৫ মামলার আসামি গ্রেফতার; ওসির নির্দেশে মুক্তি

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2025-03-12 17:56:27

রজধানীর মোহাম্মদপুরে জাহাঙ্গীর কবির নানকের অন্যতম সহযোগী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ৫ মামলার আসামিকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (১২ মার্চ) মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকার বি ব্লকের ৭ নম্বর রোডে এ ঘটনা ঘটে।

‎পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া আসামির নাম গোলাম মোস্তফা। তিনি জাহাঙ্গীর কবির নানকের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৫টি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো হলো, মোহাম্মদপুর থানার মামলা নম্বর-৬৯, রামপুরা থানার মামলা নম্বর-১৮, বাড্ডা থানার মামলা নম্বর-১৬, ক্যান্টমেন্ট থানার মামলা নম্বর-১৬ ও চকবাজার থানার মামলা নম্বর-৫৬।

‎পুলিশের একটি সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারীর ১৪ তারিখ ৫ মামলার আসামি ও আওয়ামীলীগের সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানক সহযোগী গোলাম মোস্তফা ও হাফিজুর রহমান লিকুর অন্যতম ক্যাশিয়ার এবং বৈষম্যবিরোধী একাধিক মামলার আসামি আনিসুর রহমান সোহাগ রাত ১০ টায় মোহাম্মদপুর থানায় প্রবেশ করে ওসি'র সাথে মিটিং করে। ওসি'র সাথে সাক্ষাৎ করার পর থেকে তারা মামলার আসামি হয়েও এলাকায় নিয়মীত ঘুরে বেড়ায়। বুধবার এদের একজনকে গ্রেফতার করেও ওসির নির্দেশে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়ে অধস্তন অফিসাররা।

‎সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল ১১ টায় লালমাটিয়া এলাকার বি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ওপর সকাল ১১টায় মোহাম্মদপুর থানার একটি টিম বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ৫ মামলার আসামি গোলাম মোস্তফাকে গ্রেফতার করতে যায়। তাকে গ্রেফতার করে হাতকড়া পরানোর পর আশপাশে থাকা ৮-১০ জন সিকিউরিটি গার্ড ও স্থানীয় কয়েকজন এসে পুলিশের ওপর হামলা করে আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার সময় ধস্তাধস্তিতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়। এছাড়াও, গ্রেফতারের পর আসামি মোহাম্মদপুর থানার ওসিকে ফোন করে। এসময় ওসি আসামিকে ধরতে যাওয়া অফিসারদের ফোন করে আসামিকে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে নির্দেশ দেন। আসামিকে কেন ধরতে গেছে এমন ধমক দিয়ে অফিসারদের তিনি শাসন করেন।

‎প্রতক্ষ্যদর্শী শরীফুল জানান, সকাল ১১টায় বেশ কয়েকজন অফিসারসহ পুলিশের একটি টিম রাস্তা থেকে একজনকে গ্রেফতার করে। এ সময় আশপাশে থাকা ৮-১০ জন সিকিউরিটি গার্ড ও আশপাশে কয়েকজন এসে পুলিশের ওপর আতর্কিত হামলা করে। তাদের ওপর হামলার পরও তারা ওই লোককে হাতকড়া পরায়। তখন পুলিশ দেখলাম ফোনে কার সাথে কথা বলার পর তার হাতকড়া খুলে দিয়েছে। পরে পুলিশের কাছ থেকে জানতে পারলাম, ওই লোকের নামে বৈষম্যবিরোধর একাধিক মামলা আছে। মনে হয়েছে সিকিউরিটি গার্ড ও স্থানীয় কয়েকজন মিলে পুলিশকে মেরে ফেলবে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে তারা।

‎পুলিশের ওপর হামলায় অংশ নেওয়া সিকিউরিটি গার্ড দেলোয়ার জানান, সকাল ১১টার দিকে এভোরেজ স্কুলের মালিক আমাদের স্যার গোলাম মোস্তফা স্কুল থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ীতে ওঠছিল। এ সময় পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে। ওই সময় তার এক হাতে হাতকড়াও লাগায়। সাথে সাথে আমরা যারা ছিলাম সবাই পুলিশকে ঘেরাও করে ধরে তাকে ভিতরে নিয়ে যাই। ওই সময় পুলিশের সাথে আমাদের লোকজনের ধাক্কাধাক্কি হয়। তখন মোবাইলে আমাদের কর্তৃপক্ষ থানার ওসিকে বিষয়টি জানালে পুলিশ তার হাতকড়া খুলে দিয়ে চলে যায়।

এ সময় দেলোয়ারের সাথে যুক্ত হয় আরও দুই সিকিউরিটি গার্ড হাফিজ ও রেজা। তারা জানান, পুলিশের এতো বড় সাহস কোনো কিছু ছাড়া আমাদের সামনে থেকে আমাদের স্যারকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে। গ্রেফতার করতে আসছে দেখে আমরা সবাই পুলিশকে উল্টা আটক করেছি। তাদেরকে ওই সময় ওয়ারেন্ট দেখাতে বলেছি। তারা মোবাইলে কাগজ দেখায়। কোনো কাগজপত্র সাথে নিয়ে আসে নাই।

‎এ ঘটনায় তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা জানান, আজকে সকালে মোহাম্মদপুর থানার একটি টিম বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৫ মামলার আসামিকে গ্রেফতার করতে লালমাটিয়া এলাকায় যায়। আসামি গ্রেফতার করার বিষয়টি আমি অবগত। কিন্তু আসামি গ্রেফতারের সময় ওই আসামির লোকজন মব সৃষ্টি করে আমাদের পুলিশের ওপর হামলা করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ আসামিকে ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়। বিষয়টি আমি আমার উবর্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। আমরা খুব শীঘ্রই আসামির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।

আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান বলেন, আমার কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। যতটুকু জানি পুলিশ আসামি থাকার তথ্য পেয়ে ওই স্থানে গিয়েছিল, কিন্তু তাকে পায়নি। আসামিকে ছেড়ে দেওয়া বা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার বিষয়ে আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি। তদন্ত করে দেখছি বিষয়টা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর