বাতাস ঝুরে যায় ছলনা বকুলে
-
-
|

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ
জরি আঁকা মোম
জোনাকির ঘরে আজ
জরি আঁকা মোম ছিল
অলিভের পাতায় কাচ গুঁড়া শিশির,
বাদুড়ের পাখা গুনে গুনে ঝিল পাড়ে
দেখো তুমি ..অনাহুত নিশির;
বেলেহাঁস চরা হ্রদে
শ্যাওলা ভাসা জল ছিল
ফেনার শামুকবাগে
সহসা তুমি সাঁতাররত,
মাকড়শা টাঙায় মিহি মশারি
জুঁই ডানা প্রজাপতি জড়িয়ে জালে
হলো যে ক্ষত বিক্ষত;
তারপর পা রেখে ধূসর রকে
চাঁদের জলছায়ায় ঝুরে
তোমার সোনালি চুল,
জলপাই ঝরা আঁধারে কাঁদে দেখো
বালি দ্বীপের বহেমিয়ান বুলবুল;
তুমি শুনেছো কি
রাতের ঝিঁঝি ভরা তাঁবুতে
মোম আঁকে জোনাকি...
হাজার দুয়ারী
মঙ্গল গ্রহের নিচে নির্মিত আমার হাজার দুয়ারী প্যালেস,
আজ নিশীথে আমি একা—
ঝিনুকের জলজ স্বপ্নের আভরণে গোলাপী আত্মার মতো,
মধ্য এশিয়ার স্বৈরাচারী উলুগ বেগের বিক্রমে করতলে দেখি
পৃথিবীর আকাশ, গ্রহাণুপুঞ্জ, নীহারিকা, ধূমকেতু
স্বেচ্ছাচারের সফেন মেঘনায় ভাসাই ইচ্ছের চন্দ্রকান্তমণি।
প্যালেসের জ্যামিতিক নকশাকাটা ছাদে
কাফ্রি ক্রিতদাসের কাটামুন্ডু বেলওয়ারী ঝাড়ের মতো দুলে,
সুবর্ণ হাম্মামে সন্তরণরত নিশাপুরী দয়িতার নগ্নবুক
থেকে ঝরে পড়ে রক্তমুখী নীলা—
জানি কোনো ডুবুরি কোনো দিন খুঁজে পাবে না
এ প্রবল পাথর;
লোমশ আফগান হাউন্ড প্রভুর মর্জিতে ফেড়ে ফেলে
চিত্রল হরিণের গ্রীবা ও হৃৎপিণ্ড,
শ্বেতমর্মরে স্বপ্নাচ্ছন্ন ছায়া পড়ে
নিশাপুরী রূপসীর বঙ্কিম চাহনি;
লড়াইয়ের ময়দানে খোরাসানী অশ্বের দীর্ঘশ্বাস,
মৃত কামানের শেষ শীৎকার—
মিউজিক হয়ে বাজে হরিৎ চরাচরে.. ..
আমিই সে প্রবল পুরুষ—শব্দের চাবুকে বানাই
বাহরাইন মুক্তার মতো মসৃণ স্তন
স্বেচ্ছাচারের তীব্র আবেগ,
নিশাপুরী দয়িতার সোনালী চাহনীতে
ভরে যায় আমার নীল পেগ।
হারিয়ে মানচিত্র
আরশিতে দেখি আমার অক্ষিগোলকে
জমছে স্ফটিকের বিন্দু—ছড়াচ্ছে রূপালি আভা,
ঝরা পাতার ওপর দিয়ে হাঁটে আবির মাখা সাপ
খোয়াবের মাউন্ট মিরাপিতে উদগীরণ হয় লাভা।
নিদ্রায় শুনি পুলিশের বেফজুল বিভ্রান্ত বাঁশি
তীর্থযাত্রীরা তুষার পাড়ি দিয়ে পৌঁছে হরিদ্বার,
প্রত্যাশার নীলগিরিতে নামে পাথরের ধ্বস
উচ্চাশার থার্মোমিটার ভেঙে পারদ হয় ছারখার।
আমার ভেতরে জমে রাজ্যের বিভ্রান্তি
অবগাহনে আমার অশ্রু ছোঁয় পুকুরের শাপলা,
মাউন্টেন বাইক কর্দমে দাগ কেটে এগোয়
হারিয়ে মানচিত্র সড়কের বাঁকে থামে পথচলা।
রোদের তরুণ সয়লাবে আমার অশ্রু হয় বাষ্প
মেঘের পরমাণুতে মিশে জুড়ায় স্নায়ুর ক্লান্তি,
স্বাতী নক্ষত্র প্রতিফলিত হয় আসমানী তুষারে
সুমাত্রার মন্দিরে সন্ন্যাসীরা জপে শান্তি-রস্তু-শান্তি।
বৃষ্টি হই আমি, ছুঁই আবার পৃথিবীর পাললিক মৃত্তিকা
ঝরাপাতার পুষ্টিতে জমিনে ফুটে অর্কিডের কুসুম,
ফিরে আসি—তসবিরের রেখায় হয় রঙের বিবর্তন
বৃক্ষ বাড়ে—নীড়ের ডিমে বসে মা সারস ছড়ায় উম।
রঙের করতালি
শ্বেতপাথরের মেঘপরশ স্থাপত্যে
আজ ঝেঁপে নামে দোল পূর্ণিমা,
স্থাপিত শুভ্র মূর্তি সবুজ ঘাসে
তাকাতেই খুলে যায়—
অদৃশ্যের সুদৃশ্য সীমা।
আর দেখি মনুমেন্টের শুভ্র ডোম
হরেক রেখায় বিবর্তিত হয়—
অরণ্যের বিভূতিমাখা ছত্রাক,
ভাস্কর্যের শুভ্র মুকুট নিধুয়া পাথারে উড়ে
সংবেদনের সাদা হয় আজ কালো কাক।
সরোবরের পাড়ে বসে বৃদ্ধ দম্পতি
খেলে চীনা পুতুল,
ল্যাম্পপোস্ট বৃক্ষ হয়—বালভে ঝোলে
সিগ্ধ নিষ্প্রদীপ ফুল।
মরমের মেঘমহলে আজ নেমেছে দোল পূর্ণিমা—
এ ভুবনে তুমি নেই..
আছে পূরাকীর্তি, তিমি মাছ
আর অশরীরি উপমা।
এ বাতাবরণ ভরা মায়াচ্ছন্ন ভুলে
মৌণ রাত.. পুষ্পহীনতায় মাকড়শা
বাতাস ঝুরে যায় ছলনা বকুলে।
জলের রুপালিতে বৃক্ষের সবুজ ছায়া
নৃত্যরত নর্দান লাইট... বিভাময় সোনালি,
আজ দোল পূর্ণিমা
বন্ধঘরের অন্ধকারে বাজে রঙের করতালি।
স্মৃতিতটে সূর্যমুখী
মন্দিরের সিঁড়িতে বাতাসা ঘিরে পিঁপড়া—
পাশে একাকী তুমি.. ঘোর নির্জনে বসে থাকো,
ইট ফুঁড়ে বেরিয়েছে অশত্থের নরোম অংকুর
সবুজ পাতায় রোদ আঁকে কলকাপাড় ময়ূর
চাঁদকুড়া মাছের ঘাঁইয়ে ঘোলাজলে কী যে আঁকো?
দেউলের ধ্বসে পাড়া দর দালান—
শ্বেতপাথরের আঙিনায় পাপড়ি ঝরা রজনীগন্ধা,
সন্ধ্যামালতির ঝোপে.. পতঙ্গের ধ্বনিতে
বয়ে যায়—জলের হৃদয় ঝোরায় অলকানন্দা;
অর্ঘ রেখে বেদীতে.. পিছনের কপাট দিয়ে
বেরিয়ে এসেছো তুমি.. খুব নীরবে,
তোমার মনমেঘে বৃষ্টি.. সুরভিত ধূপ
ঘাসফুল ভিজে যায় শিশিরের অনুভবে;
দিবসে গল্পের প্রচ্ছদপট..
অজগরের ত্বকে দিনযাপনের ছাপরেখা,
মসলিনের নেকাব পরে রতি-কর্পূর রাত্রি এসে
চুপিসারে দেয় দেখা;
তুমি হদিস করো রুপালি গন্তব্যের
যে কালোয়াত রাজ্য অস্তিত্বের অতীত,
নিঃশব্দে বেজে ওঠে তোমার চেতনার
সৌরভজল—স্মৃতিতটে সূর্যমুখী সংঙ্গীত।