টিভিতে আজকের খেলা
-
-
|

টিভিতে দেখুন
টিভিতে দেখুন
মুশফিকুর রহিম
ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিকুর রহিম। শুরুতে ২/৩ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরার কাজ করে আসা মুশফিককে বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে স্কোয়াডে আর দেখা যাবেনা। ২০০৬ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করা মুশফিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন ১৯ বছর পর এসে। নানা উত্থান-পতন পাড়ি দেওয়া মুশফিককে দেখা যাবে না আর টাইগারদের রঙিন জার্সিতে।
মুশফিকের ওয়ানডে ক্যারিয়ারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ব্যাট হাতে সাদামাটা মুশফিক দলের সেরা ব্যাটার হয়ে ওঠেন ২০১২ সাল থেকে। ২০০৬ এর আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছিল মুশফিকের। সে বছর ৫ ওয়ানডেতে ২ ইনিংস ব্যাট করে মুশফিক করেছিলেন মাত্র ২৪ রান।
এরপর ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে খালেদ মাসুদ পাইলটের পরিবর্তে ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে অপরাজিত ৫৬ রানের ইনিংস জাতীয় দলে মুশফিকের জায়গা শক্ত করে। এরপর টানা ৫ বছর ব্যাট হাতে খুব একটা সফল ছিলেন না মুশফিক। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম শতকের দেখা পান ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ।
মুশফিকের ক্যারিয়ারে ইতিবাচক মোড় আসে ২০১২ সাল থেকে। মুশফিকের অধিনায়কত্বে সেবার ভারতকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচে মুশফিক খেলেছিলেন ২৫ বলে ৪৬ রানের ইনিংস। এরপর আর মুশফিককে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দলের ব্যাটিং অর্ডারের মেরুদন্ড ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের হয়ে ৩৭ ওয়ানডে ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ৩৭ ম্যাচে ৩৪.৩৫ গড়ে ১০৬৫ রান করেছেন মুশফিক। টাইগারদের হয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৩৮ ম্যাচ খেলে ৩৪.৮ গড়ে মুশফিক করেছেন ১০৭৯ রান। আর এশিয়া কাপে ২৫ ম্যাচে ৩৬.০৮ গড়ে ৮৩০ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।
ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষ বিবেচনায় মুশফিক সবথেকে বেশি রান করেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ৪৭ ইনিংসে ৩৯.৯১ গড়ে ১৪৩৭ রান করেছেন তিনি। আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৫.৫ গড়ে করেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২০৭ রান।
উইকেটের পিছনে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে ২৯৭ টি ডিসমিসালের রেকর্ড মুশফিকের নামের পাশে। যা ক্রিকেট ইতিহাসে পঞ্চম সর্বোচ্চ। উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব মুশফিকের ব্যাটিং প্রতিভাকে কিছুটা প্রভাবিত করেছে। কারণ উইকেটরক্ষক হিসেবে খেলা ম্যাচগুলোতে মুশফিকের ব্যাটিং গড় যেখানে ৩৫.৭৩,সেখানে যে ম্যাচগুলোতে উইকেটরক্ষক ছিলেন না সে ম্যাচগুলোতে তার ব্যাটিং গড় ৪৯.১৪।
সর্বোপরি বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে ২৭৪ ম্যাচে ২৫৬ ইনিংসে ৩৬.৪২ গড়ে ৭৭৯৫ রান করেছেন মুশফিক। যেখানে তার নামের পাশে আছে ৯ টি শতক ও ৪৯ টি অর্ধশতক। ওয়ানডেতে মুশফিকের সর্বোচ্চ ইনিংস ১৪৪ রানের।
ছবি: সংগৃহীত
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভালো করতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেন দেশের ক্রিকেটে পঞ্চ পান্ডবের একজন মুশফিকুর রহিম। এই ফরম্যাট থেকে অবসরের পর ২২ গজে মুশফিকের সংগ্রাম-সফলতা নিয়ে স্মৃতিচারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন তার সতীর্থরা। এবার মুশফিকের স্ত্রীও তুলে ধরলেন সংগ্রামের গল্প।
ক্রিকেট নিয়ে জীবনসঙ্গী মুশফিকের একাগ্রতা, সংগ্রাম সাফল্য খুব কাছ থেকে দেখেছেন স্ত্রী জান্নাতুল কেফায়েত মন্ডি। তাইতো ওয়ানডে থেকে অবসরের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রিকেটে স্বামীর সংগ্রাম নিয়ে লেখেন তিনি।
ফেসবুকে মুশফিকের স্ত্রী লিখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমরা তোমাকে ওয়ানডে থেকে সাফল্যের সঙ্গে অবসরের জন্য অভিনন্দন জানাই, প্রিয়!! আলহামদুলিল্লাহ, তোমার একটি অসাধারণ ওয়ানডে ক্যারিয়ার ছিল। আমি দেখেছি তুমি নিজে সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে গেছ, ভাঙ্গা পাঁজর নিয়ে খেলেছ এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে একসঙ্গে ২০টি পেইনকিলার খেয়েছিলে!! আমি জানি তুমি কখনো নিজের জন্য খেলোনি বরং দেশপ্রেম থেকে দলের জন্য খেলেছ!’
তিনি আরো লিখেন, ‘আমি খুবই ভাগ্যবান যে আমার পাশে এমন একটি সৎ মানুষ আছে, যে কখনো ওযু ছাড়া তার ব্যাট ও বল স্পর্শ করেনি, আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ। তোমাকে আমাদের পরিবারের একটি পরিবারের সবাই অত্যন্ত পছন্দ করে। আমি আশা করি আমাদের ছেলে শাহরোজ তোমার সমস্ত ভালো গুণগুলো গ্রহণ করবে এবং তোমাকে সারাজীবনের জন্য আদর্শ বানাবে।’
সবশেষ মুশফিককে সান্ত্বনা দিয়ে তিনি লিখেন, ‘আমি জানি এটা কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। ইনশাআল্লাহ, সামনে তোমার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে! আমাদের পরিবার তোমার প্রতি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। আমাদের জন্য তুমি যা করেছে সেটা নিয়ে আমরা খুবই খুশি। পৃথিবীকে নেতিবাচকতা নিয়ে কথা বলতে দিন। শেষে আমি পৃথিবীকে বলতে চাই,দয়া করে এমনভাবে সমালোচনা করবেন না যেন আপনার কথায় কেউ জায়নামাজে কাঁদে। আমরাও মানুষ।’
মুশফিকুর রহিম
ওয়ানডে ক্রিকেটের যাত্রাকে বিদায় বলে দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। গতকাল বুধবার রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে শেয়ার করে ওয়ানডেতে থেকে অবসর নেন দেশের এই তারকা উইকেটকিপার ব্যাটার। তবে এমন সব রেকর্ড গড়ে বিদায় নিয়েছেন মুশফিক যেগুলোতে নেই আর কোনো বাংলাদেশির নাম।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ
২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে লাল-সবুজ জার্সিতে অভিষেক হয় তার। তারপর ১৮ বছর ২০২ দিনের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দেশের হয়ে ২৭৪ টি ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। তাতে টাইগার ব্যাটার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে বিদায় নিয়েছেন তিনি। সেখানে তার পরে আছেন দেশের অলরাউন্ডার তারকা সাকিব আল হাসান। ২০২৩ সালে এই ফরম্যাট থেকে অবসর নেওয়া সাকিব খেলেছেন ২৪৭ ম্যাচ। তিনে থাকা তামিম নেমেছেন ২৪৩ ম্যাচে। তারা দুইজনে অবসর নেওয়ায় দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা ব্যাটার থেকে যাচ্ছেন মুশফিক।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান
এছাড়াও এই ফরম্যাটে টাইগারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন মুশফিক। ডানহাতি এই ব্যাটার ৩৬.৪২ গড় এবং ৭৯.৭০ স্ট্রাইক রেটে ৭৭৯৫ রান সংগ্রহ করেছেন। যেখানে রয়েছে ৯টি সেঞ্চুরি ও ৪৯টি হাফ-সেঞ্চুরি। সেখানে ৮৩৫৭ রান নিয়ে শীর্ষে আছেন তামিম ইকবাল।
দীর্ঘ ক্যারিয়ার
দেশের ওয়ানডে ক্রিকেটে মুশফিকের ১৮ বছর ২২০ দিনের ক্যারিয়ারটি ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ। বাংলাদেশি কোনো ব্যাটার এত দীর্ঘ সময় ধরে ওয়ানডে খেলতে পারেননি। ১৭ বছর ২১৪ দিনের ওয়ানডে ক্যারিয়ার নিয়ে বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে দুইয়ে আছেন মাহমুদউল্লাহ। আর বিশ্বে মুশফিকের আগে মাত্র সাতজন ব্যাটার এ তালিকায় আছেন। সেখানে শীর্ষে থাকা ভারতীয় সাবেক তারকা ব্যাটার শচিন টেন্ডুলকারের আছে ২২ বছর ৯১ দিনের ওয়ানডে ক্যারিয়ার।
সবচেয়ে বেশি ডিসমিসাল
ওয়ানডেতে মুশফিক বিদায় নিয়েছেন নামের পাশে ২৯৭টি ডিসমিসাল নিয়ে। ওয়ানডে ইতিহাসে তার চেয়ে বেশি ডিসমিসাল আছে আর মোটে ৪ জনের। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, কুমার সাঙ্গাকারা, মার্ক বাউচার, মহেন্দ্র সিং ধোনির পরে পঞ্চম নামটা মুশফিকের। ২৪১টি ক্যাচ নেওয়া মুশফিক স্টাম্পিং করেছেন সর্বমোট ৫৬টি।
দ্রুততম সেঞ্চুরি
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ৫৯ বলে সেঞ্চুরি করার কীর্তি শুধু মুশফিকের নামেই। আর কোনো টাইগার ব্যাটার এতদ্রুত সময়ে শতক পূর্ণ করতে পারেন নি। আর ওয়ানডেতে সবমিলিয়ে ৯ টি সেঞ্চুরি নিয়ে সাকিবের সঙ্গে যৌথভাবে দুইয়ে আছেন তিনি। আর শীর্ষে থাকা তামিমের আছে সর্বোচ্চ ১৪টি সেঞ্চুরি।
৯৯ রানে আউট
এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার মুশফিকুর রহিম যিনি ৯৯ রানে আউট হয়েছেন। ২০১৮ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে আবুধাবিতে ৯৯ রান করে আউট হন তিনি। মুশফিক সেই সেঞ্চুরি হাতছাড়া করার কষ্ট তাড়া করে বেড়াত তাকে। তবে সেই ম্যাচ জিতে ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
অনবদ্য ১৪৪
২০১৮ এশিয়া কাপে দুবাইয়ের মাঠে ভাঙা পাঁজর নিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হার না মানা ১৪৪ রানের এক ইনিংস খেলেন তিনি। যে ইনিংস ওয়ানডেতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের বাইরে বাংলাদেশি কোনো ব্যাটারের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান।
ছবি: সংগৃহীত
২০০৬ থেকে ২০২৫, এরই মাঝে পেরিয়ে গেছে প্রায় দুই দশক। দেশের ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ২৭৪ ম্যাচ খেলা খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিম বিদায় বললেন ওয়ানডেকে। লম্বা সময় ধরে লাল সবুজ জার্সিকে আঁকড়ে ধরে থাকা সবার প্রিয় ‘মুশির’ শেষটা অবশ্য মধুর ছিল না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্যাট হাতে সুবিধা করতে না পারার ব্যর্থতা কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে। তবে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনে পারফরম্যান্স কোনো বাধা হতে পারেন নি। সতীর্থদের কাছ থেকে আজ বৃহস্পতিবার মাঠে গার্ড অব অনার পেলেন মুশফিক।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের হয়ে খেলা মুশফিক মাঠে নেমেছেন রূপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে। মাঠে নামার সময় সতীর্থদের কাছ থেকে গার্ড অব অনার পেয়েছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। এসময় দুই সারিতে দাঁড়ান মোহামেডানের হয়ে খেলা সতীর্থ তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদি হাসান মিরাজ। আর মাঝখান দিয়ে মাঠে নামেন মুশফিক।
ওয়ানতে দেশের হয়ে ২৭৪ ম্যাচ খেলার পাশাপাশি ৩৬.৪২ গড়ে তামিম ইকবালের পর সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৭৯৫ রান করেছেন মুশফিক। ৯ সেঞ্চুরি করে আছেন তামিমের পরেই আছেন তিনি। আর ১৪ টি সেঞ্চুরি নিয়ে তামিম আছেন শীর্ষে। এই ফরম্যাটে ৬ বার সিরিজসেরাও হয়েছেন মুশফিক। যা বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ৭ বার সিরিজসেরা হয়ে শীর্ষে আছেন সাকিব।
উইকেটকিপার হিসেবে সিরিজসেরা হওয়ায় পুরো বিশ্বেই সবার শীর্ষে আছেন তিনি মুশফিক। দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কক ও ভারতের মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে যৌথভাবে রেকর্ডটা ভাগ করছেন মুশফিক।