কাজ নয়তো বেকার ভাতার দাবি জানিয়েছে ঐক্য পার্টি

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2025-02-22 11:58:50

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে খাতভিত্তিক সংস্কার ও দেশকে উন্নত করতে কাজ করছে। দেশকে উন্নত করতে হলে কাজের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশে কাজেরও কোনো অভাব নেই তবে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দেশের কর্মক্ষম সবাইকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কাজ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ঐক্য পার্টি অন্যথায় বেকার ভাতার দাবি করেছে দলটি।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে ‘প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নত দেশে রূপান্তরে সবার মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির অপরিহার্যতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নেতারা এসব কথা বলেন।

এ সময় নেতারা বলেন, দেশের জনসংখ্যার বিশাল একটা অংশ যুবক। চাকরী/কাজ না থাকায় তারা হতাশায় দিনাতিপাত করে নিজেদের সম্ভাবনাকে নষ্ট করছে। এভাবে চলতে থাকলে তারা নানাবিধ অনুৎপাদনশীল কাজে জড়িত হয়ে দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যাবে। দেশের জন্য মারাত্মক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র এগিয়ে আসলে তারা বোঝা তো দূরের কথা উল্টো তারা দেশের সম্পদে পরিণত হবে। আর তাই দেশের কর্মক্ষম সবাইকে কাজ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি।

দলটির পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে সব সেক্টরের সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি প্রবাসীদের দেশে-বিদেশে হয়রানি বন্ধ, বিমানের টিকিটের দাম কমানোসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে।

ঐক্য পার্টির পক্ষ থেকে মতপার্থক্য অক্ষুণ্ন রেখে সর্বজনীন বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী করার লক্ষ্যে ঐক্য পার্টির পক্ষ থেকে যে ১১টি দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে তা হলো-

১) দেশে কৃষি বিপ্লব ঘটাতে প্রকৃতির অবারিত সুযোগ থাকার পরও ধানসহ বিভিন্ন শস্য আমদানি করা লজ্জাজনক। এজন্য ধানসহ বিভিন্ন শস্যের উৎপাদন বাড়াতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। পতিত জমির আবাদ বৃদ্ধি ও বিভিন্ন শস্য উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো গেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করাও সম্ভব। এক্ষেত্রে বিএডিসি'র সঙ্গে শিক্ষকদেরও সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। একইসঙ্গে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে হবে। এতে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবে অন্যদিকে সিন্ডিকেট প্রথা ভেঙে যাবে।

২) প্রবাসীদের বিদেশে বসে ভোট দেয়ার সুযোগ দিতে হবে। তাদের ভিসা ফি ও বিমান ভাড়া কমাতে হবে। একইসঙ্গে প্রবাসীদের সরকারি খরচে প্রশিক্ষিত কর্মী হিসেবে তৈরি করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩) সরকারি দফতরে কাজ করতে গিয়ে সময় অপচয় ও দুর্নীতি বন্ধে সবক্ষেত্রে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করতে হবে। এই সার্ভিস যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কিনা তা কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে।

৪) দেশকে ঋণমুক্ত করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। কারণ ঋণগ্রস্ত জাতি আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে পারে না। ঋণের হাত থেকে বাঁচতে সবখাতে কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সব মন্ত্রণালয়, সংস্থা সরকারি দফতরের তৃণমূল পর্যন্ত প্রতি বছরের কাজের অগ্রগতি ও অবনতির তথ্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫) বেপরোয়া যান চলাচল, হিজরাদের চাঁদাবাজি, শিশু-কিশোরদের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকার হাত থেকে বাঁচাতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের একটি আন্তরিক ঘোষণাই যথেষ্ট। এতে সরকারের বাড়তি কোনো খরচও হবে না।

৬) উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে সব নাগরিকদের রাজনীতি করার সুযোগ দিতে হবে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেমন অক্সিজেন দরকার, তেমনি দেশের স্বার্থে জনগণকে রাজনৈতিক সচেতন হতে হবে।

৭) বাংলাদেশ ঐক্য পার্টিতে দলের শীর্ষ নেতাদের নীতি ও আদর্শে শতভাগ আদর্শায়িত হওয়ার কথা বলা আছে। যা রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। সর্বস্তরে গণতন্ত্র নিশ্চিত করা, সৎ ও যোগ্যদের যোগ্যতার মূল্যায়ন করতে হবে। অহংকারী, পরশ্রীকাতর, নেতৃত্বলোভীদের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে রাখা যাবে না। আর সংস্কারের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্র সংস্কার না হলে শত সংস্কারেও তেমন কোনো কাজ হবে না।

৮) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে হবে। কেউ সাম্প্রদায়িক মন্তব্যও যাতে করতে না পারে সে ব্যাপারে রাষ্ট্রকে কঠোর হতে হবে।

৯) অবারিত সুযোগ থাকার পরও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে মানুষ কাজ পাচ্ছে না। অবারিত সুযোগ কাজে লাগিয়ে কর্মক্ষম নাগরিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে বেকার ভাতা দিতে হবে।

১০) কেউ দাবি করুক বা না করুক, প্রাপ্যতা ও সামর্থ্য বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জনস্বার্থকে এড়িয়ে কম গুরুত্বপূর্ণদের চাপে নতি স্বীকার করা যাবে না।

১১) দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে ন্যাশনাল ইন্টিগ্রিটি কমিশন গঠন করতে হবে।

বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও মুখপাত্র মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরীর সঞ্চালনায় এবং পার্টির চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) আবু ইউসুফ যোবায়ের উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গণফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মো. আকমল হোসেন, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র ঢাকা উত্তরের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রহমান তপন, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা প্রতিভা বাকচী, ইঞ্জিনিয়ার থোয়াই চিং মং শাক, সাবেক সচিব কাশেম মাসুদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুর রহিম, মেজর আবু রাইহান মো. মাহবুবুল ইসলাম প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর