শরৎচন্দ্র কাশী বেড়াতে গেছেন। মনস্থির করলেন গঙ্গার ওপাড়ে রামনগর ঘুরে আসবেন। সকালবেলো নৌকা ভাড়া করে রামনগর পৌঁছুতেই দেখলেন, নদীর তীরে মরা পড়ে আছে। আরে একটা গাধা চরে বেড়াচ্ছে। শরৎচন্দ্রের সঙ্গীদের দেখিয়ে বললেন, ‘কাশীর মাহাত্বের চেয়ে রামনগরের মাহাত্ব বেশি। এখানে মরলে দেখছি স্য ফল পাওয়া যায়।’
সবাই উৎসুক হয়ে জানতে চাইলেন,‘কীরকম?’
শরৎচন্দ্র বললেন ‘কেন আপনারা জানেন না? কাশীতে মরলে স্বর্গবাস আর ব্যাসকাশীতে (রামনগর) মরলে গাধা হয়। ওই দেখুন না লোকটি মারা যেতে না যেতেই গাধা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে!’ এমন রসিকতায় সবাই হেসে উঠল।
বৈকুন্ঠের উইল, চরিত্রহীন, দেবদাস, গৃহদাহ এর মত সিরিয়াস লেখার লেখকের মুখে এরকম রসিকতা শুনে পাঠকমাত্রই অবাক হবেন। পাঠক তো ধারণা করে আছেন শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় মানেই তো রাসভারী বিষয় আসয়। কিন্তু উপরোল্লিখিত ঘটনা বুঝিয়ে দিল মজা করতেও তিনি কম যান না। শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় এর সাহিত্যখ্যাতি যেমন গগনচুম্বী, রহস্যে ঘেরা ব্যাক্তিজীবন তেমনি অতলস্পর্শী। তাঁকে নিয়ে পাঠকের অপার আগ্রহ। সেই আগ্রহের তৃঞ্ষা অনেকখানি মিটিয়েছেন লেখক তাপস রায়। তাপস রায়ের ‘রসিক শরৎচন্দ্র’ বইটিতে তিনি ব্যাক্তিজীবনের নানা ঘটনা থেকে হাস্যরসাত্বক ঘটনাগুলো ছেঁকে দর্শকদের সামনে মেলে ধরেছেন। ‘রসিক শরৎচন্দ্র’ বইটি ২০২৫ সালে অমর একুশে বইমেলাতে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি. থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এরই মধ্যে পাঠকদের হাতে হাতে এবং মনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে ‘রসিক শরৎচন্দ্র’। বইটি পড়ে পাঠক অবাক বিস্ময়ে আবিষ্কার করবেন রসিক শরৎচন্দ্রকে। শরৎচন্দ্রের চরিত্রের বিভিন্ন অজানা দিক জানা হবে পাঠকের। সবকিছু ছাপিয়ে স্ফটিকস্বচ্ছ মেঘের ভেতর অবাক সূর্যরশ্মির মতো উঁকি েিব লেখকের রসবোধ।
শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় মজলিসি মানুষ ছিলেন। গল্প করার অনন্য সাধারণ ক্ষমতা ছিল তাঁর। সেই গল্পগুলোও একপ্রকার হাস্যপরিহাসেরই নামান্তর। তবে সেই হাস্যপরিহাসে নেই বিন্দুমাত্র স্থুলতা বা ভাঁড়ামির চিহ্ন। বরং সূক্ষ্ম রসবোধ, মার্জিত রুচি তাতে যুক্ত করেছে ভিন্নমাত্রা।
শুধু শরৎসাহিত্যে আগ্রহী পাঠক নন, যে কোনো পাঠক এই বইয়ের রসে সিক্ত হতে হতে খেয়ালি, আত্মভোলা,আত্মপ্রচারবিমুখ, অভিমানী, বন্ধুবৎসল, দেশপ্রেমিক, রাজনীতি সচেতন শরৎচন্দ্রের সঙ্গে পরিচিত হবেন। পাতায় পাতায় পড়বেন তাঁর ব্যক্তিজীবনের সরস গল্প।
চলুন পাঠক তাহলে এই বই থেকেই একটা সরস গল্প আপনাদের জানিয়ে শেষ করি এই লেখার।
শরৎচন্দ্র সেসময় খ্যাতির মধ্যগগনে। এমন সময় আরেক শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যয়ের আবির্ভাব হলো। তিনিও লেখক। ‘শান্তিজল’, ‘চাঁদমুখ নামে উপন্যাস লিখেছেন। ‘গল্পলহরী’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
একদিন শরৎচন্দ্র কোথায় যেন যাচ্ছিলেন,পথে বাল্যবন্ধুর সঙ্গে দেখা। অনেকদিন পর দুজনের দেখা হওয়ায় বাল্যবন্ধুর চোখেমুখে প্রশ্ন দেখে শরৎচন্দ্র বললেন,‘কী হে আমাকে চিনতে পারলে না! আমি শরৎ’।
বন্ধুটি তখন চিনতে পারলেও রসিকতা করে বললেন, ‘আজকাল তো সাহিত্যের বাজারে দুজন শরতের আর্বিভাব ঘটেছে। তুমি কোনজন?’
শরৎচন্দ্র পালটা রসিকতা করে বললেন,‘আমি চরিত্রহীন’।
এমন মজার মজার রসাত্বক আরো ঘটনা পাবেন ‘রসিক শরৎচন্দ্র’ বইটিতে। তো আর দেরি কেন পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি. থেকে প্রকাশিত বইটি সংগ্রহ করে ফেলুন আজই। এর প্রচ্ছদ করেছেন মলয় চন্দন সাহা। বইটির মূল্য ২৫০ টাকা।