৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হবে আসছে ১৩ মে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে জানা যাবে বিভিন্ন শাখায় নির্বাচিত সিনেমার তালিকা। এসব তথ্য জানিয়েছেন উৎসব পরিচালক থিঁয়োরি ফ্রেমো।
তবে তার আগে জানানো হয়েছে, কে হতে যাচ্ছেন এবারের কান চলচ্চিত্র উৎসবের জুরিবোর্ড প্রধান। তিনি হলেন ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশ। এর মধ্য দিয়ে কানের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার কোনো নারী জুরিপ্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে বার্বি’খ্যাত পরিচালক গ্রেটা গারউইগ প্রথম নারী হিসেবে জুরির সভাপতির আসনে বসেন।
জুলিয়েট বিনোশ ভিনদেশের অভিনেত্রী হলেও তার যোগসূত্র রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে। আর তা হলো- বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার আকরাম খানের সঙ্গে সংলাপহীন নৃত্যনাট্য ‘ইন-আই’তে পারফর্ম করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশ। ২০০৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর লন্ডনের লিটলটন থিয়েটারে এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। এটাই ছিল জনসমক্ষে নৃত্যশিল্পী হিসেবে জুলিয়েট বিনোশের প্রথম পরিবেশনা। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে তাদের এই নৃত্যনাট্য। ২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর প্যারিসের থিয়েটার মারিনিতে ছিল এর শেষ মঞ্চায়ন।
গত বছর সম্মানজনক স্বর্ণপাম পান অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ। তার হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশ। এর এক বছর পরই বিচারক হওয়ার খবর যেন স্বপ্নের মতো এই অভিনেত্রীর কাছে। তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বলেন, ‘জুরি হয়ে অন্য সদস্যদের সঙ্গে এগিয়ে যেতে চাই, ভাগাভাগি করতে চাই জীবনের অভিজ্ঞতা।’ এ সময় তিনি কান উৎসবে প্রথম অংশগ্রহণের স্মৃতি তুলে ধরেন। তার কাছে এভাবে ফেরা যেন অকল্পনীয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ভ্যারাইটিকে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘তখন ১৯৮৫ সাল। সেই সময়ে ক্যারিয়ার নিয়ে একধরনের উদ্দীপনা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ৪০ বছর আগের ঘটনা। সেই প্রথম তরুণ অভিনেত্রী হিসেবে কান উৎসবে পা রাখি। জীবনে কল্পনাও করিনি, ৪০ বছর পর উৎসবের এ সম্মানের জায়গায় বসব।’ এ সময় বিশেষ এ দায়িত্বের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
১৯৮৩ সালে ‘লিবার্টি বেল’ সিনেমা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন বিনোশ। দুই বছর পরই সুযোগ পেয়ে যান প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের। নাম লেখান ‘রঁদেভু’ সিনেমায়। এটি কান উৎসবে স্বর্ণপাম পুরস্কারের জন্য প্রতিযোগিতা করে। সেই সুবাদে উৎসবে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পান বিনোশ। সেই প্রথম কানের লালগালিচায় হাঁটা। পরে আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হয়নি। ৪ দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে তিনি ৭০টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
অস্কারে দুবার মনোনয়ন পান বিনোশ। ‘দ্য ইংলিশ পেশেন্ট’ সিনেমাটি তাকে পার্শ্বচরিত্রে অস্কার পুরস্কার এনে দেয়। এ ছাড়া সিনেমাটির জন্য বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব ও বাফটা থেকে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। সার্টিফায়েড কপি সিনেমার জন্য জিতেছিলেন কান উৎসব থেকে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। একের পর এক তার ক্যারিয়ারে প্রাপ্তির খাতা ভারী হতে থাকে।
সম্প্রতি ইউরোপিয়ান ফিল্ম একাডেমির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি মাইকেল হ্যানাকে, ডেভিড ক্রোনেনবার্গ, আব্বাস কিয়ারোস্তামি, হিরোকাজু কোরে-এডাসহ অনেক বিখ্যাত নির্মাতার সঙ্গে কাজ করেছেন।