ঝিনাইদহে ৩ হত্যার ঘটনায় মামলা

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঝিনাইদহ | 2025-02-24 14:20:52

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় তিনজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ মামলাটি দায়ের করেন নিহত হানিফের ছোট ভাই হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এবং স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সাজেদুল ইসলাম ইশা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে শৈলকূপা থানার ওসি মাসুম খান জানান, গত শুক্রবার রাতে শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাটে তিনজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার এজহারে কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন নিহত হানেফের ভাই ।

ওসি আরও জানান, ঘটনার পরদিন অর্থাৎ শনিবার বিকেলে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে ৩ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর সন্ধ্যার দিকে মরদেহ তিনটি তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি বলেও জানান তিনি।

ট্রিপল মার্ডারে নিহত তিনজন হলেন- ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের রাহাজ উদ্দিনের ছেলে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি জনযুদ্ধের (লাল পতাকা) সামরিক কমান্ডার হানিফ আলী (৫৬), তার শ্যালক একই উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের উন্মাদ আলীর ছেলে লিটন হোসেন (৩৮) ও কুষ্টিয়া ইবি থানার পিয়ারপুর গ্রামের আরজান হোসেনের ছেলে রাইসুল ইসলাম রাজু (২৮)। নিহতদের মধ্যে হানিফ পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) আঞ্চলিক নেতা এবং একাধিক হত্যা ও ডাকাতি মামলার আসামি ছিলেন। একটি হত্যা মামলায় তিনি ফাঁসির দণ্ড থেকে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা পেয়ে মুক্তি লাভ করেন। পরে তিনি হরিণাকুণ্ডু উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের পদ পান

উল্লেখ্য, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহ। স্বাধীনতার পরবর্তী বিভিন্ন চরমপন্থি সংগঠনের অভয়ারণ্য বলা হয় এ জেলাকে। জেলার দক্ষিণে যশোর, উত্তরে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি, পূর্বে মাগুরা এবং পশ্চিমে চুয়াডাঙ্গা জেলা দিয়ে বেষ্টিত এ জেলা। এক সময়ের সর্বহারা, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, জাসদ গণবাহিনী, লাল পতাকা বাহিনী, এমএলসহ আরও বেশ কয়েকটি চরমপন্থি সংগঠনের ব্যাপক দৌরাত্ম্য চলে নব্বুইয়ের দশকের শেষ দিক পর্যন্ত। ২০০০ সালের পর থেকে তাদের অস্তিত্ব বিভিন্ন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে এদের ব্যাপকতা কমতে থাকে। হঠাৎ গত শুক্রবারের ট্রিপল মার্ডারে এদের অস্তিত্ব নতুন করে জানান দেয়। সেখানে একটি হোয়্যাটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা ঘটনার প্রেক্ষাপট বদলে দেয়।

বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় একটি হুমকিমূলক ক্ষুদে বার্তা । যেখানে লেখা রয়েছে, ‘ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনাবাসীর উদ্দেশে জানানো যাচ্ছে, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি নামধারী কুখ্যাত ডাকাত বাহিনীর শীর্ষ নেতা অসংখ্য খুন, গুম, দখলদারি, ডাকাতি, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হরিণাকুন্ডু নিবাসী হানিফ তার দুই সহযোগীসহ জাসদ গণবাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন। এই অঞ্চলের হানিফের সহযোগীদের শুধরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো, অন্যথায় আপনাদের একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।’ কুষ্টিয়া এলাকার জাসদ গণবাহিনীর নেতা কালু দায় স্বীকার করে।

যে স্থানে হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়, ঝিনাইদহের শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাটে ঘটে এ ঘটনা। এই একই স্থানে গত ২৪ বছর আগে ফাইভ মার্ডার সংগঠিত হয়েছিল। তখনও এই ঘটনার দায় স্বীকার করে জাসদ গণবাহিনী।

নিহত হানিফের ছোট ভাই হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এবং স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সাজেদুল ইসলাম ইশা জানান, আমার আল্লাহ কাছে বিচার দিলাম। তবে, তার ভাইয়ের নিষিদ্ধ সংগঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এখানে দু’টি পয়েন্ট রয়েছে। একটি প্রতিপক্ষরা এ ঘটনা সংগঠিত করেছে। আর অন্যটি, নিজেরাই গ্রুপিং করে সংগঠিত করে অন্যদের দোষ চাপাচ্ছে।

ঝিনাইদহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া জানান, ক্ষুদে বার্তাটির ব্যাপারে ব্যাপকভাবে তদন্ত চলছে। আমাদের সঙ্গে র‍্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। ঘটনাটি সত্যিই কোনো চরমপন্থি সংগঠনের কি না অথবা মামলার ক্লু ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কোনোভাবেই জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি স্পষ্ট জানান।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের শৈলকুপা ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় রামচন্দ্রপুর মাঠ দুর্গম এলাকা হিসেবে পরিচিত। এর আগেও একই স্থানে ২০০৩ সালে চাঞ্চল্যকর ফাইভ মার্ডারের মতো ঘটনা ঘটেছে। তারা হলেন- শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের শহীদ খা, ত্রিবেনী গ্রামের শাহনেওয়াজ, একই গ্রামের ফারুক, নুরু কানা ও কুষ্টিয়ার ভবানীপুর গ্রামের কটাকে গুলি ও গলাকেটে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

এই মামলায় ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর ঝিনাইদহ জেলা জজ আদালতে কুষ্টিয়ার আলী রেজা ওরফে কালু ও জেলার পিয়ারপুর গ্রামের মহসিন আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এই অঞ্চলে এক সময় ‘শ্রেণিশত্রু খতম’ করার নামে চরমপন্থি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি জনযুদ্ধ, লাল পতাকা, জাসদ, এমএল, কমিউনিস্ট পার্টির হক গ্রুপ ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে একে অন্যকে হত্যা করত। ওই হত্যার পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিলেন চরমপন্থিরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর