মুখ বুজে তোমার সংশয়ে বাস করি
-
-
|

অলঙ্করণ কাব্য কারিম
নিরুদ্দেশ মৃত্যুর মতো সুন্দর
অন্যান্য লাশের পাশে শুয়ে আছি
পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে খুনি
হাতুড়ি-বাটালে খুলি ভাঙছে মাতাল ডোম
নিঃসঙ্গ নিরিবিলি ঘুম।
কারো সঙ্গে দেখা হয় না আর
নিরুদ্দেশ মৃত্যুর মতোই সুন্দর এ ঘটনা
মানুষের বিরুদ্ধে যত অভিশাপ
মানুষ দিয়েছে এতদিন
সব দেখি মেখে আছে গায়ে।
নিশ্চুপ ও মনোযোগ সময় দেয় না মোটেই,
এমন কি জানি না কেমন হয় তোমার সংসার!
তোমার দেখানো ফুল যদিও উপহার ছিল না
আজ তবু চোখে ভাসে
আর, নিঃসঙ্গ লাল ঠোঁট পাখিটির কথা কী বলিব আর
গৃহে ফেরা শত পর্যটকের পদচিহ্ন পাশে ছিল তার;
যাদের সন্তান রাখা ছিল
আরো ভিনদেশি সব শিক্ষিকার কাছে।
মেঘমন্ত্র
আলস্য জাপটে স্বপ্নের মেখলা ছড়ে পড়ে
বাজিকর নারীর কোমরে
অসময়ে বৃষ্টি আসে
জলমেঘ রূপের দিকে চোখ সরে যায়
শ্রাবণের পালিত কন্যা বৃষ্টির উপনাম
নিঃসঙ্গ যজ্ঞসূত্রে ওড়পুষ্প কাঁপে শিহরণে
আদিবাসী গ্রাম, হাঁটা পথের ধারে বিরাণে
রজঃগুণে এই রয়ানি কালে
কাছে ছিল তার গ্রীষ্ম বাতাস
এলোচুল, ধূলিঝড়, দমকা হাওয়ার দল
ব্যাগভর্তি স্কুল বই
লাফিয়ে লাফিয়ে চলা মৃদু খরগোশ
অকৃতদার স্মৃতিরেণু তাকে ছুঁয়ে গায়
গেরস্থ গলায় ঐকাহিক অভিধান।
অভিমান
অভিমান বুঝবে কি নিঃসঙ্গ আকাশ?
তার মুখ চোখে আঁকা, বুকে হা-হুতাশ।
যতদিন পিছে ওড়ে, যাবে যত দিন
অনন্ত দেনার দায়, বিঁধে আছে ঋণ।
ছুটছে ঘড়ির কাঁটা, সন্ধ্যা আসে—
হেমন্ত রাতের চাঁদ তাকে ভালোবাসে।
জল-ঘূর্ণি পানে টানি প্রমত্ত সকাল,
নত চোখে জল নোনা, স্মৃতির চাতাল।
স্বর্গ কি না প্রজাপতি মাছের স্বভাব
ভ্রমরের গুনগুনে ফুলের জবাব;
“জল ভেসে যায় জলের মাদুর, জলে ভেসে যায়
অকুল দোঁহার মিলন রঙের একা ডিঙ্গা না’য়।”
বিশ বাও জল
দিগধাউরি বহুগামী ঢেউ
ভোল পাল্টে বেহুলার সয়ম্বরে
রমণীস্মৃতিহীন ফণা তোলে!
পাশে, নন্দী ভৃঙ্গীর দল গান গায়
নাড়া বেঁধে সহলে সহলে।
আড়ালে স্বর্গ দেখানোর ছলে
নদী খুঁড়ছিল কেউ। তাই ভয়ে
ঘাসফড়িংয়ের লেজে
অক্ষরহীন বাল্যশিক্ষা ফেলে;
দুলিয়ে অকূলের ভেলা
রোদ্দুরে রোদ্দুরে ক্ষয়ে
আমি গোপনে গঙ্গার ধারে
তোমার কাছে পালিয়ে এসেছি।
যে পথে এলে পর আগে সন্ধ্যা হয়
ঝড় হয় জঙ্গলে, গাছ উল্টে যায়
পিছে শনির দৃষ্টি
সন্দেহ, হিংসা, মনকষাকষি
অগস্ত্য যাত্রা, পাঞ্চাল রাজার দেশ।
গোপনে পালিয়ে আমি গঙ্গার ধারে
মুখ বুজে তোমার সংশয়ে বাস করি
আড়ালে
মনসার শাপ-শাপান্ত কলির সন্ধ্যায়
অক্ষরহীন করে বর্ণমালার বই,
লিখে লিখে আকুল দেখে নিতে হয়
বিশ বাও জল, তোমার জঙ্গলে!
সুঘ্রাণ
পিতা তার সূত্র ধরে মাটিতে নামান
হারানো ঘুড়ি। অথবা পুত্রই এসেছে কাছে
বন্ধু যার দিয়েছে সন্ধান, অনির্দিষ্ট দুঃখে।
মুষ্ঠিতে নতুন আঙুল, ভিক্ষার চাল, কোমল রৌদ্র
পায়ে পায়ে ভিড়, স্বপ্ন থেকে দূরে
হারানো স্বপ্ন ঘুরপাক খায়—
না শোনা সংগীতে। বিস্মৃত মানুষের নাম
যেন সুঘ্রাণ, জীবন থেকে সৌভাগ্য উড়ে যায়!
বনস্পতি মন ফিরে ফিরে পায় তামাদি খামার
পুরানা সন্ধ্যায়, ক্ষেত্র দেবীর রূপে।
মিথ্যাবাদী পুরুষের গান
ও খোঁপা, বেগুনী নাকফুল
গেঁয়ো সুর, মেঠোপথ
এই অন্ধকারে
মন খারাপ আলোয়
নিস্তব্ধ মেয়ে
বাড়ি ফিরে যায়
ঘুর্ণায়মান আকাশ তবুও
কোন না কোন ছলে
তাকেই, প্রেমের কথা বলে
ধুলোয় ধুলোয়
অশ্রুফোঁটা চিনে
কেউ একজন পিছু নেয়
বেদনার্ত চখা
সে আজ পথ ভুলে
উদ্ভ্রান্ত হলে হোক
এক রোখা মেয়ে
ভূমিহীন সর্বশান্ত সন্ধ্যায়
ফিরে যেতে যেতে
অশ্বত্থ ঝোপে জমা আঁধারে
সচকিত কি-বা, হরিয়াল ঝাঁকের
পাখার ঝাপটায়, তক্ষুনি
মিথ্যাবাদী পুরুষের গানে
মোহাবিষ্ট তার মন
চাঁদ ফিরে পায়
দেনা মুক্ত হয়
চোখ থেকে মরূদ্যান
খসে পড়ে,
অচেনা মরূদ্যানে।