তাইজুলের স্পিন-পেসারদের দাপটে বাংলাদেশের স্বপ্নের জয়
টার্গেট ছিল ২৮৭ রানের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অতোদূর যেতে পারলো না। আটকে গেল ১৮৭ রানে। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতলো ১০১ রানে। সেই সঙ্গে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ড্র করলো ১-১ ব্যবধানে। জ্যামাইকা টেস্টের তৃতীয় ও চতুর্থদিন ঠিক যা করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ তাই করতে সমর্থ হলো। ব্যাটিং- বোলিংয়ে দারুণ পরিকল্পিত ক্রিকেটে খেলে জয় তুলে নিলো। ২০০৯ সালের পর এই প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে কোনো টেস্ট ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ।
জ্যামাইকায় জয়ের মুলত ভিত গড়ে দেন বোলাররা। আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে বললে প্রথম ইনিংসে পেসার নাহিদ রানা সেই শুরুর স্বপ্ন দেখান। ৬১ রানে শিকার করেন তিনি ৫ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আটকে যায় বাংলাদেশের চেয়ে কম রানে, অলআউট ১৪৬ তে। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের সম্মিলিত সংগ্রহটা সেই ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন আরো বড় করে। সাদমান, মেহেদি মিরাজ ও জাকের আলীর ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬৮ রানের পুঁজি পায়। জাকের আলীর ব্যাট হাসে ৯১ রানের দুর্দান্ত হাফসেঞ্চুরিতে। ম্যাচ জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে টার্গেট দাড়ায় ২৮৭ রানের। কিন্তু তারা গড়িয়ে পড়ে থেমে যায় ১৮৭ রানে। এই দফায় বল হাতে ‘খেল’ দেখান অভিজ্ঞ তাইজুল ইসলাম। ১৭ ওভারে ৫ মেডেনসহ ৫০ রানে তার শিকার ৫ উইকেট। ম্যাচের মোক্ষম সময়ে ৫ উইকেট এই শিকারের কৃতিত্বই তাইজুলকে ম্যাচসেরার পুরস্কার এনে দিল।
রান তাড়ায় নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চতুর্থদিন লাঞ্চের আগে ২৩ রানে ১ উইকেট হারায়। দ্বিতীয় সেশন শেষ করে ৪ উইকেটে ১৩৩ রান তুলে। শুরুর এই চার উইকেটের তিনটিই শিকার করেন তাইজুল। দিনের শেষ সেশনে এসে ব্যাট হাতে আত্মসমর্পন করে স্বাগতিকরা। তাইজুলের স্পিন এবং পেসারদের দাপট- এই দুয়ের কোনো জবাব খুঁজে পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। থেমে যায় তাদের ইনিংস ১৮৭ রানে। ১০১ রানের বড় জয়ে বাংলাদেশ সিরিজ সমতা করলো।
কোনো সন্দেহ নেই তিন ম্যাচের ওয়ানডে এবং টি- টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে টেস্ট সিরিজের এই সমতা বাংলাদেশ দলকে দারুণভাবে উজ্জীবিত করবে। ১০১ রানে জয়ী এই ম্যাচে একজন অবশ্য নিজের ব্যক্তিগত স্কোরের দিকে তাকিয়ে হাসতে পারছেন না- মুমিনুল হক। এই টেস্টের উভয় ইনিংসে তিনি শূন্য করেছেন! জোড়া শূন্য। ২০১৯ সালে কলকাতা টেস্টে জোড়া শূন্যের এবার জ্যামাইকায়ও শূন্য হাতে ফিরলেন তাইজুল। টেস্টের ‘শিক্ষিত ব্যাটারের’ সবচেয়ে বেশি ১৮ বার শূন্য রানে আউট হওয়ার বাংলাদেশ রেকর্ডটা এখন তার। এই লিস্টের বিশ্বরেকর্ডেরও খুব কাজে চলে এসেছেন মুমিনুল। ২১ শূন্যের সেই রেকর্ড শ্রীলঙ্কার ব্যাটার মারভান আতাপাত্তুর।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড
বাংলাদেশ ১৬৪/১০। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪৬/১০ (৬৫ ওভারে, ব্রাথওয়েট ৩৯, কার্টি ৪০, নাহিদ রানা ৫/৬১, তাসকিন ২/১৯, হাসান মাহমুদ ১/২০, তাইজুল ১/২৪, মেহেদি ১/১৫)। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ২৬৮ (৫৯.৫ ওভারে, সাদমান ৪৬, শাহাদাত ২৮, মেহেদি ৪২, লিটন ২৫, জাকের ৯১, তাইজুল ১৪, আলঝেরি ৩/৭৭, খেমার রোচ ৩/৩৬)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৮৭/১০ (৫০ ওভারে, কেভেম হজ ৫৫, গ্রিভস ২০, তাইজুল ৫/৫০, হাসান ২/২০)।
ফল: বাংলাদেশ ১০১ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: তাইজুল ইসলাম। সিরিজসেরা: জয়ডেন সিলস।
সিরিজের ফল: ১-১ ড্র।