চলমান পাঠক্রমের ভেতর দিয়ে নিজের অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর খুঁজি। যেমন : আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশতাক কেন, কীভাবে ক্ষমতা দখল করলেন? সে সময় চরমপন্থী নেতা সিরাজ সিকদার ও তাঁর দল সর্বহারা পার্টির ভূমিকা কী ছিল? রক্ষীবাহিনী কেন গঠন করা হলো, তাদের নিয়ে কেন এত বিতর্ক? চুয়াত্তর সালে কেন দুর্ভিক্ষ হলো? কেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা ‘বাকশাল’ গঠন করলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান? তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নিবিড় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ফাটল কেন ধরল? কী কারণে তাঁদের দুজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলো, কেন একসময় বাধ্য হয়ে তাজউদ্দীনকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে হলো? জেলখানার মতো নিরাপদ জায়গায় আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে কেন ও কীভাবে হত্যা করা হলো? ৪ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ কীভাবে ক্যু করলেন, এরপর মাত্র তিন দিনের মাথায় ৭ নভেম্বর তাঁর দুই সহযোগী কর্নেল নাজমুল হুদা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল হায়দারকে হত্যার পর পাল্টা ক্যু হলো, সে সময় কর্নেল তাহের ও তাঁর দল জাসদ গণবাহিনীর কী ভূমিকা ছিল? ইতিহাসের এই অধ্যায়কে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করেছি। তবে যেহেতু এটা ফিকশন বই, তাই ঐতিহাসিক চরিত্র ও প্রতিষ্ঠানের নামে কিছুটা পরিবর্তন বা নাম-সংক্ষেপ করেছি। যদিও পড়ামাত্রই পাঠক সেই সব চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করতে পারবেন। বইটিকে বলা যেতে পারে বাস্তব ইতিহাসের বর্ধিতাংশ। আমার কল্পনার ভেতর সেই বধিতাংশ তৈরি হয়েছে। একজন গল্পকার শুধু বাস্তব নিয়ে কাজ করেন না। বাস্তবতার ওপর দাঁড়িয়ে ভিন্ন ভাবনার জগৎ তৈরি করেন। এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।”
ইজাজুল হকের নতুন বই দ্য লাস্ট পোয়েট অব কাশ্মীর, ছবি: সংগৃহীত
ভূস্বর্গ কাশ্মীর নিয়ে কৌতুহল নেই এমন মানুষ খুব কমই আছে পৃথিবীতে। এ উপত্যকার সৌন্দর্য ও স্বাতন্ত্র্য সৌন্দর্যপিয়াসীদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। আর কাশ্মীরের সাহিত্য-সংস্কৃতিই এ অঞ্চলের সৌন্দর্যের সুনিপুণ দর্পণ। বিশেষ করে স্বতন্ত্র জাতিসত্তার অধিকারী কাশ্মীরিদের দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামকে পাঠ করার সেরা মাধ্যম কাশ্মীরের কবিতা। তরুণ লেখক ইজাজুল হকের ‘দ্য লাস্ট পোয়েট অব কাশ্মীর’ সেই ধারায় এক অমূল্য সংযোজন।
৪৭ পূর্ব অখণ্ড কাশ্মীরে জন্ম নেওয়া এবং কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা কবিদের মধ্যে সর্বশেষ শক্তিমান কবি মনে করা হয় সদ্যপ্রয়াত ফারুক নাজকিকে। ফারুক নাজকি একাধারে কবি, লেখক, নাট্যকার ও বিশিষ্ট্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। এ বইয়ে লেখক কবি ফারুক নাজকির কবিতা জীবনের আলোচনার ভেতর দিয়ে প্রায় একশো বছরের কাশ্মীরকে পাঠ করতে চেষ্টা করেছেন।
‘দ্য লাস্ট পোয়েট অব কাশ্মীর’ দুটি অংশ। প্রথম অংশে রয়েছে দীর্ঘ ভূমিকা। এতে ফারুক নাজকির শৈশব-কৈশোর থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত অনেক ঘটনা স্থান পেয়েছে। এর মধ্য দিয়ে গত শতাব্দির কাশ্মীর রাজনৈতিক ইতিহাসও উঠে এসেছে। এ ছাড়া কাশ্মীরি ভাষার সাহিত্য, কাশ্মীরের উর্দু সাহিত্য, আধুনিক উর্দু কবিতা, উর্দু গজল, নাজকির কবিতার ধরণ ও বিষয়বস্তুর বিশদ আলোচনাও রয়েছে। দ্বিতীয় অংশে রয়েছে নাজকির নির্বাচিত উর্দু কবিতা ও গজলের বাংলা তর্জমা।
মূল আরবি ও উর্দু থেকে ইজাজুল হকের অনুবাদ ইতিমধ্যেই বোদ্ধাদের নজর কেড়েছে। তার গদ্য ঝরঝরে ও সাবলিল। ‘দ্য লাস্ট পোয়েট অব কাশ্মীর’-এর সঙ্গেও পাঠকদের দারুণ একটি সময় কাটবে বলে আমরা আশাবাদী।
স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা- ঐতিহ্য যত্নসহকারে বইটি প্রকাশ করেছে। সেলিম হোসেন সাজুর দারুণ প্রচ্ছদ বইটির গুণমান ও সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণ। অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এর ২৮ নম্বর ঐতিহ্যের প্যাভিলিয়নে বইটি বিশেষ ছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে। সারাদেশে নির্বাচিতের আউটলেটেও বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইটি। এ ছাড়া ঐতিহ্যের ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট থেকেও বইটি সংগ্রহ করা যাবে।